তাহমিনা আমীর:
আমার কোনো সুনির্দ্দিষ্ট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আদর্শ নাই। যে দেশের, পরিবেশের ও মানুষের মঙ্গল করবে, আমি তার দলে।
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক মাস দেশে ছিলাম। বই মেলা, মহল্লায় প্রচুর সময় দিতে পারছি। আমি পাশের বাসায় খাই, আড্ডা দেই, মহল্লার ছেলে-পিলে, চিকিৎসক, ছাত্র, মাস্তান, মৌলভি, মাদ্রাসার ছাত্র – সবার সাথে আড্ডা চলে। এ এক আনন্দের সময়।
এই বাসার একটি ছেলে গুম প্রায় চার বছর। র্যাব তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারপর অস্বীকার। সাথে আরও বহু নিরীহ ছেলে। যাদের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিল না (ভুল ইনফরমেশন ছিল)। সেই বাসায় পরিচয় হয় – গুম হওয়া আরেক ছেলে সোহেলের স্ত্রী নীপার সাথে। সোহেলের বই বাঁধাইয়ের ব্যবসা ছিল। নীপার বয়স বেশি না। হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে, কিন্তু ছোট্ট ছেলেকে রেখে কেমনে কাজ করবে, সেটাও প্রশ্ন। শ্বশুরবাড়ির বৈরিতাও এই সময়। ছেলে নাই, আর্থিক সাহায্য, সম্পত্তি পাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। আমার ছেলের থেকেও ছোট ওর ছেলে। দেখলে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। মাকে শক্ত করে ধরে রাখে।
সন্ধ্যায় মহল্লার ছেলেপিলে, যাদের ফুফু, খালা আমি। তাদেরকে ট্রিট দিতে রেস্তোরায় নিয়ে গেলাম। নীপা আর তার ছেলেকেও জোর করলাম। সে গেল আমার সাথে। মেয়েটার সারাটা জীবন পড়ে আছে অনিশ্চয়তায়। কাউকে বিয়ে করবে? সে পথও বন্ধ। স্বামী যদি ফিরে আসে?
কেউ বলছে – এদের ক্রসফায়ার করা হয়েছে, কেউ বলছে ভারতের কারাগারে আছে। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশের আইন সংস্থার লোক ভারতে কেন তার বন্দী রাখবে? ভারত কি এসেক্স, সারের মতন কোনো কাউনটি আমাদের? বিপক্ষের দলকে যদি সরকার হুমকি মনে করে – ভালো কথা, দেশের জেলে হাজার হাজার আইনি মার প্যাঁচ দিয়ে ছেলেগুলাকে দেশের জেলে রাখতো! অন্তত স্বজনরা জানতো তাদের ছেলে, ভাই, স্বামী কই আছে!
একজনের শূন্যতার, অনিশ্চয়তার দায়ভার পুরা পরিবার বহন করতো না। আজ বিজয়ের দিনে এই গুম আর হত্যার দায় ভাগ সরকারকে দিয়ে খুব খুশি হইতে পারলাম না। হাসিনা এইটা কী করলো?