আলফা আরজু:
মাহমুদা চৌধুরী আপা, আপনি আমাদের বাতিঘর, বটগাছ, ছায়াবৃক্ষ, আশার প্রদীপ – আর কী কী বললে যে আমাদের (নারী সাংবাদিকদের) জীবনে আপনার অবস্থান প্রকাশ করা যাবে – তা জানি না। তবে এটা খুব বুঝি, আপনি ও ফরিদা ইয়াসমিন আপা (জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক) না থাকলে – আমাদের অনেকেই কোথায় যে ভেসে যেতাম – আর রিপোর্টার হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে জীবন পার করতাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়াশুনা করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু ঠিক কিভাবে, কখন, কার কাছ থেকে রিপোর্ট বের করতে হয়, বিশেষ (স্পেশাল) রিপোর্ট এর আইডিয়া, রিপোর্ট লেখার জন্য “ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ”, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত, পরিসংখ্যান কোথায় পাবো – ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর হাতে খড়ি আপনার কাছ থেকেই।
“সোর্স” এর সাথে কিভাবে যোগাযোগ রাখতে হয় – সেটাও আপনার কাছ থেকে শেখা। আর শিখেছি, কিভাবে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও রিপোর্টিং এর মতো একটা পেশা সাথে বাচ্চা-কাচ্চা লালন করা যায়।
সাংবাদিকতা জীবনে আপনার অবদান বলে শেষ করতে পারবো না। তবে, আমার বাবার পরে আমি আপনার কাছ থেকেই আত্মবিশ্বাসী হওয়ার শিক্ষা পেয়েছি।
আপনি একজন আপা মা (নিউজ ২৪ এর আঙ্গুর নাহার মন্টি’র মতে)। আপনি আমাদের সত্যি আপা মা হয়ে আগলে রেখেছেন, পরার্মশ দিয়েছেন। খুঁজে খুঁজে আমাদের রিপোর্ট পড়ে ফোন দিয়ে বলেছেন – খুব ভালো হয়েছে। আবার কখনো বলেছেন – আরেকটু ভালো হতে পারতো – যদি তুমি এই এই বিষয়গুলো আনতে পারতে রিপোর্টে।
আপনার মনে আছে কিনা জানি না – প্রথম যেইদিন ডেইলি স্টারে আমার উন্নয়ন বিষয়ক একটা রিপোর্ট বেশ গুরুত্বের সাথে ছাপা হলো, আপনি সকালে ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন – আমার ওই দিনের এসাইনমেন্ট কী? পরে আমাকে বাসায় ডাকলেন। আপনি খুব খুশি হয়েছেন – আমার ওই রিপোর্ট পড়ে। আপনি খুব গর্বিত ইত্যাদি। আমি কী যে খুশি হয়েছিলাম আপা! বলে বুঝতে পারবো না। সাংবাদিকতা জীবনে খুব কম মানুষ পেয়েছি – যারা ভালো বলেছেন। তাই হয়তো খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম।
এইতো সেইদিন, নির্বাসনে (প্রবাস পড়ুন) আসার আগে – আপনার সাথে সারাদিন এলোমেলো ঘুরলাম, বাংলা একাডেমীর পুকুর পারে বসে কান্না-কাটি করলাম। আর আপনি আমাকে কতো কিছু বুঝালেন। আপনার এতো মায়া- এমন মমতা নিয়ে আসলে মায়েরাই পাশে দাঁড়ায়। বিপদে-আপদে আপনি যেইভাবে থেকেছেন পাশে – কোনোদিন ভুলবো না।
দুপুরে অফিসের এসাইনমেন্ট শেষ করে – আপনার স্বর্গের মতো সুন্দর সেই মগবাজারের বাসায় – লাউ তরকারি দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে পরে চা হাতে বসার ঘরে অথবা আপনার সেই বারান্দায় বসে গল্প শোনা। আপনি কীভাবে – সাংবাদিকতা শুরু করলেন, আপনার পড়াশুনা, আপনার বাবা-মা, সংসার। সূর্য-সোমা’র শৈশব ও বড় হওয়ার গল্প। কত দেশ-বিদেশ বড় বড় প্রোগ্রাম কভার করতে গেছেন। রিপোর্ট করেছেন। আপনার পছন্দের ক্ষেত্র সিনেমা, নারী ও শিশু হলেও আপনি দক্ষতার সাথে রাজনীতি, কূটনৈতিক, পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক সাংবাদিকতা করেছেন। যেই সময় আমাদের মা-খালারা ঘর থেকে বের হওয়ার কথা চিন্তা করতে পারতেন না, সেই সময় আপনি সাংবাদিকতার মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং পেশায় বিচরণ করেছেন – দাপটের সাথে।
আমি খুব করে চাই – আপনি আপনার সাংবাদিকতা জীবনের সব গল্প আমাদের জন্য, আরো আগামী প্রজন্মের জন্য লিখুন। আপনার সেইসব অভিজ্ঞতা – নতুনদের পথ দেখাবে। আপনার একেকটা দিনের অভিজ্ঞতা – নতুনদের জন্য উৎসাহ দিবে। পেশাগত কোনো কষ্ট-দুঃখ থাকলে ভুলে যাবে।
আপনি আমাদের অনেক অনেক প্রিয় একজন মানুষ। আপনি আমাদের মাঝে মা হয়ে, বড় বোন হয়ে, পথের দিশারী হয়ে, দুঃখ-কষ্টের বন্ধু হয়ে থাকুন আরও অনেক দিন। আমরা আপনাকে সেইরকম করেই সারাজীবন দেখতে চাই। নানা রঙের সুন্দর সুন্দর শাড়ীতে, হাতে এক-দুইটা চুড়ি আর গলায় আপনার পছন্দের স্টোনের মালা। লম্বা চুলে একটা বেণী।
মাহমুদা আপা, আপনি কিন্তু খুব করে নিজের যত্ন নিবেন। অনেক অনেক সিনেমা দেখবেন। বই পড়বেন আর আমাদের জন্য – আপনার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো লিখবেন।
আমাদের প্রিয়, ভীষণ প্রিয় “মাহমুদা আপা” আপনি খুব ভালো থাকুন।