তুহিন তালুকদার:
আমরা শৈশব থেকে এমনটাই দেখে অভ্যস্ত যেখানে, বড়রা শুধু কী করতে হবে সেটা বলে দেন, অথবা কী করা যাবে না সেটা জানান। কিন্তু পেছনের কারণটা ব্যাখ্যা করেন না। এটা আমাদের মজ্জায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যে আমাদের গান, কবিতার মতো বিষয়েও অবলীলায় প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়, শখের কোনো কাজ করতে গেলে পরিবার বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং পরিবারের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা আদায় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। পরিবারের কিন্তু সন্তান বা অনুজদের উপর সিদ্ধান্ত চাপাতে তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। কারণ আমাদের পরিবারগুলো ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চার চেয়েও অগ্রজদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশি অভ্যস্ত।
যেসব পরিবারে পিতা খুব নিয়ন্ত্রণবাদী সেখানে এটা খুব প্রবলভাবে দেখা যায়। কোন কোন পরিবারে মাও অত্যন্ত কর্তৃত্বপরায়ণ হিসেবে দেখা দেন।
আমাদের সমাজে বাবা মা হুকুম দেন, সন্তানের কাজ হুকুম তামিল করা। বাবা মা লক্ষ্য স্থাপন করেন, সন্তানের কাজ সেটা পূরণ করা। কোন সন্তান চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে, সেটা ঔদ্ধত্য এবং চরম সীমা লঙ্ঘন বলে গণ্য হয়। বাবা মায়ের এ ধরণের ভূমিকাকে বলা হয়- Authoritarian Parenting. যে পরিবারগুলোতে এটার চর্চা হয় তাদের বলা যায় অথরিটারিয়ান ফ্যামিলি বা কর্তৃত্বপরায়ণ পরিবার। আমাদের সমাজে সাধারণত এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থাই দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে সন্তানের ভুলভাবে গড়ে ওঠার জন্য পরিবারের কর্তৃত্বপরায়ণতা দায়ী থাকে।
আমরা পিতামাতাকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত নই। পিতামাতাকে আমরা ত্রুটি বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে ধরতে গিয়ে প্রায়ই কিছু বিষয়ে জ্ঞাতসারেই চোখ বন্ধ করে রাখি। অথচ, মানুষ হিসেবে তাদেরও ভুল হতে পারে এবং এটা মেনে নিলেই বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়। বরং স্বীকার করতে না চেয়ে আমরা সমস্যাকে জিইয়ে রাখি। অথরিটারিয়ান সব পরিবারের কর্তৃত্বপরায়ণতার মাত্রা সমান নয়। কোন পরিবারে কর্তৃত্বপরায়ণতার সকল বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান থাকে না। একেক পরিবারে কর্তৃত্বপরায়ণতার রূপ একেক রকম, মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন।
এ ধরনের পরিবারগুলোর ট্রেডমার্ক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা সন্তানকে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে দেন না, অন্তত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তো কিছুতেই না। স্কুল নির্বাচন, পেশা নির্বাচন, জীবনসঙ্গী নির্বাচনের মতো সিদ্ধান্তগুলো পরিবারই গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একাধিক বিকল্পও প্রস্তাব করা হয় না। একটিমাত্র সিদ্ধান্ত, যেটি সাধারণত পিতা গ্রহণ করেন, সন্তান সেটিই মানতে বাধ্য থাকে। অনেক বাবা মা-ই সন্তানদের কথা শোনাকে প্রয়োজনীয় মনে করেন না। তারা সন্তানকে শুধু দৃষ্টিগ্রাহ্য হিসেবে চান, শ্রুতিগ্রাহ্য হিসেবে নয়। তারা সন্তানকে ন্যুন মনে করেন, তাই ধরেই নেন, সন্তান তার জীবনের জন্য কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
অথরিটারিয়ান বাবা মা সন্তানের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলার চেয়েও নিয়ন্ত্রিত আচরণ এবং নিঃশর্ত আনুগত্য প্রত্যাশা করেন। তারা সাধারণত ‘Do as I say’ নীতি সমর্থন করেন। সন্তানেরা এই নীতি পালনে ব্যর্থ হলে শাস্তি নির্ধারিত থাকে। শাস্তির ধরণ হতে পারে শারীরিক (অর্থাৎ প্রহার), মৌখিক (অর্থাৎ ভর্ৎসনা) বা মানসিক (অর্থাৎ লজ্জা দেওয়া)। কর্তৃত্বপরায়ণ বাবা মা ক্ষমাকে দুর্বলতা এবং শাস্তি না দেওয়াকে প্রশ্রয় মনে করেন। তারা সন্তানের ব্যাপারে অনেকটা My way or the highway মনোভাব পোষণ করেন। অর্থাৎ আমার নিয়মে চলো বা ঘর ছেড়ে রাস্তায় যাও।
অনেকক্ষেত্রে যে নিয়মটি সন্তানকে মানতে তারা বাধ্য করেন, সেটি নিজেই মেনে চলেন না। আমি একটি পরিবারে দেখেছি, আত্মীয়স্বজনের সামনে বেফাঁস কিছু বলে ফেলায় সন্তানকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু শিশুটির বাবা মা নিজেরাই আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে নানা কুৎসাপূর্ণ আলোচনা সন্তানের সামনেই করতেন। ফলে সেটি তাদের শিশুকেও প্রভাবিত করেছিল। সন্তানরা বাবা মাকে অনুসরণ করে। ফলে তাদের ‘Do as I say’ না বলে ‘Do as I do’ বললে কার্যকর হয় বেশি। সন্তানের কাছ থেকে যে আচরণটি প্রত্যাশিত, বাবা মাকে সেটাই প্রতিনিয়ত করে তার সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেতে হয়।
অনেক পরিবারেই বাবার সাথে সন্তানের দূরত্ব অনেক বেশি থাকে। বাবারা সন্তানের সাথে খুব একটা উষ্ণ কিংবা স্নেহের সম্পর্কে জড়ান না। বাবা একটা ভয়ের প্রতিমূর্তি হয়ে বসে থাকেন আর সন্তানেরা দূর থেকেই সেই প্রতিমূর্তিকে দেখে ভয়ে কাঁপতে থাকে। অনেক বাবা মাকে দেখেছি, সন্তানকে শৈশবে কীভাবে মারধোর করে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রেখেছেন, তা নিয়ে বড়াই করতে। তার অংশভাগও যদি তারা কৃত নির্যাতন নিয়ে আক্ষেপ করতেন, তাহলেও কিছুটা মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি হত। অনেকে মনে করেন, শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ না রাখলে সন্তানরা ঠিকভাবে গড়ে উঠবে না। তারা সন্তানকে গড়ে তোলেন অনেকটা সৈনিকের মত করে, যেন তারা রূঢ় বাস্তবতায় বসবাসের উপযোগী হয়। সন্তানকে সবসময় স্মরণ করিয়ে দেন, যেদিন নিজেকে নিজের দায়িত্ব নিতে হবে সেদিনের প্রতিকূলতার কথা। অনেক সময় বাইরের রূঢ় বাস্তবতার চেয়ে বাবা মা-ই রূঢ়তর বাস্তবতা হিসেবে প্রতীয়মান হন।
অথরিটারিয়ান পরিবারের সন্তানেরাও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বড় হয়। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে তাদের সামাজিকীকরণ স্বাভাবিকভাবে হয় না। তারা মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তি বোধ করে। সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েতে গিয়ে অপ্রস্তুত বোধ করে। এটাকে বলা হয় social awkwardness. তাদের বন্ধুর সংখ্যা কম থাকে। তারা সবসময় সীমিত কিছু ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষকেই বন্ধু নির্বাচন করে। সাধারণত সেই বন্ধুরা পারিবারিকভাবে কর্তৃত্বপরায়ণ ঘরানারই হয়। তাদের জীবনে সাফল্য হয়তো থাকে, কিন্তু উচ্ছ্বাস বা উচ্ছ্বলতা থাকে না। তারা প্রথানুবর্তী হয়।
কোন একটি সিস্টেমে তারা নিয়ম মেনে চলতে পারে। তারা সাধারণত ঊর্ধ্বতন কারও অনুগামী ও আজ্ঞাদাসে পরিণত হয়। আবার তারাই যখন ঊর্ধ্বতন অবস্থানে যায় তখন অধঃস্তনদের আজ্ঞাদাস হিসেবে পেতে চায়। অসফল মানুষদের বন্ধু হতে তারা আগ্রহী থাকে না। আবার তাদের চেয়ে অনেক বেশি সফল কারও সামনে গেলেও হীনমন্যতার শিকার হয়।
তারা স্বাধীনতা পেয়ে অভ্যস্ত থাকে না বলে নিজ নিজ দিগন্ত আবিষ্কার বা ব্যক্তিগত মানদণ্ড তৈরিতে সক্ষম হয় না। এতে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়, তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার চর্চা থাকে না। আরেকটি বড় ক্ষতি তাদের হয়ে যায়, সেটা হচ্ছে অনেকক্ষেত্রে তারা ভালো বাবা-মা হতে ব্যর্থ হয়।
অথরিটারিয়ান পরিবারের সন্তানেরা বাবা মা হলে দুই ধরনের বিপত্তির সম্ভাবনা থাকে। এক, তারা নিজেরা অথরিটারিয়ান হয়; অথবা দুই, অথরিটারিয়ান পদ্ধতিকে অপছন্দ করে ঠিক তার বিপরীত কিছু করতে গিয়ে কেউ কেউ সন্তানের ক্ষতি করে ফেলেন। বর্তমান প্রজন্মের অনেক বাবা মাকে দেখছি, স্বাধীনতা দিতে গিয়ে সন্তানকে স্বেচ্ছাচারিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। শিশুকে তারা না চাইতেই সবকিছু এনে দেন। ফলে এসব শিশুরা কোনকিছুর মূল্য বুঝতে শেখে না এবং খুব স্বার্থপর হয়ে বড় হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসব বাবা মা অথরিটারিয়ান ঘরানায় বড় হয়েছিলেন।
অথরিটারিয়ান পরিবার সামাজিক গঠনের কারণেই গড়ে ওঠে। অথরিটারিয়ান মনোভাব পুরুষতান্ত্রিকতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। নারী পুরুষ নির্বিশেষে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবসম্পন্ন মানুষ বাবা মা হিসেবে অথরিটারিয়ান বা কর্তৃত্বপরায়ণ হন। রক্ষণশীল পরিবারগুলোতেও এ ধরণের চর্চা থাকে। কারণ, রক্ষণশীল পরিবারগুলোতে ব্যক্তিস্বাধীনতার চেয়েও নিয়ম বা পরম্পরার প্রতি আনুগত্য থাকে বেশি। অনেক পিতামাতা নিজের জীবনের ব্যর্থতা পরবর্তী প্রজন্মে নিরসনের উদ্দেশ্যে অথরিটারিয়ান আচরণ করে থাকেন। অথরিটারিয়ান পরিবারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপটি দেখা যায় শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোতে। সেখানে সন্তানদের ভয়ঙ্কর শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে বড় করা হয়। বেশিরভাগক্ষেত্রেই কোন অপরাধ করার চেয়েও পিতার বা জ্যেষ্ঠদের কথামত কাজ না করার কারণেই অনুজদের শাস্তিবরণ করে নিতে হয়। এই শিশুরা অনেকক্ষেত্রেই নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এ ধরণের পরিবারের আধিক্য দেখা যায়। এ ধরণের দেশগুলোতে আর্থিক নিশ্চয়তা থাকে না বলে, সন্তানদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে চেয়ে বাবা মা অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। চায়না, কোরিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাবা মায়েরা সাধারণত অথরিটারিয়ান হন। পশ্চিমা বিশ্ব এশিয়ান প্যারেণ্টিং বলতে ভয়ঙ্কর কিছুই বোঝে। অভিবাসীদের কল্যাণে তারা এশিয়ান প্যারেণ্টিংয়ের পরিচয় পেয়েছে।
এই উপমহাদেশের অধিকাংশ পরিবারই অথরিটারিয়ান। এখানকার বাবা মায়েরা সন্তানের উপরে অত্যধিক প্রত্যাশার চাপ প্রয়োগ করেন। সন্তানেরা কোন কারণে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। যার চরম রূপটি দেখি, যখন অনেক কিশোর, তরুণ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ভারতীয় উপমহাদেশ কট্টরভাবে পুরুষতান্ত্রিক। তাই এখানে ছেলে সন্তানের চেয়েও মেয়ে সন্তানের উপর নিয়মের চাপাচাপি বেশি। ছেলে সন্তান এবং মেয়ে সন্তানের উপরে প্রত্যাশার ধরণও থাকে ভিন্ন। ছেলে সন্তানের কাছে প্রত্যাশা থাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বা মোটাকথায় ধনী হওয়ার। মেয়ে সন্তানের কাছে পেশাগত উন্নতি তেমনভাবে প্রত্যাশিত থাকে না, অনেকক্ষেত্রে পেশাগত উন্নতির ব্যাপারে সমাজই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত থাকে সামাজিক নিয়ম কানুনের প্রতি আনুগত্য, বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করা, বিয়ের পরে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির প্রতি আনুগত্য ইত্যাদি। অনগ্রসর সমাজে মেয়েদের আচরণের উপর পরিবারের সম্মান নির্ভর করে। মেয়েরা কোন কারণে সমাজের চোখে অসম্মানজনক কিছু করলে পুরো পরিবারকে লজ্জিত হতে হয়, কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এ ধরণের নিয়ম সমানভাবে প্রযোজ্য থাকে না।
আমরা সন্তানদের মধ্যে পিতা মাতার প্রতি কর্তব্যের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির কথা বলি। শৈশব থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। কিন্তু সন্তানপালনের জন্য বাবা মায়েরও নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার দরকার আছে। মাঝারি মানের একটা চাকরি পেতে হলেও মানুষকে ষোল সতের বছরের শিক্ষাজীবন শেষ করতে হয়। কিন্তু সন্তান পালনের মত কঠিন একটা দায়িত্ব পালনের জন্য কেউ প্রস্তুত কিনা সেটা যাচাইয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। মানুষ গড়ে ওঠে পরিবারের ছাঁচে। সন্তানপালন বিষয়ে পরিবারে ভ্রান্ত ধারণা থাকলে সন্তান অসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সন্তানপালন বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভ্রান্তি থাকলে ভুল মানুষে গোটা সমাজ ভরে যায়। তাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করার দরকার আছে। এটা ঠিক যে, বাবা মা সবসময়ই নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটিই সন্তানকে দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই দেওয়ার প্রচেষ্টায় অনেক সময়ই সন্তানের ইচ্ছা, অনিচ্ছা বা সামর্থ্যের দিকটা ভেবে দেখেন না।
বাবা মায়ের উচিত সন্তানদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত রাখা, তারা কী চায় সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া, তাদের জীবনের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে দেওয়া। সন্তানদের কথা শুনলে ক্ষেত্রবিশেষে তাদের মতামত গ্রহণ তারা খুব সম্মানিত বোধ করে এবং বাবা মাকে সহযোগিতা করে। সব সময় তাদের শুধু কোনটা ভুল আর কোনটা শুদ্ধ সেটা বলে দেবেন না। তাদের যেন ছোট খাট ভুল করার স্বাধীনতা থাকে। ভুল থেকেই শিক্ষা হয়। আর তা না হলে তারা কেবল আদেশ পালন করতে শিখবে, সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে না। অনেক পরিস্থিতিতে তাদের নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে হবে। তার জন্য শৈশব থেকেই তাদের প্রস্তুত করা উচিত। একটা বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, সন্তানরা যেন বাবা মায়ের সাথে কোন কথা শেয়ার করতে ভয় না পায়। বড় বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে ভয় পেয়ে কিছু লুকালে।
সন্তানের জীবনকে অতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করাই ভালো। অতি নিয়ন্ত্রণবাদ তাদের বিপথগামী করে তুলতে পারে। নিয়ন্ত্রণ কমানোর মানে কিন্তু অতি ছাড় দেওয়া নয়। বরং কথা বলে বন্ধু হতে পারলে নিয়ন্ত্রণের আর দরকারই পড়বে না। তারা নিজেরাই আগ্রহী হয়ে তাদের মনের কথাটি আপনাকে খুলে বলবে। যখন তাদেরকে বলবেন, তাদের বন্ধু হতে চান, মনেপ্রাণে সেটাই বজায় রাখুন। বন্ধু হওয়ার ছলনায় তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না বা অযথা সন্দেহ করবেন না। সন্দেহ করলে তারা বুঝতে পারে। বিশেষ করে টীন এজের সন্তানরা যদি বুঝতে পারে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাহলে তারা ভুল কিছু করে ফেলার ঝুঁকি থাকে।
বাবা মায়ের দায়িত্ব পৃথিবীর সবচেয়ে গুরু দায়িত্বগুলোর একটি। এই দায়িত্বটি কর্তৃত্বপরায়ণতা দিয়ে সম্পন্ন না করে বাবা মায়ের উচিত আরও মানবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কোন উপায় বের করা। অবশ্যই তাতে যেন সন্তান স্বেচ্ছাচারী বা জীবনের ব্যাপারে অমনোযোগী না হয়ে ওঠে সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। বিষয়টিও কঠিন হলেও সন্তানের স্বার্থে বাবা মাকে অতি কর্তৃত্বপরায়ণতা বাদ দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থায় আসতে হবে। তাহলেই পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন আরও উপভোগ্য হবে।