দেবারতি মুখোপাধ্যায়:
জম্মু কাশ্মীরের আট বছরের একটা ফুটফুটে শিশু আসিফা বানু। বাখারওয়াল মুসলিম উপজাতির মানুষ। এখন জম্মুর কাঠুয়া অঞ্চল থেকে ওই উপজাতিকে তাড়াতে হবে।
কীভাবে তাড়ানো হবে?
সিম্পল! তুলে আনো, রেপ করো, করে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফ্যালো। তারপর জোর গলায় বলো, “জয় শ্রী রাম!” দেখবে এলাকায় কেমন ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে, ব্যাটারা বাপ বাপ করে পালাবে।
এহ, রামভক্তদের সঙ্গে পাঙ্গা?
প্ল্যান মোতাবেকই কাজ হলো। আট বছরের আসিফা ১০ই জানুয়ারি পোষা ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে আর খেলতে নিয়ে গিয়েছিল, তাকে অপহরণ করে মন্দিরে হাতপা বেঁধে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ফেলে রাখা হল। ধর্ষণ করা হল সাতদিন ধরে।
মূল পাণ্ডা সাঞ্জী রাম আর তার নাবালক ভাইপো। ১৩ ই জানুয়ারী দেবস্থানেই সাঞ্জি রাম মেয়েটিকে ধর্ষণ করলো, ওটাই যে ধর্মীয় আচার! কড়া ওষুধ দিয়ে বারবার খোবলানো হলো বাচ্চাটাকে।
ওদিকে গ্রামে তখন ভয় ছড়িয়ে পড়েছে, বাচ্চা মেয়েটা কোথায় গেল! বাবা মা উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটছেন থানায়, কিন্তু পুলিশ মিসিং ডায়েরি নিতেই চাইলো না।
সাঞ্জী রামের ‘দুষ্টু’ ভাইপো ১১ তারিখ মীরাটে বন্ধু বিশালকে ফোন করলো, “ভাই, যদি মজা নিতে চাস, তো জলদি আয়!”
তো বিশাল জলদিই ট্রেনে চেপে চলে এলো আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করতে। after all, ধর্ম মাখানো ধর্ষণ, মজাই আলাদা boss! ছাড়লে হয়!
আসিফার খোঁজে তদন্তে এলো স্পেশাল পুলিশ অফিসার দীপক খাজুরিয়া এবং সুরিন্দর, সহযোগী ইনস্পেক্টর আনন্দ দত্ত, হেড কনস্টেবল তিলক রাজ। তারাও যোগ দিল ধর্ষণখেলায়।
সাতদিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে এই অত্যাচারের ধকল বাচ্চাটা আর নিতে পারছিল না, অতএব আসিফাকে গলা টিপে মেরে ফেলা হলো। শোনা যাচ্ছে, মারার আগে নাকি দীপক খাজুরিয়া গুনগুন করলো, “আরেকবার রেপ করলে হয় না?”
পুলিশের কথা অমান্য করা যায় না, বাকিরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো বড়বাবুর খিদে মেটাবার জন্য। তারপর পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ১৫ই জানুয়ারি কাণ্ড সম্পূর্ণ হল।
কী ভাবছেন? আতঙ্কিত হওয়ার পালা এখানেই শেষ? মোটেই না।
পুলিশ তো মিসিং ডায়েরী প্রথমে নিল না, পরে চাপে পড়ে তদন্ত শুরু হল।
১৮ পাতা চার্জশিট পেশ করে জম্মুকাশ্মীর পুলিশের ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ জানাল – আসিফা নামের আট বছরের মেয়ে পোষ্য ঘোড়াকে স্থানীয় জঙ্গলে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে ১০ই জানুয়ারী থেকে নিখোঁজ হয়। মেয়েটির বাবা ১২ তারিখ পুলিশকে জানালেও পুলিশ মেয়েটির ব্যাপারে সব জানা সত্বেও প্রায় দেড়লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে মেয়েটির সব তথ্য চেপে যায় এবং মেয়েটিকে যে ক্রমাগত আরো অত্যাচার করা হবে পুলিশরা তা জানা সত্বেও নির্বিকার থাকে।
এরপর যখন একে একে গ্রেফতার শুরু হল, তখন ভূস্বর্গে শুরু হল মিটিং, মিছিল, প্রতিবাদ।
কি ভাবছেন ? আসিফার এই পরিণতির শাস্তি চেয়ে ? আজ্ঞে না, ধর্ষকদের সমর্থনে।
তৈরি হল ‘হিন্দু একতা মঞ্চ’, বাড়ির মেয়েরা ধর্ষকদের সমর্থনে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিল। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মন্ত্রীসভার দুইজন মন্ত্রী অভিযুক্তদের মুক্তির জন্য ধর্না শুরু করলো।
কোর্টে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা কোর্ট চত্ত্বরেই ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগান দেওয়া শুরু করল।
এই কি তাহলে বহুকথিত রামরাজ্য? যেখানে ধর্ষকদের বাঁচাতে শ্রীরামের শরণাপন্ন হতে হয়?
যেখানে দেবালয়ের গর্ভগৃহে কুচি কুচি করে কাটা হয় শৈশবকে?
কোথায় রাম, কোথায় আল্লাহ্? সত্যি বলছি, আর নিতে পারছি না।
বিশ্বাস করুন, আমি লাল, সবুজ, গেরুয়া কিচ্ছু নই, শুধু মনুষ্যত্বটা চাই।
যে দেশে দেবতার সামনে নাবালিকার উপর যৌন অত্যাচারকে ধর্মীয় আচার বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, লাথি মারি আমি অমন ধর্মের মুখে! হিন্দু মুসলিম কিচ্ছু চাইনা, মানবতা চাই, মানবিকতা চাই। সে রামই হোক, আর রহিমই হোক।
যে ধর্ম মানুষকে মারে, যে ধর্ম নিষ্পাপ শিশুকে ভোগ্যপণ্য করে রাজনীতি করে, সেই ধর্মের দোহাই দিয়ে আর কতদিন চলবে এগুলো?
ছোট্ট আসিফার কাছে আজ আমরা একশো কুড়ি কোটি ভারতবাসী লজ্জিত। একটা শিশুকে যারা নিরাপত্তা দিতেপারেনা, সেই আমরা কিভাবে ক্ষমা চাইব ছোট্ট শিশুটির কাছে?
আসলে সেদিন আসিফা ধর্ষিতা হয়নি, বাখরাওয়াল সম্প্রদায় ধর্ষিত হয়নি, হিন্দু মুসলমান কোনো ধর্মই ধর্ষিত হয়নি।
সেদিন কাশ্মীরের সেই মন্দিরের অন্ধকার গর্ভগৃহে দেবতার সামনে ধর্ষিতা হচ্ছিলেন আমাদের সবার ভারতমাতা, আমাদের দেশমাতৃকা। আমাদের একশো কুড়ি কোটির দেশ।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)