ফাহমি ইলা:
গত পরশু থেকে অভিনন্দনের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৫ নারী ফুটবল টিম। ভারতকে হারিয়ে গতকাল তারা সাফ গেমসে চাম্পিয়ন হয়েছে। খুব মনোযোগ দিয়ে ইতিউঁতি খুঁজলাম অন্তত একটি খবর। পেলাম না। বোধ হয় রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী খুব ব্যস্ত ছিলেন। এক টুকরো শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর মতো সময় হয়তো তাদের ছিলো না এই টিনেজ সোনার মেয়েগুলোর জন্য।
ছোটবেলায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে জিতলে ন্যানো সেকেন্ডের মাথায় যখন টিভির নিচে স্ক্রল করে প্রধানমন্ত্রী,রাষ্ট্রপ্রধানের শুভেচ্ছাবার্তা ফুটে উঠতো তখন অবাক হয়ে ভাবতাম-‘এত অল্পসময়ে ওনারা শুভেচ্ছাবার্তা চ্যানেলে জানিয়ে দিলেন কি করে!’ ছোটবেলার শিশুসুলভ প্রশ্ন এখন না করলেও এখন প্রশ্ন আসে-‘এ জয় কি তাদের কানেই পৌঁছায়নি?’
সকালে নাস্তার টেবিলে কলিগকে উচ্ছ্বাসভরে বললাম-‘ জানেন, বাংলাদেশ গতকাল চাম্পিয়ন হয়েছে ফুটবলে।’ তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-‘ফুটবল এত ভালোবাসি আর এই খবর আমার কানে আসলো না! আপনার বোধহয় ভুল হচ্ছে আপা!’ ইচ্ছে করেই নারী শব্দটি উহ্য রেখেছিলাম। এত বড় ফুটবলভক্ত যিনি, তিনি যে পুরুষের ফুটবল খেলার ভক্ত এ বুঝতে আর কথা বাড়াতে হয় না। আমি তবু দীর্ঘশ্বাস আটকে বললাম- ‘ভাই, এ নারী ফুটবল টিম।’ তিনি চোখ খাবার প্লেটে নামিয়ে একগাল কটাক্ষের হাসি ছুড়ে বললেন-‘তাই বলুন!’ দীর্ঘশ্বাস আর আটকে রাখতে পারলাম না।
এদেশে ফুটবলার মানে কাজি সালাউদ্দিন কিংবা মামুনুল, এদেশে ক্রিকেটার মানে মাশরাফি কিংবা সাকিব। অথচ সাবিনা, মারিয়া, সালমাদের নাম আমরা কজন জানি? ফুটবল কিংবা ক্রিকেট বললেইতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরুষের চিত্র!
বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবল টিমের অবস্থা শোচনীয়। পুরুষদের সাফে বাংলাদেশ সর্বশেষ ফাইনাল খেলেছে ২০০৫ সালে। এর পরের পাঁচ আসরের চারটিতেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ভুটান লজ্জার পর গত এক বছরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে মামুনুলরা। তারপরেও ফুটবলে তারা তারকা। আমাদের মারিয়া মান্ডারা এক অজপাড়াগাঁ থেকে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সাথে যুদ্ধ করে এতদূর এসে শিরোপা জিতলেও তারা থাকবে প্রদীপের উজ্জ্বল আলোটুকুর বাইরের অন্ধকারে। আমরা যদিওবা তাদের নাম জানবো, কিন্তু বিজয়ীর চেহারাটুকু চিনব না।
ফুটবলার/ক্রিকেটার মেয়েগুলোর জন্য বাজেট খুব সীমিত। পুরষ্কারস্বরুপ এরা বাড়িগাড়ি দূরের ব্যাপার, প্রাপ্য অর্থটুকুও পায় না। এদের জন্য বরাদ্দ প্রাইজমানির অংকটা পুরুষ ফুটবলার/ক্রিকেটারের প্রাইজমানির পাশে বড্ড ছোট। কেননা এরা জিতলেও নারী, ওরা পদে পদে জিতলে/হারলেও পুরুষ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মব্যস্ততায় সময় হয়নি ক্ষুদে ফুটবলারদের অভিনন্দন জানাবার কিন্তু শিরোপাটা ওরা ঠিকই উৎসর্গ করেছে তাকেই। সোনার ছেলেদের দিকে আশির্বাদের এক হাত বাড়িয়ে দিলে বাকি খালি হাতটি সোনার মেয়েদের দিকে বাড়িয়ে দেয়া যায় না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? কেননা এরা দেশের সম্মান বাড়াচ্ছে বৈ কমাচ্ছে না। ওদের প্রতি নজর বাড়ালে ওরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। ওদের প্রতি যত্নবান হোন।