উইমেন চ্যাপ্টার: একাত্তরের বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরী ওরফে রমা মাসীমা/রমা দিদির সাথে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার সকাল পৌণে ১১টার দিকে গণভবনে এই সৌজন্য সাক্ষাত হয়।
একাত্তরে সংসার-সন্তান সব হারিয়ে একাই মাথা উঁচু করে পথ চলছেন এই জননী সাহসিকা। এই বয়সে এসেও তিনি কারও করুণা চান না, সাহায্য চান না। তবুও প্রধানমন্ত্রী যখন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে রমা চৌধুরী ও একাত্তরে তাঁর অবদানের কথা জেনে তাঁর সাথে দেখা করতে চান, তখনও তিনি ছিলেন নির্বিকার। শুধু এটাই বলেছিলেন যে, ‘আমার চাওয়ার কিছু নেই, দেখা হলে শুধু কষ্টের-যন্ত্রণার কথাগুলো বলতে চাই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে’।
শনিবার সকাল পৌণে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রমা চৌধুরীকে নিয়ে আসার পর প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। সত্তরোর্ধ্ব রমা চৌধুরী (তাঁর ভাষায়) ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা’কে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে তাঁরা কথা বলেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম নিবাসী রমা চৌধুরীর সাথে ছিলেন তাঁর বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন। এই খোকনের কাছেই দীর্ঘ বছর আছেন রমা চৌধুরী।
উইমেন চ্যাপ্টারকে খোকন জানান, প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর লেখা ‘একাত্তরের জননী’ বইটি উপহার দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি কোন সাহায্য চাননি। বরং বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে নিজের লড়াই আর কষ্টের কথা বলতে পেরেই তিনি সন্তুষ্ট। তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর পোপদিয়ায় একটি অনাথ আশ্রম খোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ চেয়েছেন।
এর আগে শনিবার ভোরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছেন রমা চৌধুরী ও আলাউদ্দিন খোকন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল তাদেরকে এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সীমান্ত তালুকদারকে সাথে নিয়ে গণভবনে যান।
১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করা একাত্তরের এই জননী পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার পর দুটো সন্তানকেও হারান অসুখে-অবহেলায়। সংসারও ভেঙ্গে যায় তখন। দ্বিতীয়বার সংসার করতে গিয়ে প্রতারিত হন। সেই সংসারের ছেলেকে তিনি হারান এক সড়ক দুর্ঘটনায়। ছেলেদের কষ্টের কথা ভেবে তিনি এরপর থেকেই জুতা পায়ে দেন না। তাঁর কথা, যে মাটির নিচে ছেলেরা শুয়ে আছে, তাদের বুকের ওপর দিয়ে তিনি কি করে জুতা পায়ে হাঁটবেন? নিজের লেখা বই বিক্রি করেই তাঁর সংসার চলে। তিনি কারও কাছ থেকে কোন সহায়তা নেন না। তবে কেউ যদি তাঁর বই কিনে, তবে সেইটুকু নিতে তাঁর আপত্তি নেই।
জানা গেছে, রমা চৌধুরীর এই দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের কথা জেনে দেশ-বিদেশের অনেকেই এগিয়ে এসেছেন তাঁর বই কেনা এবং একাত্তরের জননী বইটির পুনর্মুদ্রণের ব্যাপারে।