একজন বোকা মানুষের আবোল-তাবোল

ফারজানা শারমীন সুরভি:

মৌসুমী ভৌমিক! আপনি বিষণ্ণতাকে শব্দ আর সুরের আকার দিয়েছিলেন। আপনার গান তাই এখনও চোখে জল আনে। অথচ বিষণ্ণতাকে মুছে ফেলে সফল হবার তীব্র চেষ্টা করি আমরা। সময়-ই টাকা, টাকাই সময়-পুঁজিবাদের এই মন্ত্র পাঠ করতে করতে আমরা প্রোডাক্টিভিটি নামের অলীক ঘোড়ার ডিমের সাধনা করি।

জীবনানন্দ দাশ পড়ে অস্তিত্বের বিপন্নতাকে বুঝতে শিখেও আমরা ইঁদুর দৌঁড়ে অংশগ্রহণ করি। প্রথম পুরষ্কার পেয়ে বলি, পুঁজিবাদ জিন্দাবাদ! জীবনানন্দ দাশের মতোন ট্রামের নিচে আত্মহত্যা করা এক ‘লুজার’ হবো না বলে, আমরা অন্ধ প্যাঁচা হই। বলি, “ধরা যাক দু’-একটা ইঁদুর এবার”! আমরা ডলার দিয়ে সোশ্যাল স্ট্যাটাস কিনি। দারিদ্র্যকে অলসতা বলে দায়মুক্ত হই। আমরা অতীত কবর দিতে ভালোবাসি। সফলতার রাংতা অদৃশ্য মুকুটে গুঁজে বলি, “কবিতা এক ভীষণ আনপ্রোডাক্টিভ বুলশিট”!


তারুণ্যে সমাজ বদলের ম্যানিফেস্টো পড়ি। কিন্তু প্রৌঢ়ত্বে ভুলে যাই পূজা, তনু, আসিফা, রুপাদের কথা। আমাদের অন্তর শূন্য হয়ে যায়। আমরা বিড়বিড় করে গান গাই, “পরের জায়গা পরের জমি, ঘর বানায়া আমি রই/ আমি তো সেই ঘরের মানুষ নই”। তবু আমরা নিরাপত্তাবোধ ছাড়তে পারিনা। আরেকজন রুপা কিংবা তনু হবো না বলে, আমরা পরের জমিতে ঘর বানিয়ে প্রবাসী হয়ে যাই।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! আপনি ভালোবাসায় কীভাবে সমর্পিত হতে হয়, সেই সত্যে দীক্ষা দিয়েছিলেন শব্দে শব্দে এবং সুরে সুরে। আপনার গান তাই এখনও শুনাই প্রেমাস্পদকে। আপনার গান তাই এখনো শুনাই প্রার্থনার সময় প্রভুকে। অথচ সেই ভালোবাসা আর প্রেমে আমরা নিজেরাই ঢেলে দেই বিষাক্ত কথামালা। পান থেকে চুন খসলেই ভুলে যাই, ভালোবাসলে ক্ষমাশীল হতে হয়। ভালোবাসলে ধৈর্য ধরতে হয়। তবুও কখনো কখনো নিজেকে খুঁজতে চাই বলে এক দীর্ঘ চিঠি লিখে ফেলি প্রেমিককে, এই টেক্সটিং চ্যাটিং-এর শর্টকাটের যুগে।

আমরা আসলে নিজেরাই নিজেদের কন্ট্রাডিক্ট করি। ঘরের আয়নাগুলো লুকিয়ে রাখি গুদামঘরে। আবেগের রোলারকোস্টারে দোদুল্যমান মানুষগুলো তাই এই সময়ের কুটিলতা দেখে থমকে দাঁড়ায়। আর প্রশ্ন করে, আর কতোটা কুটিলত্ব আয়ত্ত্ব করলে আমরা অচল থেকে সচল হবো? অর্জন করবো অপরের পিঠে ছুরি বসানোর সূক্ষ্ম বিদ্যা?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.