উইমেন চ্যাপ্টার: জনৈক (?) বড় ভাই ত্বকীর দিকে ইঙ্গিত করে তাকে মারধর এবং হত্যার নির্দেশ দেন লিটনকে। ৫-৭ জন যুবকের সঙ্গে লিটনও তখন ত্বকীকে মারধর করে। এ সময় ত্বকী অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। এক পর্যায়ে একজন ত্বকীকে গলা টিপে হত্যা করে। এরপর একটি ব্যাগে ত্বকীর লাশ ভরে নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে আসা হয়। – এভাবেই ত্বকী হত্যার সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিলেন মামলার সন্দেহভাজন আসামি ইউসুফ হোসেন লিটন।
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বীর মেধাবী ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী গত ৬ মার্চ শহরের পুরাতন কোর্টের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ৮ মার্চ সকালে তার লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তীর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই ত্বকীর বাবা কারও নাম উল্লেখ না করে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রাব্বীর শত্রু বলে খ্যাত শামীম ওসমানের জড়িত থাকার কথা প্রথম থেকেই আলোচনায় রয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত। দৈনিক সমকাল এক প্রতিবেদনে জানায়, সোমবার সন্ধ্যার পর কঠোর গোপনীয়তায় লিটনকে র্যাব-১১-এর সদস্যরা আদালতে নিয়ে যান। পরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যাবিদ হোসেনের আদালতে লিটন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ত্বকী হত্যাকাণ্ডে এটিই প্রথম আদালতে কোনো সন্দেহভাজন আসামির স্বীকারোক্তি।
স্বীকারোক্তিতে লিটন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম, হত্যা এবং নদীতে লাশ ফেলার বর্ণনা দিয়েছে। লিটন শহরের আমলাপাড়া এলাকার কেবি সাহা রোডের সালাউদ্দিনের ছেলে।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ডিবি পুলিশ গত ২৯ এপ্রিল লিটনকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানা এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে লিটন নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিল। গত ১৫ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে বের হওয়ার পর লিটনকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। ১৪ দিন পর সোমবার সন্ধ্যার পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
লিটনকে ত্বকী হত্যা মামলায় আটক না দেখিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা একটি মাদক মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় লিটনকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক দেখানো হয়। তবে কোথা থেকে ও কখন তাকে আটক করা হয়েছে, তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১১-এর এএসপি রবিউল ইসলাম।
তবে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এসআই আশরাফের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, আদালতে সোমবার সন্ধ্যার পর এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
লিটন জবানবন্দিতে বলেছে, ৭ মার্চ রাতে সে ঝুট ব্যবসার ভাগের টাকা আনতে বড় ভাইয়ের অফিসে যায়। কিন্তু বড় ভাইয়ের নাম ও তার অফিসের অবস্থান লিটনের জবানবন্দিতে নেই। ওই অফিসের দ্বিতীয় কক্ষে ত্বকীকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে পেটানো হচ্ছিল। সীমান্তের নেতৃত্বে ৫-৭ যুবক তাকে থেমে থেমে মারধর করছিল। ওই সময় তৃতীয় কক্ষে বসে থাকা বড় ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে তাকে দেখে বড় ভাই ওই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তখন বড় ভাইকে ঝুটের টাকার কথা বললে তিনি লিটনকে বলেন, ‘টাকা দিচ্ছি। তবে এসেছিস যখন, একটি কাজ করে দিয়ে যা।’ পরে বড় ভাই ত্বকীর দিকে ইঙ্গিত করে তাকে মারধর এবং হত্যার নির্দেশ দেন লিটনকে। বড় ভাইয়ের নির্দেশ পেয়ে ওই ৫-৭ যুবকের সঙ্গে লিটনও ত্বকীকে মারধর করে। এ সময় ত্বকী অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল বলে লিটন জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে। এক পর্যায়ে এক ঘাতক ত্বকীকে গলা টিপে হত্যা করে। এরপর লাশ ফেলে দেওয়ার জন্য একটি বড় ব্যাগ আনা হয়। ওই ব্যাগে ত্বকীর লাশ ভরে একটি প্রাইভেট কারে শহরের কালীরবাজার দেলোয়ার টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় দেলোয়ার টাওয়ারের পূর্ব পাশে শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি নৌকা অপেক্ষায় ছিল। ওই নৌকায় লিটন ও সীমান্তসহ ৩ জন ত্বকীর লাশ নিয়ে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তীরে গিয়ে ব্যাগ থেকে লাশ ফেলে দিয়ে চলে আসে।
লিটন তার জবানবন্দিতে আরও জানায়, বড় ভাইয়ের কক্ষে সে অনেককে বসে থাকতে দেখেছে। তাদের কারও নাম সে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।