উইমেন চ্যাপ্টার:
কোনো সংগঠনের ব্যানারে নয়, স্বপ্রণোদিত কিছু মানুষের সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ধর্ষণবিরোধী মানববন্ধন বা ‘এন্টি রেইপ মার্চ’ নামের কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে শনিবার এই কর্মসূচি পালিত হয় রাজধানীর ফার্মগেটে। এর আগে রাজধানীর ধানমন্ডি, শ্যামলী, শেখেরটেক, শঙ্কর, উত্তরা, মিরপুরসহ বেশকিছু এলাকায় এই প্রতিবাদ মানববন্ধন করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সুপরিচিত মানুষগুলোই আবারও শামিল হয়েছে ধর্ষণের মতোন সামাজিক ও রাজনৈতিক এক ব্যাধি উৎপাটনে।
নারী-শিশু ধর্ষণসহ যৌন ও শারীরিক নিপীড়ন ও নির্যাতনের মতো চরম অবমাননাকর এই পরিস্থিতি নিরসনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার আফসানা কিশোয়ার মূলত এই প্রতিবাদটি শুরু করেন। তিনি একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে একাই ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন উত্তরার রাজলক্ষ্মী শপিং সেন্টারের সামনের ওভারব্রিজে। প্রতিবাদটি তখন সবার দৃষ্টি কাড়ে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজটি বেশ গুরুত্বের সাথেই প্রকাশ হয়। এই ঘটনায় বন্ধু, সহকর্মিসহ অনেকেই এগিয়ে আসেন তার এই কর্মসূচিতে। পরবর্তিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
এরপর থেকে নিয়মিতভাবেই প্রতি শুক্র অথবা শনিবার পালিত এই কর্মসূচির প্রতিটিতেই যুক্ত হচ্ছেন নারীর প্রতি সহিংসতা রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ী মানুষেরা।
আয়োজকরা তাদের ইভেন্ট আয়োজনে জানিয়েছেন, তারা নারী-শিশুদের ধর্ষণসহ যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদ জানাতে কয়েকমাস ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে দাঁড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, নারীর প্রতি সহিংস আচরণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে, এখনই সর্বস্তর থেকে প্রতিবাদ না জানালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ‘ধর্ষণের জন্য ধর্ষক দায়ী, পোশাক নয়’, ‘ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না’, ‘৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ কেন?’ ‘ধর্ষণ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হোন’সহ নানা আহ্বানসম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
অন্যতম আয়োজক শামীম আরা নীপা একটি অনলাইন পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এই আয়োজনের সঙ্গে আছি যেন সবাই নিজ দায়িত্বে এগিয়ে আসে। যে যার জায়গা থেকে যৌন নিপীড়নের বিপক্ষে যেন দাঁড়ায়। আমরা দাঁড়িয়েছি, দাঁড়াতেই থাকবো। আমাদের দেখাদেখি আরও মানুষ রাস্তায় নামবেন, আন্দোলন গড়ে তুলবেন এই প্রত্যাশা। আমরা চাই প্রতিটি সচেতন মানুষ ধর্ষণ ও সহিসংতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসবেন’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফামিদুল হক গিয়েছিলেন মেয়েকে নিয়ে প্রতিবাদ মানববন্ধনে। মেয়ে নিজ হাতে পোস্টার লিখে মানববন্ধনে অংশ নেয়। ফাহমিদুল হক তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন,
‘যৌন নিপীড়ন কোথায় না হয় — গৃহে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনে, নির্জন স্থানে। ধর্ষণের শিকার কে না হয় – তরুণী, শিশু, বয়েসী নারী, স্লিভলেস নারী, বোরকা-হিজাব পরিহিত নারী। ধর্ষক কে না হয় – আপনার আমার ভাই, বন্ধু, মামা-চাচা কিংবা অপরিচিত যেকোনো পুরুষ।’ তিনি পরবর্তি কর্মসূচিগুলোতে সবাইকে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানান।
ফার্মগেটের মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন লাকি আক্তার, জাকিয়া শিশির, কৌশিক আহমেদসহ অনেকেই।