সভ্যতার আলোর পথে সৌদি পিতৃতন্ত্র

রাহাত মুস্তাফিজ:

অসভ্য সৌদি আরব সভ্য হতে চাইছে। কিছুটা আধুনিক, কিছুটা প্রগতিশীল হতে চলেছে। দেখে ভারি ভাল লাগছে। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ডুবে থাকা কাজের কথা নয়। ব্যাপারগুলো ওদেশের যুবরাজগণ কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরেছে বোধকরি। আসলে বলা ভাল উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। সংবাদ বেরিয়েছে, খনিজ তেলের চাহিদা আর মাত্র ৩০ বছর থাকবে। এরই মধ্যে বিকল্প জ্বালানী সহজলভ্য ও সুলভ হবে।

আর তা হলে সৌদির প্রধান বাণিজ্য প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত তেল বেচা-বিক্রি লাটে উঠবে। এছাড়া থাকে হজ্ব ব্যবসা। শুধু হজ্ব বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে তো আর সামন্ত স্টাইলে বাদশাহীগিরি চলে না। এই ব্যাপারটা সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতার তাপে ও আঁচে থাকা সংস্কারবাদীরা বুঝতে পেরেছে। আর তাই সভ্য হতে যাওয়ার পথে প্রাথমিকভাবে নিম্নোক্ত সুবিধাদি প্রদান করেছে –
* নারী‌দের গাড়ি চালা‌নো।
* নারীরা বি‌ক্রেতার চাকরি করা।
* নারীরা স্টে‌ডিয়া‌মে গি‌য়ে খেলা দেখা।
* নারীরাও ফ‌তোয়া দি‌তে পারা (এটা অন্য কোনো দে‌শে নাই)।
* সারা দে‌শে ৩০০ সি‌নেমা হল নির্মাণ ও সকল‌কে সি‌নেমা দেখার অনুম‌তি।
– তথ্যঋণ: সরদার আমিন

পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন, সৌদি বর্বরেরা বিশেষকরে নারীর উপর প্রচণ্ড অবরোধ দিয়ে রেখেছিল। উৎপাদনবিমুখ আরব সামন্ত লাম্পটেরা দেদারসে পেট্রো ডলার অপব্যয় করে লাম্পট্য চালিয়ে গেছে। গৃহকর্মিদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে। পাথর ছুঁড়ে বর্বর কায়দায় নারী হত্যা করেছে। শাস্তি হিসেবে প্রকাশ্যে তথাকথিত অপরাধীর হাত কেটে নিয়েছে, চক্ষু উৎপাটন করেছে, ফাঁসি কার্যকর করেছে।

নারী নিপীড়নের লীলাভূমি হয়ে আছে আরব বিশ্ব, বিশেষ করে সৌদি আরব। ধর্মীয় শরিয়া শাসনের নাম করে অচল, অসার, অন্ধকার বিধান দিয়ে সাধারণ মানুষকে যুগ যুগ ধরে শোষণ করছে। এই শোষণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে নারীকে। জনসংখ্যার অর্ধেক নারীকে গৃহবন্দি করে, উৎপাদনমুখী, সৃজনশীল কাজ থেকে বিরত রেখে শ্রেফ হজ্ব বাণিজ্য আর ভৌগোলিক কারণে প্রাপ্ত তেল বিক্রি করে মুসলিম বিশ্বের প্রধান সাম্রাজ্য টিকিয়ে রেখেছে।

নারীদেরকে কেবল বোরকা, হিজাব, নেকাব পরিয়ে নিশ্বাসবন্ধ করে বস্তায় ভরেনি, তাঁদেরকে গাড়ি চালানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। পুরুষের অনুমতি ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া বারিত করেছে। মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা বিনোদন পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে। অথচ, সৌদি রাজতন্ত্রের লম্পটেরা বহুবিবাহের নাম করে ধর্ষণের ধর্মীয় লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছে, হারেম খুলেছে, অসহায় নারীদের রক্ষিতা বানিয়েছে, বাল্যবিবাহ আইনসিদ্ধ করে শিশু ধর্ষণের উৎসব জারি রেখেছে, গৃহকর্মে নিযুক্ত নারীদের সাথে দাসী-বাদীর মতো আচরণ করে আধুনিককালের দাসপ্রথা চালু রেখেছে। মদ্যপান হারাম করে বেচা-বিক্রি নিষিদ্ধ করলেও তা সাধারণ সৌদি নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। রাজতন্ত্রের ক্ষমতাশালী বদমাশদের জন্য আল্লাহ্‌’র দুনিয়ার সবকিছুই জায়েজ আছে।

অবশেষে সৌদি আলোর পথে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। বুঝতে পারছে একমাত্র হজ্ব ব্যবসা দিয়ে খুব বেশিদিন আর টিকে থাকা সম্ভব না। মধ্যযুগ থেকে বন্ধ করে রাখা দরোজা-জানাগুলো খুলে দিতে হবে। আলো ঢুকতে দিতে হবে গৃহাভ্যন্তরে, নাগরিকের মনে, নারীদের অন্তরে। নইলে সাম্রাজ্যবাদের একচ্ছত্র অধিপতি আদিপিতা আমেরিকাও রক্ষা করতে পারবে না। এই বোধোদয় যেভাবে, যে কারণেই হোক; শিক্ষার আলো পৌঁছে যাক সৌদির প্রতিটি ঘরে ঘরে।

নারী অবরোধের সিম্বল বোরকা, হিজাব খসে পড়ুক নারীর শরীর থেকে। পিতৃতন্ত্রের কঠোরতা থেকে মুক্তি পাক নারীগণ, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হোক সৌদি নারীরা। কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ লাভ করুক প্রতিটি মানুষ। শোষণহীন, বৈষম্যমুক্ত সাম্যের সমাজ রচিত হোক সেখানে। এ প্রক্রিয়ায় মুসলিম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল সৌদির কার্যকর রি-ফরমেশন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিমুখ, মধ্যযুগের দিকে হাঁটতে শুরু করা অনুকরণপ্রিয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.