
উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: ঈদের কেনাকাটায় মুখর বিপণিবিতানের সামনে মঙ্গলবার গভীর রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান ওরফে মিল্কি (৪২)।
মঙ্গলবার রাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।
শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায় পুরো হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ভিডিও ধরা পড়ে। ভিডিওতে উল্লেখিত সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ১টা ৭ মিনিটের দিকে ঘটনাটি ঘটে। রিয়াজুল হক খান গাড়ি থেকে নেমে শপার্স ওয়ার্ল্ডের দিকে ঢুকতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে সাদা পাঞ্জাবী ও পাজামা পরা এক লোক ফোনে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে অস্ত্র বের করে মাথায় ঠেকিয়ে প্রথম গুলি করে। তারপর তার সাথে থাকা মোটরসাইকেল আরোহীরাও মুহুর্মুহু গুলি করে ১৪ সেকেন্ডের মধ্যে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে গুলশানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রিয়াজুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়না তদন্তে মাথার ডান বরাবর, বাঁ চোখের পাশে ও নিচে, পিঠে ও বাঁ পাঁজরে একটি করে গুলির ছিদ্র পাওয়া গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
রিয়াজুল হক খান ওরফে মিল্কি ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এ ঘটনায় মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
পায়ে গুলি লেগে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় তারেককে। ভিডিওতে দৃশ্যমান সাদা পাঞ্জাবি পরা হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতক হিসেবে জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে চিহ্নিত করেছে র্যাব। গ্রেফতারের সময়ও তার পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা ছিলো।
এ প্রসঙ্গে র্যাব কর্মকর্তা কিসমৎ বলেন, “সাদা পাঞ্জাবি পরা যে যুবকটিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়, সে’ই তারেক।”
তারেকের পায়ে গুলি লাগার ব্যাপারে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জিয়াউল আহসান বলেন, “তারেক তার সহযোগীর ছোড়া গুলিতে আহত হন।”
যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখায় নেতৃত্বের কোন্দল থেকে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেছেন পুলিশী তদন্তের পর যুবলীগের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
মিল্কিকে হত্যার চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছিল এবং এতে সংগঠনেরই একটি পক্ষ জড়িত ছিল বলে তার সমর্থকদের দাবি।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, “মিল্কিকে দীর্ঘদিন ধরে হত্যার চেষ্টা চলছিল বলে র্যাব জানতে পেরেছে।”
ঢাকা দক্ষিণের অপর নেতা সম্রাটের অসুস্থতাতে মিল্কির একক আধিপত্য বাড়তে থাকে। তাই তার বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছিলো বলে জানান মিল্কির সমর্থকরা।
নিহত রিয়াজুল হক খান ওরফে মিল্কি পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে রিয়াজুলের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে ছেলের হত্যাকাণ্ডে শোকবিহ্বাল হয়ে গেছেন তার মা জাহানারা এরশাদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার রাতে ১০টার দিকে মিল্কি বাসায় ফিরে আর বাহিরে যাবেনা বলে ড্রাইভারকেও বিদায় করে দেয়। কিন্তু হঠাৎ জরুরী ফোনে তাকে বের হয়ে যেতে হয়।