দেনমোহর মুসলিম নারীর সম্মান, নাকি যৌনাঙ্গ ব্যবহারের আর্থিক মূল্য পরিশোধ?

শেখ তাসলিমা মুন:

মুসলিম বৈবাহিক ‘চুক্তিতে’ ‘দেনমোহর’ বলে একটি বিষয় আছে। এটি মূলত যৌন সম্পর্কের আর্থিক মূল্য প্রদান। ‘রেট’ অনুযায়ী কন্ট্রাক্ট হয়। বিবাহ আসরে এটা নিয়ে দর কষাকষিও হয়। দরাদরিতে রফা হয়। যে নারীর যতো মূল্য, তার ‘রেট’ থুক্কু ‘দেনমোহর’ ততো বেশি।

মূল কথা, দেনমোহর নির্ধারণ হয় দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে। দেনমোহরে নারীর রূপ-গুণ-বংশ এসব একটি বড় বিষয়। এমনকি কনের মা খালা ফুপুর দেনমোহর কত ছিল, সে ঠিকুজি দলিলও হাজির করা হয়। কনে যদি তার মা-খালা-নানী-ফুপুর মতোন রূপে গুণে সমান হয়, তাহলে তাদের দেনমোহরের সাথে মিল রেখে দেনমোহরের অঙ্ক উঠানামা করে।

অবশ্য কনে পক্ষকে ছেলের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি নবী করিমের বিবাহ ও তাঁর দেনমোহর অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। তিনি তাঁর স্ত্রীদের নামেমাত্র দেনমোহর নির্ধারণ করেছেন।

দেনমোহর আংশিক পরিশোধ ব্যতিরেকে বিবাহের রাতে স্বামী তার স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। করিলে সে স্পর্শ জায়েজ হবে না। যেমন দেনমোহর যদি ১০ লাখ টাকা ধার্য হয়, স্বামী যদি স্ত্রীকে তিন লাখ টাকার গহনা উপহার দিয়ে থাকেন, তাহলে বিয়ের রাতে তাঁকে তিন লাখ টাকা নগদ ও সাত লাখ টাকা অনাদায়ে রফা করে বিবাহ বৈধ করতে হবে।

কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে, সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মোহরের কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৪)।

কুরআনের দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)

দেনমোহর ইসলামে এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে স্ত্রীর অধিকার পাকাপোক্ত করা হয়। পরিশোধের ভিত্তিতে দেনমোহর দুই ধরনের হয়। যথা- মুয়াজ্জল (আশু) দেনমোহর এবং মু-অজ্জল (বিলম্বিত) দেনমোহর। আশু দেনমোহর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেনমোহর হচ্ছে, দেনমোহরের যে অংশটুকু স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের পর স্ত্রী পেয়ে থাকেন।

তবে এখানে কথা আছে। এ বিষয়ে মেয়ে যদি নিজে দেনমোহর মাফ করে দেন, সেক্ষেত্রে মেয়ের সম্মতি ও অনুমতিতে বিয়ে পড়ানোর পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে থাকতে পারবে। দেনমোহর বিষয়ে এও বলা হয়, মিলনের পর স্ত্রী সন্তুষ্ট হয়ে যদি দেনমোহর মাফ করে দেন, তবে কোনো সমস্যা নেই।

“ইসলামের বিধিমতে রাসুল (সা:) এর হাদিস ও আল্লাহ পাকের কোরআনের বর্ণনা মতে, দেনমোহর বলা হয় ঐ সমস্ত জিনিস বা টাকা-পয়সা বা গয়নাগাটি ইত্যাদি, যার বিনিময়ে একজন নারীর যৌনাঙ্গকে তার স্বামী শরীয়ত মোতাবেক ব্যবহারের বৈধ অনুমতি লাভ করে। এটা আদায় করা ওয়াজিব। কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ না করে বা স্ত্রীর কাছ থেকে মাফ না নিয়ে যৌন কার্যে লিপ্ত হয়, তা তার জন্য গোনাহের কারণ। এটা নারীর অধিকার ও তার সম্বল, তবে কোনো নারী যদি তার স্বামীকে দেনমোহর মাফ করে দেয়, তবে স্বামী স্বাচ্ছন্দ্যে তা নিজের বা পরিবারের কাজে ব্যয় করতে পারবেন।”

ইসলাম দানিয়াছে নারীকে শ্রেষ্ঠের সম্মান!
বুঝিয়া লউন! নিজের সম্মান পোক্ত করুন!
আমিন!

(লেখাটি শেখ তাসলিমা মুনের ব্লগ থেকে নেয়া)

শেয়ার করুন: