ভেকধারী মুক্তমনা এবং শফি হুজুর গ্যাং, একই গোয়ালের গরু

অালহাজ্ব মুফতি অাবদুল্লাহ অাল মাসুদ:

অামি চিরদিন নারী অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার, এমনকি অামার মোল্লাযুগেও। যিনি অামাকে গর্ভে ধারণ করেছেন এবং দুধপান করিয়েছেন তিনি একজন নারী, যিনি অামার জন্য পরম ভালোবেসে পিঠা বানিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন তিনিও নারী (অামার শাশুড়ি), যদিও ধর্মের কারণে এখন সম্পর্কগুলি ঝাপসা হয়ে গেছে!

অারো একজন নারী, যে শুধুমাত্র ধর্মের কারণ ছাড়া অামার সাথে কোনোদিন বাজে অাচরণ করেনি। অামি ইমাম থাকাবস্থায় অামার মহল্লার কেউ নারী নির্যাতন করলে তাকে বিচারের সম্মুখীন করতাম। অামার সাবেক কর্মস্থল (অাল-অামিন জামে মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্স) এর সম্মানিত সেক্রেটারি ছিলেন অালহাজ্ব অাব্বাস উদ্দিন, তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা যুবলীগের সভাপতি। অামাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। কোনো নারী যখনি নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে অাসতো, তখনি অাব্বাস ভাইয়ের অফিসে সে নারীকে নিয়ে গিয়ে বিচার চাইতাম, ফলাফল – তাৎক্ষণিক তলব এবং বিচার। সর্বশেষে নির্যাতনকারী পুরুষ অামার হাতে হাত রেখে তওবা করতো, অার কোনোদিন বউ পেটাবে না।

অাব্বাস ভাইয়ের একদল ক্যাডার বাহিনী অাছে, যারা ভাইয়ের কথায় ওঠে এবং বসে, কিন্তু অাব্বাস ভাই হুজুরের কথায় উঠতেন এবং বসতেন। (অামরা হজ্বও করেছি একসাথে।) এটাকে কাজে লাগিয়ে অামি পশ্চিম মানিকদী এলাকায় নারী নির্যাতন বন্ধ করার সুযোগ পেয়েছি।

অামার স্ত্রীও ছিল নারী নির্যাতন বিরোধী, অবশ্য এটা তার বরের (স্বামী শব্দটায় অামার অরুচি অাছে) শিক্ষা। তার পারিবারিক শিক্ষা ছিল – স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত, কিন্তু অামি তাকে শিখিয়েছিলাম – “তুমি এবং অামি সমান, তোমাকে একটি চড় মারলে তুমিও অামাকে একটি চড় মারবে!”

জীবনে অনেক জন্তু দেখেছি অামি। অাল্লামা অাহমদ শফি, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমি, মুফতি অাবদুর রহমান, মুফতি ইজহারুল ইসলাম, মুফতি মনসুরুল হক, ক্বারি হাবিবুল্লাহ বেলালী, মাওলানা মামুন মহল্লী, মুফতি বশির, মাওলানা ইউসুফসহ অনেক জন্তু দেখেছি জীবনে। এই জন্তুরা সবাই বউ পেটানোয় চ্যাম্পিয়ন। এদের মধ্যে কেউ বিখ্যাত, কেউ বা অখ্যাত।

অামি জন্তুদের সাথে বিতর্ক করতাম নারী অধিকার নিয়ে, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে, ধর্মের নামে সহিংসতা নিয়ে। জন্তুরা সবসময় ‘বিচার মানি তালগাছ অামার’ টাইপের হয়ে থাকে। জন্তুদের সাথে তর্কেও পেরে ওঠা কঠিন। কারণ, যখনই জন্তু অামাকে প্রশ্ন করে “অাপনি কি নবীজীকে মানেন না?” – তখন নিশ্চুপ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। নবী এমনি এক প্রতিমূর্তি, যাকে ‘মানি না’ বললেই সবকিছু অশুদ্ধ এবং অসিদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং লাস্ট ফলাফল দাঁড়ায় তর্কে পরাজয়!

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম সত্য কথাটা প্রকাশ করার, লুকোনো সত্য তুলে ধরার। তাতে যদি বলতে হয় নবীকে মানি না, তবে সেটাই বলবো। স্ত্রীকে বোঝালাম, বুঝলো না! মাকে বোঝালাম, বুঝলেন না তিনি, যেহেতু তিনি নিজেও একজন অালেমের স্ত্রী এবং দুজন অালেমের মা!
শাশুড়িও বুঝলেন না, কারণ তিনি নিজেও পীর সাহেবের কন্যা।

অামি বুঝতে পারছিলাম, অাসন্ন পরিস্থিতি অামার জন্য কী হতে যাচ্ছে, যেহেতু অামি সত্যপ্রকাশে অাপোষহীনতার পথেই হাঁটছিলাম।

অবশেষে দীর্ঘ বোঝাপড়া, নিজের সাথে দীর্ঘ লড়াই, বিবেকের সাথে তুমুল বাকবিতণ্ডা চলতে লাগলো। হেরে গেলাম অামি, জিতে গেল বিবেক। জিতে গেল নৈতিকতার দায়বদ্ধতা।

অামি দেখতে পাচ্ছিলাম, জন্তুগুলি ফোঁস ফোঁস করছে। তারা যেভাবে স্ত্রীকে পেটায়, তারা যেভাবে মানুষকে হত্যা করে, ঠিক তারা সেই হিংস্র রূপটিই দেখাতে শুরু করলো অামাকে।

জন্তুদের কথা হচ্ছে – মানুষ মরুক সমস্যা নেই, বেঁচে থাকুক ধর্ম। মানুষের ঘরবাড়ি পুড়ুক সমস্যা নেই, বেঁচে থাকুক ধর্ম। নারী ধর্ষণের শিকার হোক সমস্যা নেই, বেঁচে থাকুক ধর্ম।

অনেকে পেরেছে, অামি পারিনি। অনেকে পারে, অামি পারি না।
অামি পারি না – নারী দেখলে ছোঁক ছোঁক করে তাকে বিছানায় নেয়ার জন্য ফন্দি-ফিকির করতে। অামি পারি না, নারীর সাথে রাতে শুয়ে সকালে তাকে ‘মাগী’ বলে অসম্মান করতে।

ইসলাম ধর্মে নাস্তিকের সাথে সংসার করা হারাম হওয়ার কারণে অামার স্ত্রী অামার থেকে অালাদা হয়েছে, পৃথিবীতে ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো কারণে অামাকে অামার স্ত্রী ছেড়ে দেয়ার কোনো কারণ ছিল না।
অামি অাগে যে বন্ধুদের সাথে চলতাম, তারা এখন অামাকে বন্ধু ভাবে না, নাস্তিককে বন্ধু বানানো ইসলামে হারাম।
অাগে যারা অামাকে ভালোবাসতো, তারা এখন ভালোবাসে না, নাস্তিককে ভালোবাসা ইসলামে হারাম। তবুও অনেক মুসুল্লি অামাকে ভালোবাসে, অামার কল্যাণ কামনা করে, যারা অামাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে। অালেমরা মানুষের কাছে ফতোয়া বিলাচ্ছেন, নাস্তিককে মনে মনে ভালোবাসাও জায়েজ নেই!

জন্তুদের সাথে নারীরা চিরকাল অাপোষ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই অাপোষকামিতা কি নারীকে পিছিয়ে দিচ্ছে না যুগ যুগ এবং শতাব্দীকাল ধরে? এই অাপোষকামিতা কি নারীর ব্যক্তিমননের মনুষ্যত্বের সাথে প্রতারণা নয়?
জন্তুর সাথে অাপোষ করতে হবে কেন? পশুর ব্যাপারে নিরব থাকতে হবে কেন?
পাশবিকতা লুকোতে হবে কেন?

পুরুষ এমন কি মর্যাদায় অারোহণ করলো যে তাকে ছোঁয়া যাবে না? পুরুষ এমন কি মর্যাদায় অারোহণ করলো যে তার কৌমার্য কখনো বিনষ্ট হয় না? নারীর সাথে রাতে শুয়ে সকালে তাকে ‘পতিতা’ বললে পুরুষ কেন ‘পতিত’ নয়?
নারী বেশ্যা হলে পুরুষ কেন ‘বেশ্য’ নয়?
লুচ্চাদের নিয়মে পৃথিবী চলতে পারে না।
জন্তুদের পাশবিকতা এবার থামাতেই হবে।

মুক্তচিন্তকরা কখনো নারীকে অসম্মান করে না, যে অসম্মান করে সে কখনো মুক্তচিন্তক নয়, সে জন্তু দলেরই কেউ।
অামি বিস্মিত এবং হতভম্ব হই তখন, যখন দেখি মুক্তচিন্তকের বেশধারী কেউ নারীর প্রতি মুসলমানের চেয়েও নিকৃষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে, নারীকে মুসলমানের মতো নিকৃষ্ট পদ্ধতিতে অাক্রমণ করে।

এর চেয়েও বেশি হতভম্ব হই তখন, যখন অামাকে ‘হিকমত’ এবং তাকিয়া করতে উপদেশ দেয়া হয়, নারীর প্রতি ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মুক্তমনার ভেকধারীর ব্যাপারে সাফাই গাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অামি দেখছি এখন, অনেক জন্তুই মুক্তমনা কিংবা নাস্তিক সাজ গ্রহণ করে, শুধুমাত্র মাদকসেবা ও বিকৃত যৌনাচারের উদ্দেশে। নারীরা এখনো জাগেনি, নারী এখনো নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে চুপ করে থেকে অারেক নারীর সর্বনাশের পথ উন্মুক্ত করে দেয়!
পৃথিবীর উন্নত দেশে বসবাসকারী এবং মুক্তমনার ব্যানারের নিচে বসেও যখন বলা হয় – “অমুক পুরুষ নারীকে পিটিয়ে ভালোই করেছে!” – তখন অামি অবাক হই। তখন অামি এসব ব্যানারতান্ত্রিক মুক্তমনা অার অাহমদ শফিদের মাঝে কোনো তফাত খুঁজে পাই না।

হে ভগিনী, জেগে ওঠো, জন্তুর সাথে অার অাপোষ নয়। জন্তুর কৃত অপকর্ম অার ঢেকে রাখা নয়। জন্তুরা এভাবেই পার পেয়ে যায়। সমাজ জন্তুকে ভাবে ধোয়া তুলসীপাতা।
হে নারী, এ শুধু তোমারি ব্যর্থতা। অামি শুধুই দর্শক, চেয়ে চেয়ে দেখবো।
তোমার মতো অারেক নারীকে সারারাত খাবলে-খুবলে সকালবেলা তাকে ‘খানকী, ছেনাল, বেশ্যা’ বলে গালি দেবে পুরুষ। অাবারো কাঁদবে অারেকজন নারী, কাঁদবে অারেকজন মাতৃগোষ্ঠীর কেউ।

পৃথিবীর তিনজন মানুষকে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি, এ তিনজনই নারী, এবং পুরুষদের চেয়ে তারা অনেক মহত্তর।
বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল ও তসলিমা নাসরিন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.