ছাত্ররা যতদিন জেগে আছে, পথ হারাবে না বাংলাদেশ

উইমেন চ্যাপ্টার:

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে নেমেছে রাস্তায়। তারা তুরাগ নামের ৪০টিরও বেশি বাস আটক করে রেখেছে। অভিযুক্তদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত বাসগুলো ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রতিবাদী শিক্ষাথর্থীরা। বাংলাদেশে এ এক নবদিগন্তের সূচনা।

সিএসই ডিপার্টমেন্টের এক মেয়ের সাথে তুরাগ বাসের ড্রাইভার ও দুই সহযোগী গত পরশু যৌন হয়রানির চেষ্টা করে। উত্তরা ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রী গত শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে বাড্ডা লিংক রোড থেকে তুরাগ বাসে ওঠেন উত্তরা যাওয়ার জন্য। তিনি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত আসনেই বসেছিলেন।


তখন বাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। ধীরে ধীরে অন্য যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে নেমে যায়, নেমে যাওয়া যাত্রীদের বদলে কাউকে বাসে নতুন করে না তোলায় সন্দেহ হয় ওই তরুণীর। বাসটি যখন প্রায় খালি হয়ে যায় তখন চালকের সহকারী ওই ছাত্রীকে বাসের পেছনের আসনে গিয়ে বসতে বলে। এ সময় বাসের আরেকজন সহকারী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী যেন না উঠে সেটা নিশ্চিত করছিল। বসুন্ধরা এলাকায় এসে ওই ছাত্রী দরজার কাছে গিয়ে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু চালকের সহকারী ‘কই যান’ বলে তার হাত চেপে ধরে, আর আরেকজন গেইট লাগাতে শুরু করে।

এ সময় দুই সহকারীকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটি চলন্ত বাস থেকে নেমে পড়ে।

এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজানি হওয়ার পর রবিবার উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রায় দুই থেকে আড়াইশ শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে প্রায় ৪০/ ৪৫ টি তুরাগ বাসের চাবি নিয়ে বাস আটকে দেয়।

তাদের দাবী দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত এবং ভবিষ্যতে বাসে এরূপ যৌন হয়রানি বন্ধের নিশ্চয়তা। এখনো তুরাগ বাসের মালিক পক্ষের সাথে প্রতিবাদকারীদের আলোচনা চলছে। তুরাগ মাস মালিক সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে। কিন্তু ছাত্ররা ছেড়ে দিবে না। তারা রাতেও রাস্তায় শান্তিপূর্ণ তাদের অবস্থান জারি রেখেছে। দোষীদের শাস্তি না দিলে আগামীকাল সকালে সবাই রাস্তায় নেমে আসবে বলে জানা গেছে।

সাব্বাস। পরিবহন খাতের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠা এই প্রতিবাদে পূর্ণ সমর্থন রইলো। আহবান জানাবো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিবাদে যোগ দেয়।

এই প্রতিবাদ একটি নিরাপদ বাংলাদশের। অবশ্যই আমাদের জয়ী হতে হবে, কারণ সমাজের প্রতি স্তরে স্তরে লুকিয়ে থাকা যৌন নিপীড়কদের এই বার্তা পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন – ছাত্র সমাজ পথ ছাড়েনি, ছাড়বে না।

ছাত্ররা যতদিন জেগে আছে বাংলাদেশ পথ হারাবে না।

(লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত এবং ঈষৎ পরিবর্তিত। মূল লেখক: রাফিউজ্জামান সিফাত) এদিকে রাজীব হাসান নামে অপর একজন শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে লিখেছেন, “দরকার হলে আমরাই সারারাত বাস গুলা পাহারা দিবো যাতে বাসের কোন ক্ষতি না হয়। কারন ক্ষতি হলে আমাদের ভার্সিটির নামে মালিক পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দমবার পাত্র আমরা নই। দোয়া করবেন সবাই যাতে আমাদের মিশন সফল হয়। আমরা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই যাতে কোন বাসের ড্রাইভার বা হেল্পার ভবিষ্যতে আর কোন বাসের মধ্যে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট করার সাহস না পায়। আর অন্য যেকোন জায়গায়ও যাতে কেউ এই ধরনের কুকীর্তি করার আগে ১০ বার ভাবে।”

শেয়ার করুন: