হলিউডের সেই প্রভাবশালী ‘ধর্ষক’ এখন বিচারের মুখোমুখি

লিপি আহমেদ:

পৃথিবীর বিখ্যাত যত ফিল্ম উৎসবে তিনি যেতেন, হাঁটতেন লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে। এবার আর সেই সুযোগ হলো না। হলিউড মোগল মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক হার্ভি ওয়াইনস্টিনকে এবার পিছন থেকে হাতকড়া বাঁধা অবস্থায় আদালতে হাজির হতে হলো।

২৫ মে ফিল্ম জগতের এই প্রতাপশালীকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পুলিশ গ্রেফতার করলো। ২০১৭ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া #MeToo আন্দোলনের সাথে যুক্ত হওয়া সাহসী নারীদের সাহসী স্বীকারোক্তির কারণে এই গ্রেফতার হবার ঘটনা। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পরই আবার তিনি জামিন পেয়েছেন।

ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মামলায় অভিযুক্ত মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের কছে ঐসব ঘটনা ছিল মামুলী ব্যাপার। গত সাত মাসে প্রায় ৮০ জন নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এর মধ্যে হলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী ও মডেল যেমন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, গিনেথ প্যালট্রো, অ্যাশলে জুড, কারা ডালাভিনেন, কেট বেকিনসেল, লি সিডু, সালমা হায়েক, জেনিফার লরেন্স, হেদার গ্রাহামসহ আরো অনেককে বিভিন্ন সময় অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন হার্ভি।

নিপীড়িতদের মধ্যে হার্ভির নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ান অন্যতম। তিনি হার্ভির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তাঁর এবং অন্য তিনজন নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে হার্ভিকে গতকাল গ্রেপ্তার করে ম্যানহাটন পুলিশ।
হার্ভিকে গ্রেপ্তারের পর রোজ ম্যাকগোয়ান টুইটারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লেখেন, ‘আমরা তোমাকে ধরে ফেলেছি হার্ভি।’ এই অভিনেত্রী আরও বলেন, এটি তাঁর জন্য একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। হার্ভির গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা ইচ্ছে তা-ই করে গেছেন, তাঁদের মুখে চড় মারার মতো ঘটনা এটি। আর তা সূচনামাত্র। আমি আশা করি, এটি শেষ পর্যন্ত চললে আমরা জয়ী হবো।’

যেখানে বিশ্বের সর্বত্র #MeToo এর মাধ্যমে মেয়েরা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রকাশ করছে, আর অন্যরাও তাতে উদবুদ্ধ হয়ে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাগুলো প্রকাশ করে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে ফারিয়া শাহারিনের মতো মেয়েরা যখন সাহসী হয়ে উঠতে চাইছেন, তখন তার বক্তব্যের যাচাই না করেই তাকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবং সেটি করছে তারাই, যারা নিজেরা একই উপায়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেছেন, কিন্তু সেগুলোকে তারা নির্যাতন হিসেবে মেনে নিতে নারাজ।

গাজী রাকায়াতের মতো একজন নামি ব্যক্তি বা আরো যারা এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের তাদের যোগ্যতার বদলে অভিনয়ে সুযোগ করে দিয়ে তাদের নোংরা কাজে সঙ্গ দিতে বাধ্য করে, তাদের আমরা বার বার সুযোগ করে দেই তাদের নষ্টামী চালিয়ে যাওয়ার জন্যে।

আজ ফারিয়া যে সাহস দেখিয়েছিলো, ইন্ডাস্ট্রির অন্য মেয়েরা যদি আজ একবার সাহস করে তার সাথে এক হয়ে তাদের মুখ খুলে এগিয়ে যেত, আজকের পৃথিবীতে তারা বাংলাদেশকে সাহসী নারীর দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে পারতো। ওরাই পারতো এইসব নোংরা মানুষ নামের বাজে মানুষগুলোকে থামিয়ে দিতে। কিন্তু হায় আমরা এগুনোর বদলে শুধু পিছিয়ে যাচ্ছি আর নারীরা আমাদের দেশে শুধুই ভোগের পণ্য হয়ে থাকছে!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.