আনন্দময়ী মজুমদার:
সময়ের পরীক্ষায় দেখতে পাই, অনেক প্রতিষ্ঠিত সিস্টেম ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কিছু মানুষকে মানবেতর প্রতিপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আমাদের উল্টো কাজ হবে মানবিকীকরণ (rehumanizing)। কাজটা মানুষকে মানবেতর প্রতিপন্ন করার মতোই, বিশেষ এক জায়গা থেকে শুরু হয়। জায়গাটা হলো শব্দ আর ছবির ব্যবহার।
আমরা ক্রমশ: এমন এক দুনিয়ায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে রাজনীতি আর আদর্শের লড়াইগুলি ভর করে আছে মানুষকে মানবেতর প্রতিপন্ন করার ওপরে।
সামাজিক মাধ্যমগুলি সেই প্ল্যাটফর্ম — যেখানে দাঁড়িয়ে এই কাজ করা হয়। টুইটার বা ফেসবুকে আমরা দ্রুত আমাদের সঙ্গে যাদের অমত, বিপজ্জনকভাবে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারি নীতিগত ময়দান থেকে। অর্থাৎ কিনা তাদের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচলিত নীতিবোধ আর কাজে লাগাবো না বলে মেনে নিয়ে। তাদের জন্য আমরা জবাবদিহিতা দিতে প্রস্তুত থাকবো না, এই রকম একটা অবস্থানে এসে। তাদের সম্পূর্ণ নামহীন এক অজ্ঞাতবাসে পাঠিয়ে দিয়ে।
আমি বিশ্বাস করি —
১। হিলারি ক্লিনটনকে যদি ‘কুত্তি’ বা ‘বেশ্যা’ বলে কেউ গালাগালি করলে আমাদের খারাপ লাগে, তবে অনুরূপ গালাগালি ইভাঙ্কা ট্রাম্প-কে করলেও আমাদের আপত্তি থাকার কথা।
২। হিলারি ক্লিনটন যখন ট্রাম্পের অনুগতদের ‘এক বস্তা ঘৃণা’ বলে অভিহিত করেন, তখন যদি দুঃখ হতে থাকে, তবে, এরিক ট্রাম্প যখন বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা মানুষ নয়’ তখনও উৎকণ্ঠিত হবার কথা।
৩। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি যখন নারীদের ‘কুকুর’ বলে অভিহিত করেন, এবং তাদের নিতম্ব খামচে ধরার কথা বলেন, তখন আমাদের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল বরফ নামে, আমাদের শিরা বেয়ে প্রতিরোধের আগুন বাহিত হয়। যখন লোকে সেই রাষ্ট্রপতিকে ‘শুয়োর’ বলে গালাগালি করে, তখনো আমাদের সেই ভাষাকে বিনাবাক্যে পরিহার করতে হবে।
৪। যখন যে-কোনো গোষ্ঠী বা মানুষকে পশু অথবা ভিন গ্রহের বলে অভিহিত করা হয়, তখন আমাদের সঙ্গে সঙ্গে মনে করতে হবে, ‘এই মানুষের মানবতাকে ছিলে নেবার এক প্রচেষ্টা চলছে নাকি? যাতে সহজেই তার ওপর আঘাত হানা যায়? যেন যে-কোনো মানবাধিকার সহজেই লঙ্ঘন করা যায়?
৫। ট্রাম্পকে ফটোশপ করে হিটলারের আদল দেওয়ায় আমাদের যদি আপত্তি থাকে, তাহলে আমাদের নিজেদের ফেসবুক দেওয়ালে ওবামাকে ফটোশপ করে জোকার হিসেবে তুলে ধরা উচিত হবে না।
একটা সীমারেখা আছে। সেটা মর্যাদাবোধের আঁচড়ে সুচিহ্নিত। এবং রাজনীতির ডানপন্থী, বামপন্থী, সন্ত্রাসবাদী এবং প্রগতিবাদী সকলেই — সেই সীমারেখাকে উঠতে বসতে লঙ্ঘন করে চলেছেন।
মানুষকে মানবেতরভাবে প্রতিপন্ন করা — আমাদের কখনো কোনোভাবে সহ্য করা উচিত নয়। কারণ উৎপীড়নের একটা অমোঘ হাতিয়ার এটা। প্রত্যেক গণহত্যার পিছনে এটাই কাজ করে।
#Brene_Brown_my_author #move_in #ব্রেনে_ব্রাউন_অনুবাদ #dehumanization_brene_brown