ফারজানা নীলা:
খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানিসহ যাবতীয় সকল নারী অবমাননাকর কাজের দায়ভার অবশ্যই পুরুষদের। আজ এসব নিয়ে কথা বলবো না, বলবো সাধারণ ঘরের সাধারণভাবে বেড়ে উঠা নারীদের সাধারণ অথবা অসাধারণ চিন্তা নিয়ে।
পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল মেয়েটি। বাবার ধারণা ছিল মেয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিছু হয়ে যাবে। কিন্তু হুট করে বাবা মারা গেলে মেয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে লাগলো যে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করা কষ্টকর। সুতরাং পরিবারের অন্যরা সিদ্ধান্ত নিলো আপাতত বিয়ে হোক। পরে দেখা যাবে পড়াশোনা। এবং দেখা গেল সে এখন শুধুই ইন্টারমিডিয়েট পাশ এবং ঘরকন্নাই তার একমাত্র কাজ।
এখানে আমি দোষ দিবো মেয়েটিকে। যার সকল সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও শুধুমাত্র আলসেমির কারণে জীবনে কিছুই হতে পারলো না। শুধু আলসেমি নয়, তার কিছু হওয়ার ইচ্ছেও ছিল না। “আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে” এই বোধ এবং জেদ তার ছিল না। বেগম রোকেয়ার আক্ষেপের মতো আমারও আক্ষেপ, মেয়েরা পড়াশোনাকে ভয় পায়, তাই বিয়ে হয়ে গেলে ভাবে যে, পড়াশোনা থেকে তো মুক্তি পেলাম!
মধ্যবিত্ত পরিবারেই বেড়ে উঠা মেয়েটির। গায়ের রঙ কালো বলে ছোটবেলা থেকেই অনেক অপ্রিয় কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু চমকপ্রদ ভাবে মেয়েটি শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় এবং নিজেরই অনুপ্রেরণায় আজ সমাজে দারুণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত। কলেজ থেকেই সবাই তার পড়াশুনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। সে মানেনি। টিউশনি করে অনার্স-মাস্টার্স করে আজ সে একটি এনজিও’র ম্যানেজার।
এই মেয়েটি উপরে উঠতে পেরেছে কেন? কারণ তার অদম্য ইচ্ছে ছিল। জীবনে কারো মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেকে একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার তাগিদ তাঁকে আটকে রাখতে পারে নি। সে প্রমাণ করে দিয়েছে গায়ের রঙ সাদা কাল হওয়া ব্যাপার নয়, পড়াশুনার খরচ পরিবার না দিলেও নিজ চেষ্টায় সেটাও জোগাড় করা যায়। তীব্র মনোবল থাকলে পায়ের শেকল খোলা যায়ই যায়।
আমরা তো জানিই এই সমাজ তোমার আমার অনুকূলে নয়। এ হাজারটা প্রতিবন্ধকতা বানাবে তোমাকে আটকে রাখার জন্য। কিন্তু এগুলো টপকানোর দায় কার? তোমার, আমার। কীভাবে টপকাবো, সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। এখন তুমি যদি নিজের জন্য কিছুই না করে শুধুমাত্র অপরের মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন কাটানোই মূল লক্ষ্য ভাবো, তবে তো তুমি পুরুষের তৈরি সমাজে ঘি ঢালছ।
এটাই বাস্তব যে, কেউ এসে তোমাকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে সকল বাধা উপড়ে ফেলে নিয়ে যাবে না। এগুলো রূপকথায় আর এনিমেশন মুভিতেই শুধু হয়।
তাই বলি কী, পুরুষকে দোষারোপ করার আগে একটু নিজের দিকেও আড়চোখে তাকাবেন। আসলেই কি তুমি চেয়েছিলে জীবনে কিছু হতে, স্বাধীন হতে, বা মুক্ত হতে? যদি চেয়ে থাকো, তাহলে এটাও ভেবে দেখো, এই ইচ্ছে পূরণ করার জন্য কী কী করেছিলে?
কিছুই না করে হাত পা গুটিয়ে বসে শুধু পুরুষজাতির গুষ্টি উদ্ধারে ফলাফল শূন্য। আগে নিজের মধ্যে জেদ ইচ্ছে এবং সাহস জোগাতে হবে। অদম্য সাহস এবং ইচ্ছেই নারীজাতির অবলম্বন –অনুপ্রেরণা- আশ্রয় হওয়া উচিত। এই তিন জিনিস যার আছে, সে থোরাই কেয়ার করে প্রতিবন্ধকতা।