শেষপর্যন্ত ছাড়পত্র পায়নি টিপাইমুখ প্রকল্প

tipaimukh-damউইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেয়নি দেশটির বনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি। ছয় সদস্যের কমিটি প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কমিটির সাস্প্রতিককালের বৈঠকে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের ৭৮ লাখ গাছ কাটা পড়বে, ২৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি বনাঞ্চল ধ্বংস হবে, যা ভারতের আগের মোট ৪৯৭ টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে ধ্বংস হওয়া বনাঞ্চলের ২০ গুণ বেশি। এতে ওই এলাকার বিপুল বন্য প্রাণী বসবাসের জায়গা হারাবে। একই সঙ্গে টিপাইমুখ এলাকায় বসবাসকারী ১২টি গ্রামের ৫৫৭ আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদ হবে। কমিটি পরিবেশ ও বন ধ্বংসকারী বড় ধরনের প্রকল্প না নিয়ে ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে।

গত শুক্রবার কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়। ১১ ও ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় ছয়টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন টিপাইমুখ প্রকল্প ও তিন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দিবাং প্রকল্প অনুমোদন করেনি কমিটি। এই দুটি প্রকল্পই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত ছিল।

টিপাইমুখ প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে উপদেষ্টা কমিটির সভায় বলা হয়, ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করতে গিয়ে কমবেশি গাছ কাটা হয়ে থাকে। কিন্তু একটি প্রকল্পের জন্য গড়ে যে পরিমাণে গাছ কাটা হয়, টিপাইমুখের জন্য তার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি গাছ কাটা পড়বে।

ভারতের বনবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এন পি টোডারিয়া, বন বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার শ্রীরমন কান্তি মিশ্র, এম এস নেগি, এ কে শ্রীবাস্তবা ও জুডা সেকার।

এর আগে ২০০৮ সালের মে মাসে ভারতের পরিবেশ বিভাগ থেকে টিপাইমুখ প্রকল্পকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়। টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল মণিপুর রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন (এনএইচপিসি), সুটলেজ বিদ্যুৎ নিঘম লি. (এসজেভিএনএল) এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি স্থাপনের ব্যাপারে চুক্তি করে। পরে ২০১১ সালের ২২ অক্টোবর চুক্তিটি নবায়ন হয়।

ভারতের পরিবেশ বিভাগের ছাড়পত্র পাওয়ার পর থেকে এই প্রকল্পকে দুই দেশের পরিবেশবাদীরা পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিধ্বংসী হিসেবে চিহ্নিত করে আন্দোলন করে আসছিলেন।

শেয়ার করুন: