শেখ তাসলিমা মুন:
যখন এথনিক গ্রুপের ভেতর সহিংসতা দেখি, যখন দরিদ্র গ্রুপের ভেতর একে অপরের বিরুদ্ধ আচরণ করতে দেখি, যখন শ্রমিকদের নিজেদের ভেতর কলহ করে দেখি, যখন যে কোন সাপ্রেসড গ্রুপকে দেখবো নিজেদের ক্ষতি করতে লিপ্ত, তখন জানি, এর কোনটাই কাকতালীয় নয়। এটাই শাসক শ্রেণীর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। শোষণের সবচাইতে বড় ফলপ্রসু পদ্ধতি।
দুর্বলকে দুর্বলদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া। তাঁদের ব্যস্ত রাখা, যাতে তারা নিজেদের বিষয়ে, নিজেদের অধিকার বিষয়ে সচেতন না হতে পারে। সোচ্চার হতে না হতে পারে। নিজেদের দীনদশা বিষয়ে অবগত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই নিজ হাতে না নিতে পারে!
যুগ যুগ ধরে, শতাব্দী ধরে নারীকেও নারীর বিরুদ্ধে ব্যস্ত রেখেছে পুরুষতন্ত্র। নারীরা যতো চুলোচুলি করবে, ততো পুরুষতন্ত্রের জন্য সুখবর। সম্মিলিত অধিকার আদায়ে তারা পিছিয়ে পড়ছে দেখে পুরুষতন্ত্রের আনন্দ সবচাইতে বেশি।
নারীরা তাই আজও এক টুকরো সাবান নিয়ে ঘরে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিতে পারে। একটি সেফটিপিনের দুঃখে পাগলপ্রায় চিৎকার করতে পারে। এর সব কিছুর একটি প্যাটার্ন আছে। শ্রেণী চরিত্র আছে।
খুব বেশি দিন আগে না, দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর বউদের যখন কোন কাজ থাকতো না তাঁদেরকে চাল আর ডাল মিশিয়ে বাছতে বসিয়ে দিতো তাঁদের শাশুড়িরা। তাঁদেরকে যত এসব কাজে ব্যস্ত রাখা যায় তত পিতৃতন্ত্রের সুবিধা। আর শাশুড়ি হলেন সেই তন্ত্রের প্রতিনিধি। আর শাশুড়ির উপরে থাকে বস। পুরুষতন্ত্রের বস। সেই বস এই শাশুড়ির মাথায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ঢুকিয়ে দিয়ে রাখে। যাতে সে ও বাড়ির অন্য নারী যেমন পুত্রবধূ, ভ্রাতৃবধূ, ননদ, জা নিজেদের ভেতর দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকতে পারে। ক্ষুদ্র বিষয়ে তাঁদেরকে ইনভ্লভ রেখে এই পুরুষতন্ত্রই নারীকে ডেজিগনেশন দেয় নারীর ‘ছোট মন’। বড় কিছুর ভেতর ঢুকতে না দিয়ে ‘ছোট মন’ দণ্ড দেওয়া অনেক সহজ। এমনকি নারীও বসে নারীর বিচারে!
অথচ পরিবারে যে নারীকে ‘কুটনি’ করে গড়ে তোলা হয়, তাঁকে বিশ্ব রাজনীতিতে সুযোগ দিলে তিনি একজন বড় কূটনীতিক হতে পারতেন। এটা কেউ ভেবে দেখেনা!
কখনও কখনও পুরুষতন্ত্রেরই প্রবর্তিত এ অপনিয়ম বুমেরাং হয় যখন তাঁদের দিকে নিক্ষেপিত হয়, তখন তারা বলে ‘নারীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ পুরুষের জীবন।’
পুরুষতন্ত্রের এ রহস্য প্রতিটি নারীকে জানতে হবে। এমনকি পুরুষকেও সজ্ঞানে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।
একজন নারী যখন পুরুষতন্ত্রের এ রহস্যটি উন্মোচন করতে পারবে, সে কখনই নারীর বিপক্ষে পুরুষের এপয়েন্টেড হয়ে বিরুদ্ধতা করতে পারবে না। সে কোনদিন নারীর বিরুদ্ধে নিজের মূল্যবান ভয়েস তুলবে না। বিচারে বসবে না!
নারী বা পুরুষ সব্বাইকে শুধু একটা চিন্তায় একাত্ম হতে হবে, পৃথিবীর কোন কিছু ‘কারণ’ ছাড়া নয়। আমাদের শিক্ষিত মননের কাজ সে’কারণটি’ উদ্ঘাটন করা। তাহলেই ৫০% কাজ ডান!