বন্যা হোসেন:
বেশ কিছুদিন আগে রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা একটা কমেন্ট করেছিলেন দেশের বাইরের একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে- বলেছিলেন দেশের মাদ্রাসায় এতো টাকা দান না করে বরং দেশে যেসব এতিম, অসহায় দুস্থ বাচ্চারা আছে, তাদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।
ব্যস আর যায় কোথায় দেশের মোল্লারা (যারা সাধারণত এই সব টাকা হালাল করে থাকে) ক্ষেপে উঠে শিল্পীকে মুরতাদ ঘোষণা করে তাঁর ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে দিল। জীবনের মায়া বড় কথা, আর জলে বসে কুমিরের সাথে তো আর যুদ্ধ করা যায় না। রিজওয়ানা বন্যা ক্ষমা চাইলেন, বললেন, তিনি সেভাবে কথাটা বলেননি, ভুলভাবে তাঁর মন্তব্য প্রকাশ হয়েছে।
আমি সেদিন হতাশ হয়েছিলাম মৌলবাদীদের আস্ফালন দেখে, আশায় বুক বেঁধেছিলাম এই দিনের শিগগিরই অবসান হবে ভেবে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি তো হয়ইনি, মনে হয় আরও অবনতি হয়েছে।
মোশাররফ করিমের আজকের অবস্থা সেটাই প্রমাণ করে। কিছুদিন আগে তিনি ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটা সুন্দর বক্তব্য দিয়েছিলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি এতো সুন্দর একটা উপস্থাপনা, আমি রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছিলাম, তাঁর এই সাহসী মনোভাব দেখে।
কিন্তু রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মতো মোশাররফ করিমকেও হার মানতে হলো মোল্লাতন্ত্রের কাছে, ক্ষমা চাইতে হলো মৌলবাদীদের কাছে, আর ক্ষমা না চেয়েই বা করবে কী, এদের ক্ষমতা তো অসীম, আর এরা কথার উত্তর কথায় দেয় না, এরা কথার উত্তর দেয় চাপাতির কোপের মাধ্যমে। আর মানুষের জীবন তো একটাই, অভিজিৎ ফিরে আসেনি, ওয়াশিকুর, দীপন কেউই ফিরে আসেনি, সবাইকে মৌলবাদীদের চাপাতির নিচেই জীবন দিতে হয়েছে।
কাজেই জীবন যেখানে যেমন, সেভাবেই কাটিয়ে দেয়া উচিত।
মোশাররফ আপনি ক্ষমা চেয়ে ভালোই করেছেন। আপনি তো একা নন, আপনার সাথে স্ত্রী-সন্তান-মা-বাবা সবাই জড়িত তাদের নিরাপত্তার কথা তো আপনাকেই ভাবতে হবে।
জাফর ইকবাল স্যারের মতো মানুষকেও এই মৌলবাদীদের কাছে প্রমাণ দিতে হয়েছে তিনি একজন খাঁটি মুসলমান, তিনি নামাজ পড়েন, কোরান শরিফ পড়েন, তিনি নাস্তিক নন।
জাফর স্যারেরই বা দোষ দিব কী করে! তিনিও মানুষ, উনারও জীবনের মায়া আছে, খোলা চাপাতির কাছে আমরা সবাই জিম্মি হয়ে আছি।
এখন আর স্বপ্ন দেখি না দেশটা নিয়ে, দেশ তো উন্নয়নের সাগরে ভাসছে, হ্যাঁ উন্নয়ন হয়েছে বৈকি- তবে সে উন্নয়ন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা আর মৌলবাদিতার উন্নয়ন।
ধর্ম আর মৌলবাদিতাকে সাথে নিয়ে
দেশ চলুক নিজের গতিতে।