একজন সঞ্চিতা ও পরকীয়ার জের (পর্ব ২)

ইসাবেল রোজ:

মারুফ একটি গেস্ট হাউজে থাকতে শুরু করে। অপরদিকে সঞ্চিতা ঢাকার অদূরে একা একটি ফ্ল্যাটে থাকে। সঞ্চিতার কিছু জমানো টাকা এবং স্বর্ণালংকার বিক্রি করে একটি বিউটি পার্লার খোলে। মারুফ তাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করে কিছু টাকা ইনভেস্ট করে। বিউটি পার্লারটি ভালই চলতে থাকে। মারুফ সঞ্চিতার সাথে সপ্তাহে একবার দেখা করতে আসে।

যতদিন যায় সুমনা (মারুফের স্ত্রী) কিন্তু সঞ্চিতাকে ভোলে না। সুমনা সঞ্চিতার বিউটি পার্লারের খোঁজ পেয়ে যায়, এমনকি সঞ্চিতা কোথায় থাকে, কখন পার্লারে আসে, সমস্ত কিছু খোঁজ খবর রাখে। সুমনা এলাকার কিছু ছেলেদের দিয়ে পার্লারের কর্মরত মেয়েদের হুমকি দিতে শুরু করে। সঞ্চিতা সম্পর্কে বাজে কথা ছড়াতে থাকে। যাতে সঞ্চিতার বাড়িওয়ালা ওকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেয়।

এসব কিছু সঞ্চিতা মারুফকে জানায়, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। মারুফ ভাইয়ের এক কথা, যেহেতু তার দুটি সন্তান সুমনার সাথে আছে, সে সুমনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে অপারগ।
সঞ্চিতা কঠিন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। শুধু তাই নয় তার মেয়ে পরীকে খুব মিস করে। যদিও পরীর দাদী অত্যন্ত বিচক্ষণ মহিলা। তিনি মাঝে মধ্যেই পরীকে তার মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়।

কিন্তু সঞ্চিতা একা নিরাপত্তাহীনতায় হাঁপিয়ে ওঠে। কেননা যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। সুমনা এমন একটি মেয়ে, সে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। ইতিমধ্যে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে সঞ্চিতার মনে এক রকম আতংকের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। আর সুমনা শুধু হুমকি দিয়েই থেমে থাকেনি। একদিন রাত ১১ টায় তিনটা ছেলেকে সঞ্চিতার ফ্ল্যাটে পাঠায়। সাথে সাথে সঞ্চিতা মারুফ ভাইকে ফোন করে আসতে বলে। মারুফ ভাই অবস্থা বেগতিক দেখে লোকাল পুলিশকে জানায়। পুলিশের আগমনের আগেই ছেলে তিনটা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় সঞ্চিতা খুবই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে।

মারুফ ভাইয়ের অনুরোধে আমি সঞ্চিতার সাথে দেখা করি। ওর সাথে কথা বলে আমি বুঝতে পারি তার প্রপার ট্রিটমেন্ট হওয়া দরকার। তা না হলে সুইসাইড টেন্ডেন্সি আবার গ্রো করবে।

যেহেতু সঞ্চিতা বাবা মা, আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধব থেকে ছিটকে এক কোণায় পড়ে আছে, তার ভেতর একাকিত্বের যন্ত্রণা প্রবল হয়ে পড়ে! এমন অবস্থায় সঞ্চিতা একা থাকতে অস্বীকার করে। সে মারুফের সাথে থাকতে চায়। মারুফ যেহেতু লিগ্যালি ম্যারিড বাট সেপারেটেড ছিলেন, তার পক্ষে ডিভোর্স না দিয়ে সঞ্চিতার সাথে থাকা সম্ভব ছিল না।
অন্যদিকে সঞ্চিতার ডিভোর্স তখনই হয়ে যায় যখন মারুফের সাথে ওর গোপন সম্পর্কের কথা ওর হাজবেন্ড সুমনার মাধ্যমে জানতে পারে।

এখন মারুফ কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়। না পারে সুমনাকে আইনত ছাড়তে, না পারে সঞ্চিতাকে আপন করে নিতে। মারুফ ভাই সঞ্চিতাকে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেয়। যেখানে সিকিউরিটি গার্ড ও সিসি ক্যামেরার ব্যবস্হা থাকে। যা এক রকম মানসিক নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়। এই নতুন ফ্ল্যাটে উঠে সঞ্চিতা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে।

সঞ্চিতা চায় মারুফ ভাইকে বিয়ে করে মারুফের মা এর কাছে গিয়ে থাকতে। সঞ্চিতাকে আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি, পরিস্থিতির কারণে মারুফ ওর দায়িত্ব নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে তাকে বিয়ে করাটা হবে “ভুল কারণে বিয়ে”। তাদের মধ্যে যেহেতু প্রথম থেকেই বিয়ের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না, সেহেতু তাকে বিয়ে করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

সঞ্চিতা আমাকে উত্তর দেয়,
“তুমি দেশে থাকো না. তুমি দেশের পরিস্থিতি জানো না, মারুফকে বিয়ে না করলে আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না। আমি সংসার করতে চাই, সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই আমি খারাপ মেয়ে নই, আমি সংসারি মেয়ে” এই ছিল তার বক্তব্য।

আমি যতই তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে উপদেশ দেই, সে ততোই মারুফের মায়ের কাছে গিয়ে থাকার জন্য পাগল হয়ে যায়। মারুফের মা বয়স্ক মহিলা। মারুফ ভাবে, এই বয়সে মা যদি কিছুটা সেবা পায়, তাহলে ক্ষতি কী? যেমন ভাবা তেমন কাজ। মারুফ বিয়ে করতে রাজী হয়ে যায়। সুমনাকে আইনত তালাক পত্র পাঠিয়ে দেয়।

সুমনা তালাক পত্র পেয়ে মারুফের সাথে একটি চুক্তি করে। মারুফের বাড়ি, গাড়ি এবং সবচেয়ে প্রফিটেবল ব্যবসার শেয়ার তাকে দিয়ে দিতে হয়। সাথে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা মাসিক খরচ দিতে রাজী থাকে। সুমনা স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে তার লাইফস্টাইল এক চুল পরিমাণও নিচে নামতে দেয়নি। সে ঠিকই তার মতো করে আরও ফ্রি হয়ে হাই সোসাইটি মেইন্টেইন করে চলতে থাকে।

চলবে …..

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.