#MeToo একটি বিপ্লবের নাম

সাদিয়া রহমান:

“MeToo একটি বিপ্লবের নাম”- সম্প্রতি এমনটাই বলেছেন বিখ্যাত গীতিকার বিওরন ক্রিস্টিয়ান উভায়েস। সুইডেনের একটি পত্রিকায় তিনি এই মতামত ব্যক্ত করে বলেন যে, এই বিপ্লব সমাজকে একদম মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারবে বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, এই প্রচারণার কারণেই মেয়েরা আজ মুখ খুলেছে, তারা বলতে শুরু করেছে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানিগুলোর কথা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া #MeToo প্রচারণা সুইডেনে নিয়ে এসেছে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের জোয়ার। সুইডিশদের অসম্ভব রকমের সংগঠিত হওয়ার ক্ষমতা বলেই হয়তো তারা ছোট একটা প্রচারণার জের ধরে সমস্যা চিহ্নিত করে তা জাতীয় পর্যায়ে সমাধানের চেষ্টা করতে উদ্যত হয়েছে।
পরিবর্তন এবং অধিকার আদায়ের দিক থেকে সুইডেন বরাবরই এগিয়ে।

১৯৯৯ সালে দেশটিতে পাশ হয় একটি আইন যার মাধ্যমে বলা হয় যৌনতা বিক্রি অপরাধ নয় বরং সেটা ক্রয় করাটাই আসল অপরাধ। সেই আইনের আগে-পরে অনেক কথা থেকে গেলেও এটা সত্য যে, দেশটি বরাবরই গঠনমূলক পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে এসেছে।

MeToo এর প্রচারণাও দেশটির জনগণ এবং সংগঠনগুলোকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। তারা সমস্যার ভিত্তিগত জায়গা থেকে নিতে শুরু করেছে আরো অনেক পিটিশন এবং সচেতনতামূলক পদক্ষেপ। সেই পদক্ষেপগুলো এবং তদন্তের জের ধরে নামকরা কোম্পানির কর্মচারি থেকে বিনোদন জগত পর্যন্ত অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন যৌন হয়রানিমূলক কাজ কর্মের জন্য।

বলা হচ্ছে, প্রতি দশ জনে সাত জন সুইডিশ মনে করছে এই ক্যাম্পেইন থেকেই বড় ধরনের গঠনমূলক পরিবর্তন আসা সম্ভব। প্রায় ৭৪ শতাংশ নারী ভরসা করছেন এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শুরু হওয়া পরিবর্তনের জোয়ারের ওপর।
এককালীন “অ্যাব্বা” দল খ্যাত উভায়েস যিনি সুইডেনের বেশ নামকরা মানবাধিকার কর্মী, তিনিও সরব হয়েছেন এই MeToo প্রচারণার প্রশংসায়। তিনিও গলা মিলিয়েছেন পরিবর্তনের কান্ডারীদের সাথে।

তিনি মনে করেন, শত বছরের নীরবতা ভেঙ্গে সভ্যতা পা রাখতে যাচ্ছে “পুরুষতন্ত্র পরবর্তী” সমাজ ব্যবস্থার দিকে। তার বক্তব্য-“বহু বছরের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ইতিমধ্যেই ধস নেমে গেছে, যা সমাজে আমূল পরিবর্তন আনবেই এবং এর থেকে ফেরার আর কোনো পথ নেই”।

উভায়েস শুধু গলা মিলিয়েই শান্ত হোননি, বরং আত্নসমালোচনাও করেছেন। তিনি আবারও নিজের এবং তার আশেপাশের পুরুষদের নারীদের প্রতি আচরণের দিকে নজর দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছেন যে ঠিক কোন জায়গাগুলোতে নারীরা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হোন। অনেকেই মনে করেছিলো, এই আন্দোলন বেশি দিন টিকবে না, কিন্তু সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে এই আন্দোলন ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

উভায়েস যিনি বরাবরই নিজের মত প্রকাশে নির্ভীক এবং অবিচল তিনি বলেছেন, তিনি অত্যন্ত গর্বিত যে তিনি বেঁচে থাকতে এই রকম একটি পরিবর্তনের সাক্ষী হতে পারছেন।

: বিদেশি নিউজ অবলম্বনে

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.