রামিছা পারভীন প্রধান:
আমার ছেলে মেয়েদের সকালটা শুরু হয় দুরন্ত টিভি দেখে। দিনটাও শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে। এই চ্যানেলে প্রতিদিন সকালে একেকটা স্কুলের ছেলেমেয়েদের গাওয়া জাতীয় সঙ্গীত দেখানো হয়। আর আমার ছেলেমেয়েরা সেটা গুনগুণ করে গেয়ে উপভোগ করে। আমি বুঝতে পারি এই গানের সুরেই তারা দেশপ্রেম অনুভব করছে। বিদেশী টেলিভিশনের বিদেশী সংস্কৃতি দেখতে দেখতে আমাদের ছেলে মেয়েরা সেই সংস্কৃতিটাই এতদিন মনের মধ্যে লালন করছে। এখন যদি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়। ইতিমধ্যে দুরন্ত টিভি আমাদের শিশুদের মনে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে।
অনেকদিন থেকে মনের মধ্যে একটা অভাববোধ করছি ছেলে মেয়েদের গ্রামীন জীবনযাপনটা কেমন তা দেখানোর। কিন্তু দুরন্ত টিভি অনেকটাই আমাদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে। আমার ছেলেমেয়েরা এখন জানতে পারছে লাঙ্গল দিয়ে জমিতে চাষ করতে হয়। কিভাবে গোল্লাছুট খেলতে হয়,কিভাবে কানামাছি খেলতে হয়, কিভাবে কিশোররা লাটিম দিয়ে খেলে,কিভাবে ছেলেমেয়েরা ধান খেতের আল দিয়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় ইত্যাদি। ওদের সাথে এসব দেখতে দেখতে আমিও কখন যেন সেই ছোটবেলায় ফিরে যাই। আমার শৈশব আবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে । আমার ছেলে মেয়েদের মত আবার আমি দুরন্ত হয়ে যাই। আমি আশাবাদী দুরন্ত টেলিভিশন আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে জীবনমুখী করে গড়ে তুলবে।
শিশু ও কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য এটি একটি অন্যতম মাধ্যম।
এই টিভি চ্যানেলের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানের মধ্যে শিশুদের জানার বিষয়টা নিহিত থাকে। কিভাবে গরু লেখাটার মধ্য দিয়ে গরু আঁকা যায়, কিভাবে আইসক্রীমের কাঠিটা দিয়ে গরু বানানো যায়, কিভাবে কাগজ কেটে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা যায় ইত্যাদি। তার মানে তারা যাই দেখছে, তাই তারা শিখছে। প্রতিটা মুহূতর্ত তাদেরকে জাদুর মতো আকঁড়ে রাখছে দুরন্ত। মনে মনে জানাই দুরন্ত টিভিকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিদিন এই চ্যানেলে আমার ছেলেমেয়ে সহ আমি সকালে একটা অনুষ্ঠান দেখি ‘টিরি গিরি টক্কা’। টিরিগিরি টক্কা হচ্ছে ওই নাটকের একটি অন্যতম চরিত্র। যে কিনা ভীনগ্রহ থেকে আসে। তার অনেক ক্ষমতা। সে একটু অন্যভাবে কথা বলে। কয়েকদিন থেকে দেখি আমার ছেলেমেয়েরা ঠিক সেভাবেই কথা বলছে। তার মানে তারা অনুষ্ঠানটা অনেক এনজয় করে। আমিও উপকৃত হয়েছি তারা যখন পড়ে না ও লিখতে চায় না, আমিও তখন বলি, তুমি না এলিয়েন, তুমি না টিরিগিরি টক্কা, এলিয়েনরা সব পারে, তুমিও পারবা, তারপর দেখি আমার ছেলে দ্রুত লিখে আমাকে খাতা জমা দেয়। এই নাটকটাতে বিজ্ঞানের অনেক বিষয় জানার আছে।
সত্যি কথা কী, অনেকদিন পর আমাদের দেশে শিশু ও কিশোরদের জন্য একটি গুণগত ও মান সম্মত শিশুতোষ টেলিভিশন এলো, দুরন্ত। আমাদের শিশুরা একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাই এরকম একটা চ্যানেল খুব দরকার ছিল, বলতে পারেন এটা সময়ের দাবি। শিশুরা কোমল মনের অধিকারী, এই বয়সে তারা যা দেখে তাই শেখে। আর এটা শিশুদের জন্য একটি শিক্ষণীয় চ্যানেল। শিশু ও কিশোররা অনেক দুরন্ত হয়, আর তাদের এই দুরন্তপনা আমরা খুঁজে পাই এই চ্যানেলে।
দেশের সংস্কৃতি তারা প্রায় ভুলতে বসেছে, এই টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে হয়ত তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। কোনো এক গুণীজন সেদিন টিভিতে বলতেছিল ‘আমরা বাঙ্গালী তাই বড় হবো ঠিকই, কিনতু বাঙ্গালীয়ানা হয়ে’। তাইতো, বাঙালী পরিচয় ধারণ করবো, আর বাঙলাকে জানবো না?
আশা রাখি দুরন্ত টিভি তাদের মান ধরে রাখতে পারবে। আরও গুণগত ও মানসম্মত অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের সামনে আসবে। আর একটা অনুরোধ থাকলো, এটা যেন সবসময় শিশুতোষ টেলিভিশন চ্যানেল হয়েই থাকে। ঘন ঘন বিজ্ঞাপন থেকে যেন বিরত থাকে, আর শিশুদের বিজ্ঞাপনগুলোই যেন প্রচার করা হয়। সবশেষে বলতে চাই দুরন্ত টেলিভিশনের যাত্রা শুভ হোক। আলো ছড়াক দিকদিগন্তে।