নারী শরীর কি শুধুই মাংসপিণ্ড?

ফাহমি ইলা:

বছর দেড়েক আগের ঘটনা। স্কুল জীবনের এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিলো সেদিন। কলেজ জীবনে বিয়ে হয়ে যাবার পর ও পুরোদস্তুর সংসারী হয়ে গেলো, এদিকে আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে হয়ে গেলাম ব্যস্ত। দীর্ঘ আট বছর পর রূপাকে (ছদ্মনাম) দেখে সেদিন সত্যি একদম চিনিনি! হাসিখুশি দুর্দান্ত হ্যান্ডবল খেলুড়ে ছটফটে সেই মেয়েটার চোখে স্থায়ী বিষন্নতা। ওর কাছ থেকে জানলাম, এখনো সন্তান হয়নি বলে পারিবারিক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে শুনলাম, দীর্ঘ পাঁচ বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবনের কারণেই সন্তান হচ্ছে না বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। সেই সাথে ছোটবেলার রূপাকে দেখেছিলাম অস্বাভাবিক মোটা হয়ে গেছে, সারাক্ষণ মাইগ্রেনের ব্যাথায় ভুগে ভুগে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো না ২৮ বছরের একটি তাজা প্রাণ ওর ভেতরে আছে!

যদিও আমি ডাক্তার নই, কিন্তু সেদিন বন্ধুটিকে দেখার পর জন্মনিয়ন্ত্রণে যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হয়, তা নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে ইচ্ছে হয়েছিলো। এ নিয়ে গত বছর একটা ব্লগপোস্টও লিখেছিলাম। আজ আবার একই লেখা একটু পরিবর্ধন পরিমার্জন করে লিখতে বসেছি।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বাজার কিভাবে নারীকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে তা দেখবার প্রয়াসে এই লেখা যেখানে পরিসংখ্যানিক তথ্য তুলে ধরার সাথে সাথে সত্য ঘটনা তুলে ধরবার চেষ্টা থাকবে।

বিবাহিত জীবনে যৌন সম্পর্ক একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক কাজ। কিন্তু বৈবাহিক জীবনের নানা ঘটন অঘটনও নির্ভর করে এর ওপর। আর সেজন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কমবেশি সকল দম্পত্তিই ব্যবহার করে থাকেন। যে সকল উপকরণ বা যার মাধ্যমে গর্ভসঞ্চারে বাধা প্রদান করা যায়, সেই সব উপকরণ বা মাধ্যমকেই কন্ট্রাসেপ্টিভ টুল বলে। নারী ও পুরুষের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে।

প্রজনন রোধ করতে খ্রিস্টপূর্ব ঊনবিংশ শতাব্দীতে মিশরের নারীরা অ্যাকাসিয়া পাতার সঙ্গে মধু যোগ করে অথবা জীবজন্তুর মল থেকে সাপোজিটরি তৈরি করে জরায়ুতে স্থাপন করতো। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রিসে অলিভ অয়েলের সঙ্গে সিডার তেল মিশিয়ে মলম তৈরি করে তা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য জরায়ুর ভেতর ব্যবহার করতো নারীরা। প্রাচীন ভারতে তালপাতা ও লাল চকের মিশ্রণে একধরনের পাউডার তৈরি করা হতো জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য। এছাড়া তারা পলাশ গাছের বীজ, মধু, ঘি এবং খনিজ লবনের মিশ্রণে পেস্ট তৈরি করে তা জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করতো। মূলত হারবাল উপায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হতো।

মার্গারেট সাঙ্গার নামের এক নারী যিনি পেশায় ছিলেন নার্স, প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বানাবার স্বপ্ন দেখেন। অধিক সন্তান জন্মদানের কারণে মায়ের তিলে তিলে নিঃশেষিত হয়ে মৃত্যু তাকে বেশ নাড়া দেয়। তিনি ১৯১৬ সালে একটি বার্থ কন্ট্রোল ক্লিনিক তৈরি করেন, যার জন্য তাকে এরেস্ট করা হয়। ১৯৫০ সালে গ্রেগরি পিনাস এবং জন রক ‘Planned Parenthood Federation of America’ এর সহযোগিতায় প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রক পিল আবিষ্কার করেন, যা মানুষের কাছে সহজলভ্য হতে শুরু করে ১৯৬০ থেকে।

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় এরপর আবিষ্কৃত হয়েছে আরও ডজন খানেকের বেশি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। বর্তমান জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুলোকে প্রধানত: দুইভাগে ভাগ করা যায়।
1. সনাতন পদ্ধতি

2. আধুনিক পদ্ধতি।

সনাতন পদ্ধতি:
যে পদ্ধতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ঐতিহ্যগতভাবে সমাজে প্রচলিত আছেম সেগুলোকে সনাতন পদ্ধতি বলে। যেমন:
• প্রত্যাহার বা আযল: বীর্য বাইরে ফেলা
• বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো
• নিরাপদকাল মেনে চলা
• নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকা বা আত্মসংযম।

আধুনিক পদ্ধতি:
আধুনিক পদ্ধতিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়।
1. নন-ক্লিনিক্যাল
2. ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি।

নন-ক্লিনিক্যাল: যে পদ্ধতিগুলো অন্যের সাহায্য ছাড়া নারী-পুরুষ নিজেই ব্যবহার করতে পারে, সেগুলোকে নন-ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি বলে। যেমন:
• কনডম (পুরুষের জন্য)
• ডায়াফ্রাম
• সার্ভিক্যাল ক্যাপ বা ফেমক্যাপ
• ওরাল পিল
• ফোম বা জেলী

ক্লিনিক্যাল: যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের জন্য নারী-পুরষকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর সাহায্য নিতে হয়, সেগুলোকে ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি বলে। যেমন: অস্থায়ী পদ্ধতি এবং স্থায়ী পদ্ধতি।

অস্থায়ী পদ্ধতিঃ
• ইনজেকশন
• আই.ইউ.ডি
• নরপ্ল্যান্ট

স্থায়ী পদ্ধতি:
• পুরুষ বন্ধ্যাকরণ- ভ্যাসেকটমী
• নারী বন্ধ্যাকরণ- টিউবেকটমি বা লাইগেশন

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ৩৮ শতাংশ মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। বাকি ৬২ শতাংশের ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি পুরুষ ব্যবহার করে এবং বাকি ৫২ শতাংশে বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নারীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

প্রতিটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে। আসুন, উল্লেখযোগ্য সুবিধা অসুবিধাগুলো একটু দেখি। সেই সাথে ব্যবহারের একটা পরিসংখ্যানিক তথ্যও দেয়া হলো।

কন্ট্রাসেপটিভ পিল: কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা জন্ম বিরতিকরণ পিল তৈরি হয় এসট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরোন নামক দুই ধরনের হরমোন দ্বারা। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন সমন্বিত পিল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ইস্ট্রোজেন সব সময়ই রক্তে লিপিডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যাদের অনেক আগে থেকেই রক্তে লিপিডের পরিমাণ বেশি, জন্ম বিরতিকরণ পিল খাওয়ার আগে তাদের জন্য বাড়তি সচেতনতা জরুরি। বিশেষত যাদের শরীরে জন্মগতভাবেই লিপিডের মাত্রা উচ্চ- তাদের জন্য এইসব পিল একেবারেই নিষিদ্ধ। ইস্ট্রোজেন মায়ের দুধের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে শিশু বুকের দুধ খেতে পায় না।

এর সুবিধা কী? — পিলের সুবিধাগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেযোগ্য হলো, অনাকাংক্ষিত গর্ভধারণ রোধ করে। আর ব্যবহারে সুবিধা হয় ওরাল বা মুখে খাওয়া যায় বলে।

আর অসুবিধা?
• বমি বমি ভাব
• বমি হওয়া
• মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা
• স্তনে ব্যথা
• বিষণ্ণতা
• চুল পড়ে যাওয়া
• কাম শক্তি কমে যাওয়া
• রজঃস্রাবের সময় পেট ব্যথা হওয়া, পেট কামড়ানো
• পায়ের মাংশ পেশিতে যন্ত্রণাদায়ক খিল
• অনিয়মিত রজঃস্রাব
• সাদা স্রাব
• যোনি ও যোনি মুখে ক্যানডিরার আক্রমণ
• ওজন বেড়ে যাওয়া
• চর্বি বেড়ে যাওয়া
• প্যানক্রিয়াটাইটিস
• গলব্লাডার স্টোন
• গ্লাইকোসুরিয়া
• উচ্চ রক্ত চাপ
• রক্তনালিতে রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়া
• জরায়ুতে ফাইব্রয়েড নামক টিউমার হওয়া
• স্তনের ক্যান্সার

পিল খাবার প্রভাবগুলো কী কী:
• মেদ বাড়িয়ে শরীর ভারী ও অসাড় করে দেয়।
• বেশি দিন ধরে খেতে থাকলে একটা পর্যায়ে শরীরে সারাক্ষণ ক্লান্ত অনুভূত হতে পারে।
• প্রতিনিয়ত খাওয়ার প্রভাবে নারীদের জরায়ুর আকার ছোট হয়ে যেতে পারে।
• মাথা ঝিমঝিমানির বড় কারণ নিয়মিত এসব পিল সেবন।
• নিয়মিত ৫ বছরের বেশি সময় খেতে থাকলে পরবর্তীতে নারীর সন্তান ধারণে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
• এসব পিল বেশি বেশি খাওয়ায় মাঝে মাঝে ঘুম থেকে ওঠার পর নারীরা শরীরে চলাফেরার মতো শক্তিও হারিয়ে ফেলে।
• নিয়মিত ও দীর্ঘদিন জন্ম বিরতিকরণ পিল খেলে সার্ভাইকাল ক্যান্সার সহ স্তন ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
• এই জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়ার পর গর্ভধারণে দেরি হতে পারে।
• এইচআইভি/এইডস সহ যৌন সংক্রামক অসুখ প্রতিরোধে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখে না।
পরিসংখ্যান বলছে, এত সমস্যার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর প্রায় বাষট্টি শতাংশ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণে পিল ব্যবহার করে থাকেন!

নরপ্ল্যান্ট: আরেকটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি আছে নরপ্ল্যান্ট। এই পদ্ধতিতে ছোট ছোট নরম চিকন ক্যাপসুল (দেয়াশলাই-এর কাঠির চেয়ে ছোট) নারীদের হাতের কনুইয়ের উপরে ভিতরের দিকে চামড়ার নিচে কেটে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পাঁচ বছরের জন্য যারা সন্তান নিতে চান না তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

এর কি কোনো অসুবিধা আছে? হ্যাঁ, আছে।
• নিয়মিত রজঃস্রাব না হওয়া বা অনেকদিন বন্ধ থাকা।
• ভারী জিনিষ বহন করতে না পারা, হাতে ব্যথা হওয়া।
• রজঃস্রাবের সময় ফ্লো বেশি হতে পারে।
• দুই রজঃস্রাবের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হতে পারে।
• মাথা ব্যথা।
• ওজন বেড়ে যাওয়া।
• মন বিষন্ন থাকা।
• মুখে বা শরীরে মেছতার দাগ থাকলে বেড়ে যেতে পারে এবং মুখে লোম দেখা দিতে পারে।
• লিভারের সমস্যা হতে পারে
• ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও আছে।
• উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন নারী এটা ব্যবহার করতে পারবে না।

এছাড়া তুলনামূলক কম জনপ্রিয় পদ্ধতি ফোম বা জেলীর ব্যবহার, ইনজেকশান, আই ইউ ডি আছে, যেগুলোতেও কমবেশী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।

দেখা যাচ্ছে, নারীর জন্য যতোগুলো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আছে সেগুলোর সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধার পরিমাণ তুলনামুলক অনেক বেশি। সে তুলনায় পুরুষের কনডম ব্যবহার তুলনামূলক অনেক সহজ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং কম ক্ষতিকর। তারপরও কনডম ব্যবহারের সংখ্যা এতো কম কেন? একমাত্র কারণ, সমাজটা পিতৃতান্ত্রিক আবহে ঘেরা। নারীর ওপর সকল কিছু চাপিয়ে দিয়ে বেঁচে যাওয়াটা যেন সহজ।

নারী শরীরকে স্রেফ একটা মাংসখণ্ড মনে করে তার ওপর বিভিন্ন সময় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ডজনখানেক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। যেন শরীরে শুধুমাত্র গর্ভধারণের ক্ষমতা থাকার দায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল দায়িত্বও নারীর। সেখানে ক্যান্সারের মতো ঝুঁকিসহ হাজার ঝুঁকিতেও কিছু আসে যায় না। আর নারী? পুরুষের খুশিতেই তারা খুশি! এজন্য নিজের শরীরকে একখণ্ড মাংসপিণ্ড ভাবতেও দ্বিধা করে না!

এক পুরুষ বন্ধুকে বলতে শুনেছিলাম- ‘আঙ্গুলে মিষ্টি লাগিয়ে তাতে পলিথিন মুড়ে জিহবায় স্বাদ নেয়া, আর কনডম দিয়ে সেক্স করা একই রকম। কোনো মজা নেই! কোনো আরাম নেই!’ শুধুমাত্র পুরুষের এই মজা/আরাম/স্বস্তি/সুখের জন্যই কি নারী শরীর হয়ে যাচ্ছে নাজুক, ভঙ্গুর, অসুস্থ এবং সবশেষে চরমভাবে অবদমিত? আর পুঁজিবাদের এ যুগে বাজার কতটা পুরুষতান্ত্রিক তা জন্মনিয়ন্ত্রণে নারীকেন্দ্রিক পদ্ধতিগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় অনেকখানি।

পুরুষদের বলছি, একটু ভাবুন তো, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে নারীদের প্রতিনিয়ত যেসকল শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে এগুলোর দশভাগের একভাগও আপনাদের ক্ষেত্রে ঘটলে কেমন হতো?

নারী-পুরুষ সবাইকে বলি, একটু এগিয়ে আসুন, সতর্ক ও শ্রদ্ধাশীল হই নিজের প্রতি, নিজের সঙ্গীর প্রতি। প্রতিটা জীবন মূল্যবান, প্রতিটা জীবনের প্রতিটা সময় মুল্যবান। যেকোনো কিছু যা অন্যের জন্য এবং নিজের জন্য ক্ষতিকর, তা ব্যবহার কখনোই কাম্য নয়। নিজের সুখের কথা চিন্তা করে আরেকজনের জীবনকে নষ্ট করে দেয়াও কাম্য নয়!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.