বহ্নি শিখা:
রাত্রি রাতেই সব গুছিয়ে নেয়, মেয়ের খাবার, ডায়াপার, টিস্যু। বরের জন্যও টুকটাক খাবার কিছু নেয় ব্যাগে, কয় ঘণ্টা লাগবে জানে না সঠিক। সিস্টার বলেছে, চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগতে পারে।
অনেক বুঝানোর পরও শাহেদ মানলোই না। সে কোনো রিস্ক নিতে রাজি নয়। তার দেড় বছরের একমাত্র মেয়ে এতো তাড়াতাড়ি তাদের ভুলের জন্য, সামান্য পরিমাণ হলেও অবহেলিত হবে…তা সে সহ্য করতে পারবে না। তার মেয়ে ফুলের মতো বড় হবে। অন্তত আরো চার-পাঁচ বছর সে কোনো সন্তান আশা করে না, চায় না।
গভীর রাতে, রাত্রি’র খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করতে থাকে। খুব সাবধানে মেয়েকে হাত থেকে রেখে, রান্নাঘরে যায়।
তলপেটে হাত দিয়ে কল্পিত বাবুটিকে আদর করে,
-খিদে লেগেছে তোর? শেষ খাবারে কী খাবি তুই? কী খেতে চাস? আগামীকাল থেকে আমার আর যখন-তখন খিদে লাগবে না, তুই থাকবি না।
রাত্রি আপেলে কামড় দেয়, তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে গরম জল ঝরে পড়ে।
রাত্রি ভোরে উঠে বিরানি রান্না করে নেয়, সে প্রতি অনুষ্ঠানে বিরানি রাঁধতে ভালোবাসে।
এটাও তো একটি অনুষ্ঠান।
সমস্যা, দু:শ্চিন্তা সব শেষ হয়ে যাবে আজ। একটা জীবন হত্যা করে, বাসায় এসে ওভেনে গরম করে বিরানি খাবে তারা। সে তাড়াতাড়ি কয়টা ডিম সিদ্ধ করে নেয়, আর সালাদ কেটে ফ্রিজে রাখে। অনুষ্ঠান অনুষ্ঠানের মতোই হোক!
সে খালি পেটে পানি পান করে শুধু। আজ কিছু খেয়ে যেতে বার বার করে বারণ করে দিয়েছে নার্স।
এক গ্লাস পানি পান করার দশ মিনিটের ভেতর, বাথরুমে দৌড়ে যায় সে। এক গ্লাসের জায়গায়, মনে হয় দুই-তিন গ্লাস পানি হড়হড় করে বের হয়ে এলো, তাও কিছুটা তিতকুটে টকটক স্বাদের। এটাই হয়তো আজ শেষ বমি। তারপর তো আর কয় বছর বমি করা লাগবে না।
অত্যাধুনিক হসপিটালটাতে বাচ্চা নিয়ে যাবার নিয়ম নেই। তাই তারা বাপ-মেয়ে পাশেই পার্ক আছে, ওখানে পিকনিক মানাতে চলে যায়।
আর রাত্রি তার বৈধ সন্তানের অবৈধ হত্যায় নামে!
নার্স জানতে চায়,
-ভ্রুণটা কি সাথে নিয়ে যাবে? নাকি আমরা ফেলে দেবো?
-তোমাদের যা ইচ্ছে তা করো। পেটের ভেতর আছে, তাতে কারও মমতা নেই, কাঁটাছেঁড়া ওটা দিয়ে কী করবো?
রাত্রি স্পেশাল বেডে শুয়ে পড়ে। নার্স ইঞ্জেকশন দিয়ে, কিছুক্ষণ পর তার কাজ শুরু করে। কিছু দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে কিছু রক্তাক্ত মাংস টুকরো। নিচে রাখা বালতিতে তা ফেলে।
মাংসের টুকরোর সাথে সাথে রাত্রি’র হৃদয়ও রক্তাক্ত টুকরো হতে থাকে। আর চোখ দিয়ে নি:শব্দে জল গড়িয়ে পড়ে, মুখের দুই পাশে….।
তার এক সন্তান বাপের বুকে খেলছে, তার অযত্নের চিন্তায় বাবা অস্থির। আর আরেক সন্তান ডাস্টবিনে পড়ে থাকবে, কাক কিংবা কুকুরের খাবারে পরিণত হবে!
কী জানি, হয়তো আজ বা কাল, পথ চলতে তা রাত্রি কিংবা শাহেদের পায়ের নিচেও পড়তে পারে!!