মাতৃত্ব যখন কাঠগড়ায় (পর্ব -৩)

সুদীপ্তা ভট্টাচার্য্য রুমকি:

একটা বাসায় কাজ করতে একজন মহিলা এসেছে, সঙ্গে তার মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে। যে বাসায় কাজ করতে এসেছে সেই বাসার মেয়েটিকে বললো, বাচ্চা নিয়ে কাজ করতে দিতে রাজি হয় না বেশিরভাগ বাসায়। অথচ তার মেয়ে তাকে সাহায্য না করলে বেশি কাজ করতে পারবে না।

কথাটা বলেই কাঁদতে শুরু করলো, বললো “মেয়ে আমার কাছেই থাকে। জামাইটা মানুষ না। সংসার করছে, বাচ্চার জন্ম দিছে, অথচ একটা দায়িত্বও সে নিতে রাজি না। আমার কাছে পাঠাইয়া সব দায় শেষ করছে। নাতি আর মেয়ের না কোনো খবর নিছে, না এক টাকা দিছে। নাতি চিনে না বাপ রে। তোমরা শিক্ষিত মানুষ, এই সমস্ত ছোটলোকি তো কল্পনাও করতে পারবা না মা।”

মেয়েটির পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল চোখে ঝাপসা দেখছে। ও ভাবছিল এতো ভয়াবহতা আসলেই ও কল্পনা করতে পারবে না। যা নিজের জীবনে ভোগ করেছে, তা কল্পনা করার কোনো দরকার নেই তো ওর। লাইফ, ক্যারিয়ার সব বিসর্জন দিয়েও তো শেষ রক্ষা হয়নি। তাকেও তো ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে শুধু বাধ্য করাই হয়নি, এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সে ও তার সন্তানের প্রতি সকল প্রকার দায়বদ্ধতাও। ওর ছেলেও চিনে না বাবাকে। ওর হাজবেন্ড তো একটা দিকেও ঐ মেয়েটির হাজব্যান্ডের চেয়ে উন্নত নয়। অথচ কাজ করতে আসা মহিলাটির পরিবার, শিক্ষা, আর্থিক, সামাজিক অবস্থান সবদিক দিয়ে অনুন্নত।
পক্ষান্তরে সে ও তার বাবা, মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত, আর্থিক, সামাজিক অবস্থান সবদিক দিয়ে উন্নত। সে অবাক হয়ে ভাবছিল, কী বিচিত্র এই সমাজ, কী সমতাপূর্ণ নারীর অবস্থান। গৃহকর্তার কন্যা আর গৃহভৃত্যের কন্যা এক কাতারে দাঁড়িয়ে। কোথাও কোনো পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না।

দুজনের শ্বশুরবাড়ি দুই মেরুতে হলেও হাজব্যান্ড এবং শ্বশুর বাড়ির মূল্যবোধ হুবুহু এক ছিল। দুজনেই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। দুজনেই লড়ছে বাচ্চার জন্য। দুজনেই বাধ্য হয়েছে এককভাবে বাচ্চার দায়িত্ব পালনে। যারা বলেন, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা নারীর অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে, আমার তাদের কাছে প্রশ্ন-আমাদের হিপোক্রেট সমাজে আসলেই তা কতটুকু সম্ভব! রুমানা মঞ্জুর তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। পারিবারিকভাবে হতদরিদ্র তো ছিলেনই না, বরং নিজেও যথেষ্ট সাবলম্বীই ছিলেন, সামাজিক অবস্থানও দৃঢ় ছিল, নিজেরই শুধু না বাবা,মায়েরও।তিনি কি পারতেন না এই বিবাহিত সম্পর্কটা ত্যাগ করতে? উনার কি ফিরে যাওয়ার জায়গা ছিল না? তিনি কেন সেই সাহসটা করতে পারলেন না? তিনি শেষ পর্যন্ত সংসারটা ভাঙ্গতে চাননি কেন? এককভাবে বাচ্চার দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা কি তার ছিল না?

সেই উত্তর- আমি, আপনি, আমরা সবাই জানি, আর তা হলো সন্তান। তিনি নিজেও বলেছিলেন, তার কন্যার জন্য তিনি ও পথে হাঁটতে চাননি। আসলেই আমাদের সমাজ কি নিস্তার দেয় মা ও তার ছোট্ট শিশুকে? অবুঝ শিশুর সামনেই বিকৃত রুচির প্রকাশ ঘটানো হয় অবলীলায়, ভিকটিম এর কাছেই জানতে চাওয়া হয় আপনার অনুভুতি এই ঘটনায়! This is our society!! ভদ্র হতে এখনও অনেক বাকি। সমাজ প্রতিনিয়ত ছোট্ট শিশুকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে দ্বিধাবোধ করবে না। তা দেখার মতো ভয়ঙ্কর কাজের দায়িত্ব নিয়ে, সন্তানকে এই বিভীষিকার ভিতর দিয়ে নিতে কোন মাই চায় না।তখন সহ্য করা ছাড়া তার কাছে কোন পথটা খোলা থাকে?

চরম আত্মপ্রত্যয়ী একজন মেয়েও ঠিক এই জায়গায় কেমন জানি মিইয়ে যায়। যেকোনো উচ্চশিক্ষিত, মুক্তমনা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতাসম্পন্ন মেয়ের জীবনে আসলে অসাধারণ ব্যক্তিত্বের একজন আদর্শ বাবা থাকে। বাবা শব্দটির সাথে তার এতো নির্ভরতা ও ভালবাসা জড়িয়ে থাকে যে, এর বাইরেও যে জন্মদাতার কোনো রূপ থাকতে পারে, তা বুঝতে পারলেও বিশ্বাস করতে পারে না।

সে মনে করে আজ না হয় কাল হয়তো মানুষটি ভুল বুঝতে পারবে, একজন আদর্শ বাবায় পরিণত হবে। নিজের মনকে জোরজবরদস্তিতে সে ক্রমাগত তাই বোঝাতে থাকে। আর এখানেই সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলে তারা, কারণ তার নিজের বাবা আদর্শ বাবাই শুধু ছিল না, তার মায়ের আদর্শ জীবনসঙ্গীও ছিল। একজন পিতা তখনই সন্তানের চোখে আদর্শ হয়, যখন তার মাকে যথাযথ সম্মান করার ক্ষমতা সেই পিতার থাকে। মাকে হেনস্থাকারী, নির্যাতনকারী কোনদিনও সন্তানের চোখে আদর্শ হতে পারে না। বাবা নামের যোগ্য না যে ব্যক্তি, সেও সন্তান নামক সম্পত্তির সর্বময় কর্তা নিজেকে দাবি করে সন্তানের আয়া স্বরুপ একটা মায়ের অবদানকে মূল্যায়ন করতে লজ্জা যেমন নিজে অনুভব করে না, তেমনি সমাজের কোনো ক্ষেত্র থেকে তাকে তা করানোও হয় না।

সম্প্রতি একজন চিত্রনায়ককে দেখলাম ডিভোর্সের যুক্তিসঙ্গত কারণ হিসাবে স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন উদ্ভট অভিযোগের সাথে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন, তার মাতৃত্ব ও সন্তানের প্রতি দায়িত্বপালনে অবহেলা নিয়ে। প্রশ্নটা নিয়ে আমার হয়তো তেমন কিছুই বলার ছিল না যদি তা সন্তানের প্রতি নিবেদিত প্রাণ কোন প্রকৃত বাবা করতো! কিন্তু যে নিজে থেকে পিতা হিসাবে একটা দায়িত্ব পালন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা দূরে থাক, ইনিয়ে-বিনিয়ে বাচ্চার জন্মের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়েনি, সে যখন তার সেই মুখে কোনো মায়ের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন খুব বেশি একপেশে আর নোংরা লাগে সমাজ ব্যবস্থাটা। অথচ এই মহামানব তা কোনদিনও করতে পারতো না যদি পরিবার, সমাজ, সর্বোপরি আইন তাকে অসহযোগিতা করতো।

ঘরে যদি চোর-ডাকাত ঢুকে সন্তানের দিকে অস্ত্র তাক করে কষ্টার্জিত ধনসম্পদ চায় এবং চেঁচামেচি না করে তা দিতে বলে, তখন মানুষ সেই চোর ডাকাতের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হয়, হাতে-পায়ে ধরে যেন এগুলোর বিনিময়ে হলেও সন্তানের কোন ক্ষতি না করে। তেমনি একজন মা এর চোখের সামনে যখন সন্তানের ভবিষ্যৎ এর দিকে অনিশ্চয়তা তাক করে, তার জীবনের যাবতীয় কষ্টার্জিত অর্জন, স্বপ্ন, সাধ, পড়াশোনা, চাকরি, আত্মসম্মান সবকিছুর বলি চায় এবং টুঁ শব্দ না করে তা দিতে বলে, তখন একটা মা-ও সেই হাজব্যান্ড, শ্বশুর বাড়ির চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হয়, হাতে-পায়ে ধরে যেন এগুলোর বিনিময়ে হলেও তারা তার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের কোনো ক্ষতি না করে।

সন্তানকে জিম্মি করা চোর-ডাকাতকে যেমন মানুষ শ্রদ্ধা থেকে হাতে-পায়ে ধরে না, ধরে অসহায় হয়ে, ঠিক তেমনি এধরনের পরিবারের মানুষের কাছেও মানুষ শ্রদ্ধা থেকে মাথা নোয়ায় না, নোয়ায় অসহায় হয়ে। ছোটো থেকে বাসায় যখন যে কাজের মাসি কাজ করতো, তাদের বেশির ভাগেরই দেখতাম সংসার খরচ চালানো, বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করাসহ যাবতীয় দায়িত্ব তাদেরই। এ নিয়ে তাদের হ্যাজবেন্ডদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা ইচ্ছা হলে সংসারে দায়-দায়িত্বহীনভাবে থাকতো, না হলে অন্যকোথাও, অন্যভাবে, অন্য যে কারো সাথে নব আনন্দে জেগে উঠতে দ্বিধাবোধ করতো না।

কিন্তু যদি সাথে থাকতো, দিনশেষে এই অকর্মার ঢেঁকির হাতে প্রায়ই মার খেয়ে পরের দিন সকালে আসতো কাজ করতে। কেউ কেউ আবার স্ত্রীর কাছে চাহিবামাত্র সকল জিনিসের যোগান দিতে ব্যর্থ হলে মেরেধরে চলে যেত। কোনো জবাবদিহিতা নেই, পিছুটান নেই। একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল নিম্নবিত্ত বলেই হয়তো এরা এমন। এখন বুঝি, যারা মনুষ্যত্বহীন, তারা সমাজের যে স্তরেই থাকুক না কেন, তারা এমনই হয় ।আর প্রতিটা স্তরেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয় মা। মনে আছে, কলেজে পড়ার সময় একজন কাজের মাসিকে বলেছিলাম, সন্তান কি তোমার একার? ঐ লোকের কোনো দায় নেই? দাও সন্তানকে ঐ লোকের কাছে, পালুক, তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল!

আমার মা তখন আমাকে বলেছিল, না রে মা, একজন মা কখনোই তার সন্তানকে দিয়ে দিতে বা ছেড়ে থাকতে পারবে না। একটা বাবা পারে! জন্ম দিতে হয় না বলেই হয়তো পারে! তবে এতো পাষণ্ড কোনো সভ্য মানুষ হয় না। তখন মায়ের কথায় বলেছিলাম তাহলে আর কী, ঐ বদলোকটা নোংরামি করে বেড়াক, আর সে বাচ্চাকে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে শেষ হয়ে যাক। অথচ এই আমিই এখন উপলব্ধি করতে পারছি, আমার মায়ের কথাটা কতোটা সত্যি, যখন আমি নিজে একজন মা। মা হওয়ার আগে আসলেই বোঝা যায় না সন্তান কী জিনিস!

এখন রাস্তায় একটা ভিক্ষুককেও যখন দেখি কাঁধে বাচ্চা চাপিয়ে ভিক্ষা করছে, তখন আর অন্যদের মতো মুখ দিয়ে বেরোয় না কাঁধে বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করছে সিমপ্যাথি আদায়ের জন্য। মনে হয় কতোটা অসহায় হলে এভাবে পথে নেমেছে। তবুও তো সন্তানকে অবহেলা করেনি। একটা মায়ের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তার সন্তান। মানুষ যেমন শখের বসে নিজের শরীর থেকে কোনো অঙ্গ বাদ দেয়ার কথা কল্পনাও করতে পারে না, তেমনি একটা মাও তার জীবন থেকে তার সন্তানকে বাদ দেয়ার কথা ভাবতে পারে না। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই হোক, আর গৃহকর্মীই হোক।

বিধাতা সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে মাতৃত্ব বণ্টনে অসমতা করেননি। কিন্তু পিতৃত্বটা মনুষ্যত্বের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। একটা বিড়াল, কুকুরও যখন মা হয়, সন্তানকে ছেড়ে যেতে পারে না। সেও পরম যত্নে সন্তানকে আগলে রাখে। অথচ সন্তানের প্রতি তার পুরুষসঙ্গীর কিন্তু একবিন্দু দায়ও থাকে না। নারী পশুটি যখন নিজেকে আর সন্তানকে টিকিয়ে রাখতে প্রাণপন লড়াই করে, পুরুষটি তখন বিনোদনের আশায় নতুন নতুন সঙ্গী অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকে।

তেমনি কিছু পুরুষ, নামে হয়তো মানুষ, কিন্তু আচরণে তাদের সাথে পশুর আচরণের একটা দিকেও পার্থক্য খুঁজে বের করতে পারি না। অবশ্য পশুকে তো বিধাতা সেই বোধশক্তি দেননি, যেই বোধশক্তি মানুষকে দিয়েছেন। কিন্তু সেই বোধ থাকার পরও যারা পশুর মতো আচরণ করে, তাদের পশু বললে তো পক্ষান্তরে পশুকেই অপমান করা হয়। প্রকৃত অর্থে এরা তো পশুর চেয়েও অধম। এরা হয়তো ভালবাসে, সজ্ঞানে বিয়ে করেই ক্ষ্যান্ত দেয় না, সাথে সাথে এদের সন্তানও চাই, সেটা ভালবাসার বাণী শুনিয়ে হোক, আর জবরদস্তিতেই হোক।

আমাদের দেশে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে সচেতন আর অচেতন উভয় প্রকার নারীর মতামতের মূল্য খুব একটা থাকে না যতই সে জরায়ুর মালিক হোক। সম্পর্কের প্রতি কোনো প্রকার শ্রদ্ধা, ভালবাসা, মায়া না থাকলেও মাতৃত্বকে একটা মেয়ের জীবনে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য এরা ব্যবহার করে। পানিশমেন্ট স্বরূপ বিবেচনা করে বলেই স্বেচ্ছায় নিজের সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব ত্যাগ করতে কুন্ঠাবোধ করে না। পশুর মতো নতুন বিনোদন লাভে সচেষ্ট হয়। তার মুহূর্তের এনজয়মেন্ট হয়তো তার জীবনে মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এর ফলটাকেই যখন কোনো মেয়ে নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়েও এচিভমেন্ট ভেবে নিয়ে বাঁচে, তখন এধরনের স্বার্থপর পুরুষের হিসাব মিলে না। তখন তারা সেই মা’টিকেই হেয় করতে উঠেপড়ে লাগে।

পরিবার, সমাজ, আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ ঘটিয়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে একের পর এক কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। অথচ স্ত্রী, সন্তান কেউ তার জীবনে তার অজ্ঞানে উড়ে এসে জুড়ে বসেতে চায়নি, তার সজ্ঞানে তাদের আসার পিছনে তার নিজস্ব অবদানের ফলে এসেছে। অবদান মনে করতে না পারলেও এর পিছনে তার দায়টা অবশ্যই তাকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার। কিন্তু কোথাও তো চোখে পড়ে না অবিসংবাদী পিতৃত্বের জবাবদিহিতা। দেখি জবাবদিহিতা শুধু মায়ের, দায়বদ্ধতাও শুধু তার একার, মাতৃত্বের। পরিবার,সমাজ,আইন চোখে ঠুলি পড়ে জিতিয়ে দিক এধরনের পিতৃত্বকে আর হেনস্থা করুক মাতৃত্বকে।

মাঝে মাঝে মনে হয়—
পশুর চেয়ে অধম হওয়া যদি জিতে যাওয়া হয়,
তবে হেরে যাও মেয়ে পাশবিকতার কাছে,
জিতে যাক মনুষ্যত্ব তোমার মানবিকতার ছাঁচে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.