মেরীর ভার্জিন বার্থ— প্রাচীন পুরুষ মানস

শেখ তাসলিমা মুন:

যীশুর জন্ম নিয়ে ধোঁয়াশা আজও কাটেনি। একটি ধোঁয়াশার উপর যার জন্ম তাকে ‘ঈশ্বর পুত্র’ করা এবং প্রতিষ্ঠিত করায় কোনো সমস্যা হয়নি। ধর্মের শক্তি এতো বেশি।

যীশুর জন্ম নিয়ে এক পক্ষ বলেছেন, মেরীর গর্ভে জোসেফের বীর্যের মাধ্যমে যীশুর জন্ম ঘটান স্বয়ং ঈশ্বর। এমনকি এটি জোসেফের নিজেরই অজানা থাকে। যার জন্য জোসেফ তার বাগদত্তা মেরী অন্তঃস্বত্বা জানার পর মেরীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। তিনি মেরীকে অবিশ্বাস করেন। তখন ঈশ্বর জোসেফকে স্বপ্নের মাধ্যমে দূত পাঠিয়ে বিষয়টি অবহিত করান যে, পৃথিবীকে তিনি একজন মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটাচ্ছেন তিনি যেন মেরীকে বিবাহ করেন। স্বয়ং ঈশ্বর এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে জোসেফের কাছে মেরীর কলঙ্ক ঘুচানো মর্ত্যের কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। যেমন আজও মেরীর কলঙ্ক অনেকের কাছে ঘোচেনি।

অনেকের মতে, মেরী ছিল এক ভ্রষ্ট চরিত্রের মেয়ে।

ওদিকে মেরী নিজেও নিজেকে গর্ভবতী দেখে বিচলিত অনুভব করেন। সমাজ দ্বারাও পতিত হোন।

Virgin birth প্রসঙ্গে যা জানা যায়, ঈশ্বর মেরীর কাছে দেবদূত পাঠান।

Luke 34 And Mary said to the angel, “How will this be since I am a virgin?” \

দেবদূত মেরীকে আশ্বস্ত করেন Luke 37 For nothing will be impossible with God.”

Luke 1:35-38 says that the angel Gabriel visited her beforehand and told her that “the Holy Spirit will come upon you, and the power of the Most High will overshadow you. therefore the child to be born will be called holy—the Son of God. ”

এই গ্রুপ মনে করেন মেরীর গর্ভে বীর্য নয়, হলি স্পিরিটের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করানো হয়। তারা মনে করেন, যৌন মিলনের প্রেক্ষিতে যীশুর জন্ম হয়নি। যীশুর জন্মের ক্ষেত্রে যৌনমিলনকে তাঁরা ‘অপবিত্র’ মনে করে যীশুর জন্ম হলি স্পিরিটের মাধ্যমে হয়েছে বলে সুসমাচার বা শুভবার্তায় লেখেন।

এই শুভবার্তা লিখিয়েরা এ জন্মকথা লিখেছেন যীশুর জন্মের বহুপরে। ম্যাথিউ, লুক, জন, মার্ক সেইন্ট পল প্রমুখরা যীশুর জন্মকথা লিখে গেছেন। এঁদের ভেতর ম্যাথিউ এবং লুক virgin birth বিষয়ের প্রবক্তা।

যৌনমিলন বিষয়েও দেখা যায় দু’ধরনের মত। কেউ কেউ মনে করেন, জোসেফের সাথে মা মেরীর যৌনমিলন ঘটেছিল। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন যৌন মিলন নয়, জোসেফের বীর্য থেকে যীশুর জন্মগ্রহণ সম্ভব করান স্বয়ং ঈশ্বর। এ জন্ম সম্পূর্ণ যৌনমিলন ছাড়া।

তবে দেখা যায়, ‘ভার্জিন বার্থ’ বিষয়টি জনমনে সবচাইতে জনপ্রিয়তা পায়। অর্থাৎ যীশু যেহেতু ঈশ্বরপুত্র তার জন্ম হতে হবে সাধারণ প্রক্রিয়ার বাইরে। যৌন মিলন সাধারণ জনগণের বলে গসপেল বা সুসমাচার লেখকরা মনে করেন। মহান যীশু ঈশ্বরপুত্র, তাঁর জন্ম কেবল ভার্জিনের মাধ্যমেই নয়, সঙ্গম এবং সঙ্গম ছাড়া হতে হবে। ভার্জিনিটির বিষয়টির গুরুত্ব মনে হয় সবচাইতে ম্যাথিউ এবং লুকই বেশি বুঝতে পেরেছিলেন।

ঈশ্বরপুত্র যিনি তাঁর জন্ম সঙ্গম এবং বীর্য থেকে হতে পারে না। তাঁর জন্ম হবে অসাধারণ প্রক্রিয়ায়। বীর্য ছাড়া, সঙ্গম ছাড়া কিন্তু মেরী এবং মেরীর ওম্ব ছাড়া নয়। বিষয়টি ভেবে দেখার মতো।

ঈশ্বরের কিন্তু মেরীকে দরকার হয়েছে। মেরীর গর্ভ দরকার হয়েছে। মেরীর গর্ভে নয় মাস যীশুকে বড় হতে হয়েছে। এবং তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। একেবারে একটি নধর বাচ্চা আকাশ থেকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। ঈশ্বরের অনেক মিরাকেলে এবং দুর্বলতার রহস্য এভাবেই বুঝতে পারা যায় না।

তবে ঈশ্বর স্বয়ং মেরীকে একটি বিশাল পরীক্ষার ভেতর ফেলে দিয়ে নিজেরাই বিশাল পরীক্ষার ভেতর পড়ে গেছেন। মেরী অবিবাহিত। সেটাই যথেষ্ট নয়, যীশুর জন্মের জন্য দরকার হয়েছে একজন ভার্জিন। যার যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি। একজন নারীর ভার্জিন ওম্ব যেখানে বীর্যপাত ঘটেনি। ঈশ্বরের পুরুষ সন্তানদের এ নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। ইতিহাস ঘেঁটে ধর্মীয় মতানুসারীরাই এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি। ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট এবং ইসলাম ধর্মের নবী ঈশা আঃ এর জন্মকথা, সবখানে এ নিয়ে প্রচুর ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। যার কেন্দ্রটি মেরী এবং মেরীর ভার্জিনিটি। নারীর ভার্জিনিটি কতোটা দরকারি সেটি এই অনিশ্চিত পুরুষগোষ্ঠীর অনিশ্চিয়তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।

খেয়াল করার বিষয়, মেরী এখানে উপলক্ষ্য মাত্র। যীশুর জন্মটা দরকারি। একজন যীশুকে জন্মাতেই হবে। ঈশ্বর পরম ক্ষমতাশালী। তাঁকে আশ্রয় করতে হচ্ছে জোসেফের। জোসেফের পরিচয় দরকার। তিনি পুরুষ। মেরীর গর্ভে জন্মাবেন এক মহাপুরুষ যিনি ‘পুরুষ’ পৃথিবীর কল্যাণের জন্য আবির্ভূত হবেন। তার জন্য তাঁদেরকে মেরীকে সিলেক্ট করতেই হচ্ছে। যীশুর জন্ম মৃত্যুর বহুপরে যে পুরুষেরা সে ইতিহাস লিখছেন তাঁরা মেরীর ভার্জিনিটির বিষয়ে সিদ্ধন্তে আসতে পারছেননা। আজও পারেননি।

তবে এটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, ঈশ্বরপুত্রের মা মেরীকে ভার্জিন থাকতে হবে। ‘ভার্জিন’ থাকাই সমীচীন।

আর তারও হাজার হাজার বছর পর, ‘ঈশ্বরপুত্র’ না হলেও ‘পুরুষতন্ত্রের’ পুত্র জন্মদায়িনীদের ‘ভার্জিন’ থাকার এ মানস, এ প্রয়োজনীয়তা যে কাকতালীয় কোন বিষয় নয় সেটি বুঝতে খুব বুদ্ধির দরকার হয়না। এখনও পুরুষের দরকার নারীর ভার্জিনিটি। এখনও তাদের দরকার একজন ‘মা মেরী’ বা ‘মরিয়ম’! অনেকটা পথ অতিক্রম করা গেলেও এ স্মৃতি এখনও অনেকের জন্য দগদগে। এখনও অনেক অঞ্চলে বিয়ের রাতে সাদা বেডসিট রক্তাক্ত না হলে নতুন বউকে তালাক দেওয়ার নিয়ম আছে।

নারীর প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে ‘ঈশ্বর পুরুষদের’ অক্ষমতা এবং তার গল্পরচনার এক অসহায় উপাখ্যান যীশুর জন্ম এবং মেরীর ভার্জিনটি।

এ গল্পগুলো তবু কিভাবে বেঁচে থাকে সেটাই বিস্ময়কর। ধর্ম এবং বিশ্বাস বুঝি এমনই এক আফিম। মানুষ কি চমৎকার বুঁদ হয়ে থাকে!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.