উদয়ের পথে শুনি কার বাণী …

আসমা খুশবু:

রেঞ্জ রোভার গাড়ির বদলে এম্বুলেন্স! নড়াইলের ডায়াবেটিক হাসপাতালে একজন খেলোয়ারের উপহার। নাকি বলবো একজন মানুষ মাশরাফির উপহার! আমাদের এমন একজন খেলোয়াড় আছে, ভাবতে গর্ব হয়, চোখের কোণেও কি একটু জল জমে! নাকি এ আমারই পোড়া চোখে হয় শুধু, এই বিদেশ বিভুঁইয়ে একা বসে বসে! জানি না। তবে এতো এতো হতাশার মাঝেও আজকাল আলোর স্বপ্ন দেখি।

একজন ম্যাজিস্ট্রেট ‘বানসুরি এম ইউসুফ’ যখন শুধু নিজের সততা আর প্রপার পেশাদারিত্ব দিয়ে পুরো এয়ারপোর্টের চেহারা বদলে দিতে পারেন, সেখানেও আশার আলো দেখা যায় বৈকি! এয়ারপোর্টে নেমে খুব স্মুদলি বের হয়ে যাওয়া একজন প্রবাসীর কাছে কতোটুকু প্রশান্তির, তা শুধু আমরা প্রবাসীরাই জানি।

পুলিশ অফিসার মাশরুফ হোসাইন, মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে কারাটে শেখায় উদ্বুদ্ধ করছেন। সাথে আরও কত রকমের পুলিশি সহযোগিতা যে প্রতিদিন করছেন সাধারণ মানুষকে, তার ইয়ত্তা নেই।

চিটাগং মেডিকেলে রোগীদের সাহায্যকারী সিএনজি চালক নাসেরের কথা আমরা পত্রিকার পাতায় পড়েছি।
পুলিশ কনস্টেবল শের আলীকে দেখেছি অন্যের আহত কন্যাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যেতে।
এ বছর পাহাড় ধসে মারা যাওয়া ইয়াং আর্মি ক্যাপ্টেন তানভীরের কথাও নিশ্চয়ই আমরা ভুলিনি? পাহাড় ধসে আদিবাসী মানুষগুলোকে বাঁচাতে নিজের তাজা প্রাণটি যিনি বিসর্জন দিয়েছেন!

ডঃ কাজল কান্তি চৌধুরী, পনের বছর ধরে ময়মনসিংহে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন পরিষ্কার করে আসছেন। তার নাম ক’জনে জানে!

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটি যখন রাস্তায় সন্তান জন্ম দিতে গিয়েছিল, তার দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন পুলিশের এএসআই পল্টু বড়ুয়া।
এমনি মহৎ মানুষে আমাদের চারপাশটা ধীরে ধীরে ভরে উঠছে। যখন হতাশ হই, এই দেশে কিচ্ছু সম্ভব না বলে, তখন আসলে এই মানুষগুলোর কথা ভুলে যাই, ভুলে যাই নিজের দায়িত্ববোধের কথা। একজন ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা একজন পুলিশ অফিসারের একার পক্ষে একটা গোটা সমাজ বদলে দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? যদি না সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি মানুষ এগিয়ে আসে?

ক্লাস টু এর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় এদেশে! বুঝলাম সংশ্লিষ্টরা দায়ী, কিন্তু ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে বাড়িতে ছেলেমেয়েকে দিচ্ছে যে বাবা মা, তারা! কিভাবে সম্ভব একটি পাঁচ/ ছয় বছরের শিশুকে অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে শেখানো! যে প্রজন্ম আপনি নিজের হাতে তৈরি করছেন, সেই প্রজন্মের কাছে আপনি কী প্রত্যাশা করতে পারেন? শুধু শিক্ষামন্ত্রী একা কী করবেন, দুর্নীতি যখন নিজের ঘরের ভেতরে!

দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ যখন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ঔদ্ধত্বের জবাব দিতে চাই’, তখন আশা জাগে। কতটুকু পারবেন জানি না, কিন্তু এই সাহসী উচ্চারণ নিঃসন্দেহে আশার আলো দেখায়।

একজন ডঃ কাজল কান্তি, কিংবা এএসআই পল্টু বড়ুয়া নীরবে যে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের জন্য, তা হয়তো সবাই পারে না, পারবে না, কিন্তু করতে কতক্ষণ! এ সমাজ বদলাবেই। এ আশা এখন বুকের মধ্যে লালন করি।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.