শেখ তাসলিমা মুন:
শিউরে উঠলাম। ডঃ জাফর ইকবাল কীভাবে বেঁচে গেলেন? আর একটি অভিজিৎ রায় ঘটনা থেকে আমরা কীভাবে রক্ষা পেলাম? তবে কি খুনি যথাযথ প্রশিক্ষিত ছিল না? ভুল পার্সনের কাছে পড়েছিল এ ভয়ংকর মিশন? কেবল সেজন্যই বেঁচে গেলেন তিনি এ যাত্রায়?
ছবিতে দেখলাম একজন অর্বাচীন নূরানি ছাগু দাঁড়িয়ে আছে। আশে-পাশে আরও কয়েকজন। চোখে মুখে ছাগলের ছাপ। চেহারাগুলো অপদার্থ এক অর্বাচীন। তবে কি সেজন্যই ডঃ জাফর ইকবাল বেঁচে গেলেন? কিন্তু আনসার উল্লাহ টিম এমন একজনকে পাঠালো কেন? যত ভাবছি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। তার থেকেও বড় প্রশ্ন, তারা ডঃ জাফর ইকবালের পেছনে দাঁড়ানো কেন? কী কারণে? তারা শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্যবিদ্যালয়ের কেউ? এ দূর থেকে ছবি দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, তারা জাফর ইকবালের ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের কথা বাদ দিলাম, এমনকি সেখানকার ছাত্ররাও চিনলো না কারা ছাত্র আর কারা অছাত্র?
ডঃ জাফর ইকবাল আজ বেঁচে গেলেন বটে, কিন্তু তার বিপরীতটা ভেবে দেখেছি কি আমরা? অভিজিৎকে হত্যা করতে ওদের লেগেছিল কয়েক সেকেন্ড। ওদের প্রশিক্ষণ এমন যে ঠাণ্ডা শীতল অভিব্যক্তিহীন আঘাত এবং কয়েক সেকেন্ডের, সে আঘাতে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে না ৯৯%। সেই প্রশিক্ষণ গোষ্ঠী থেকে আজ জাফর ইকবাল সাহেব বেঁচে গেলেন। ভাবতে গিয়ে সমস্ত শরীর শীতল হয়ে আসছে।
ডঃ জাফর ইকবাল সারা দেশে তরুণ ছাত্রদের আইডল। আশ্রয়। অসম্ভব জনপ্রিয় এ শিক্ষক প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ভাই। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তিনি একজন শহীদের সন্তান। তাঁর জীবনের উপর আঘাত আমাকে ১৯৭১ কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কোথায় চলে গেল আমাদের অর্জন? কেন যুদ্ধ করেছিল আমাদের বাবা-মা? আজ দেশ কাদের হাতে? মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সন্তানরা সেই অন্ধকার শক্তির চাপাতির কুঠারের তলায়? কে কেড়ে নিলো আমার বাবার স্বপ্নের দেশ? এ শক্তির উৎস কারা?
যে রাষ্ট্র তরুণদের আলোকবর্তিকা হতে পারেনি, মৌলবাদী মাদ্রাসা শিক্ষাকে লালন করে, দেশ পরিচালনার কাণ্ডারি বলে ঘোষণা দেয়, সেখানে অসহায় এক তরুণ সম্প্রদায়ের একমাত্র ভরসাস্থল, একমাত্র আলোর দিশারী তাদের নিজেদের খুঁজে নিতে হয়, আর তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা একটি স্বাধীন ভূমির দিবালোকে সম্পন্ন করা হয়। সে তরুণ সম্প্রদায় হতাশায় নিমজ্জিত হলে আমরা কাদের নিয়ে সামনে এগুবো?
একটি অন্ধকার সময়ের ভেতর পাড়ি দিচ্ছে দেশের তরুণ সম্প্রদায়। ন্যায়বিচার বঞ্চিত একটি প্রজন্ম। বেঁচে থাকে স্বপ্ন সামনে নিয়ে, ‘এখনও জাফর ইকবালরা আছেন’ সে ভরসা নিয়ে। সে ভরসার আলো নিভিয়ে দেওয়ার এ ষড়যন্ত্র থেকে জাফর ইকবালদের বাঁচাতে না পারার অর্থ ভয়ানক। এর ফল সুদূরপ্রসারী। একজন জাফর ইকবালকে হত্যা করা একটি তরুণ প্রজন্মকে দিশাহীন করা। তাদেরকে হত্যা করা। তাদের স্বপ্নকে হত্যা করা। তাদের সামনে এগুনোর শক্তিকে থামিয়ে দেওয়া। যার মূল্য কেউ কল্পনা করতে পারছেন না।
জাফর ইকবালদের রক্ষা করতে না পারলে আপনারাও বাদ যাবেন না। চাপাতি আপনাদের দিকেই তাক করা ভুলে যাবেন না!