শেখ তাসলিমা মুন:
এই লেখাটির জন্য আমার হিন্দু নারীবন্ধুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটি কারও ব্যক্তি অভিরুচি বিষয়ক পোস্ট নয়, একটি অথর্ব ধর্মীয় বিধান সম্পর্কিত। আমি নিজে শাঁখা সিঁদুর পরি সেই স্কুল জীবন থেকে। আমি বিবাহিত-অবিবাহিত এসবের বাইরে থেকে সিঁদুর-আলতা আমার বাঙালি সজ্জার অংশ মনে করি।
কিন্তু এটি দিয়ে বিবাহিত ও অবিবাহিত চিহ্নিত করার যে বিধানটি আছে সেটি লেখায় আজ দুদিন ধরে এক বন্ধুকে শিবসেনারা ফালা ফালা করছে। তাঁকে বেশ্যা থেকে শুরু করে এমন কোনো গালি নেই দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে আমিও কিছু মন্তব্য করি। কিন্তু বুঝেছি ধর্মীয় মৌলবাদের গোঁড়া এক। ধর্ম কতো উগ্র হতে পারে সেটি দেখে সহস্রবারের মতো আরও একবার অবাক হয়েছি। অথচ সিঁদুর বিষয়ক এ বিধান কারও অজানা নয়। হিন্দু বিবাহিত নারীদের কপালে এটি চিহ্ন
হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। ধর্ম বলেছে তাই।
কিন্তু এর পেছনের মেসেজটি কি?
ধরুন, একদল ভেড়া কোনটা কোনটা আপনার সেটা চিহ্নিত করার জন্য কপালে লোহা পুড়িয়ে দাগ দিয়ে দেওয়া হলো যাতে চেনা যায় কোনটা আপনার। পরাভবের ইতিহাসে ভূমি জয়ের সাথে সে ভূমির নারীরাও তাদের দখলে চলে আসতো। কার, কোনটা সেটি চিহ্নিত করার জন্য কপালে চিহ্ন দেওয়া হতো। এখনও দেখবেন, শুয়োরের পালে শুয়োরদের কপালে কাঠ-খড়ি দিয়ে দাগ দেওয়া হয়। ছাগল-গরু-ভেড়া-ঘোড়ারও। ব্রুটাল হলেও বিষয়টি কি সেটা নয়?
যত মনোরম ব্যাখ্যাই দিন, আসল কথা ‘বিবাহিত’ নারীকে আলাদা করা হচ্ছে। কেন? বিবাহে নারী ‘আলাদা’ কেন হবে? যুক্তি কী? বিপরীতে ‘বিবাহিত’ পুরুষের কি কোনো চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়? না। আবারও বলছি বিবাহিত নারীকে কপালে চিহ্ন দেওয়া নিয়ে কথাটি হচ্ছে! এখনও এই ২০২০ সালের গোঁড়ায় এসেও ভাবতে পারেন নারীর কপালে চিহ্ন দিয়ে কে বিবাহিত এবং কে অবিবাহিত সেটা চিহ্নিত করা হয়?
রিচুয়াল হলো মূল বিয়ে অনুষ্ঠানশেষে রাত্রিযাপনের পর, সকালে ‘বাসিবিবাহে’ স্বামী তার বাঁ হাতের দু আঙুল দিয়ে কপাল থেকে সিঁথি পর্যন্ত লাল রঙের সিঁদুর দিয়ে রঞ্জিত করে দিয়ে ‘নারীটি যে একান্তই তার’ সেটির চিহ্ন এঁকে দেবে। এটি সেই নারী যতদিন স্বামী বাঁচবে, ততদিন বহন করে যাবে। পালন করে যাবে। যেদিন স্বামী মারা যাবে, সেদিন মৃত স্বামী বুড়ো আঙুল দিয়ে কপাল থেকে সিঁদুর মুছে নিয়ে যাবে। সেদিন থেকে তার কপাল সাদা হবে।
এখন বলুন, এটি কোন সংস্কৃতি দিয়ে আপনি সিদ্ধ করবেন? এটি কোন সম্মান নারীর? কোন গালভরা শব্দ দিয়ে মহিমান্বিত করবেন? এটাকে যদি বলেন উস্কানি, তাহলে বলবো, এ উস্কানি প্রতিটি মেয়ের দেওয়া উচিত! প্রতিটি হিন্দু নারীর লজ্জা হওয়া উচিত ‘বিবাহিত’ বলে এ চিহ্ন কপালে ও মাথায় আঁকতে! আমি চাইবো, সকল নারী সে বিবাহিত হোক, অবিবাহিত হোক, বিধবা হোক, ডিভোর্সড হোক, পছন্দ হলে এ সৌন্দর্যপূর্ণ সাজটি করতে পারবেন, যদি তিনি চান! বিধান হিসেবে না। নির্দেশ হিসেবে নয়। আদেশ হিসেবে নয়! কারও অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে চিহ্ন হিসেবে তো নয়ই। সাইনবোর্ড হিসেবেও নয়!
(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া)