ছেলেমেয়েদের মানসিক শক্তি বাড়ানো প্রয়োজন

রামিছা পারভীন প্রধান:

কয়েকদিন আগে দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছে, ক্লাসে উপস্থিত না থাকার কারণে প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায়। প্রায় দেখি বখাটেদের উত্ত্যক্ততায় মেয়েরা আত্মহত্যা করছে, আজও দেখলাম স্কুল পড়ুয়া জেমি নামের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, উত্ত্যক্তকারী এক কিশোর তার ছবি ফেসবুকে বিকৃত ভাবে আপলোড করায়। এরা প্রায় সবাই টিনএজ ছেলেমেয়ে । এই বয়সের ছেলেমেয়েরা একটু বেশী আবেগ প্রবন হয়। তারা তাদের ভাবাবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এদের যথাযথ কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

এই বিষয়টা এখন আলোচনা করা আমাদের সময়ের দাবি।

আমাদের সবার মধ্যে কম বেশী ডিপ্রেশন আছে। নানা কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে যেমন খারাপ রেজাল্ট বেকারত্ব, ব্যর্থ প্রেম, যৌন হয়রানি, অসুস্থতা ইত্যাদি। ডিপ্রেশনের কারণে আমাদের জীবন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থেমে থাকে এবং এর থেকে বের হয়ে আসতে অনেক সময় পার হয়ে যায়।

আর এর মধ্যে ঘটে যায় জীবনের আনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো। যা আমাদের কাম্য নয়। বিভিন্নজনের মানসিক শক্তি বিভিন্ন রকম। অনেকে সামান্য কিছুতে ভেঙ্গে পড়ে, আবার অনেকে শত কষ্ট, ঝড় ঝাপটা কাটিয়ে উঠেও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে যেতে পারে। অপরদিকে কম মানসিক শক্তি যাদের, তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

আবার পারিবারিক অবহেলার কারণে অনেক ছেলেমেয়ে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। কেউ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে আমাদের চার পাশের কাছের মানুষগুলোকে আগে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে, যাতে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

মেয়েরা একটু বেশি আবেগপ্রবণ। তাই বিশেষ করে অভিভাবকদেরকে বলছি, ছেলে সন্তানকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন, একটি মেয়ে সন্তানকে ঠিক সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে বড় করুন। পরিবার থেকে কোন মেয়ে মর্যাদা পেলে সমাজ ও রাষ্ট্র তাকেও সেই মর্যাদা দিবে। ভুলে যাবেন না, আপনি কিন্তু আপনার মেয়েকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন। অতএব আপনিই তাকে আলোর পথ দেখাবেন। তাকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার।

আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যেন হতাশায় না ভুগে এখন থেকে যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। কারণ আজকের ছেলে মেয়েরাই ভবিষ্যতের উজ্জ্বল নক্ষত্র।তাই কোন ছেলে মেয়ে যেন পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, দারিদ্রতাকে পরাজয় মেনে, বেকারত্ব, নেশাগ্রস্থ, বখাটেদের উত্ত্যক্ততা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যা না করে, সেজন্য তাদেরকে আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় মনোবল করে গড়ে তোলার দায়িত্বটি আমাদের সকল অভিভাবকদের পাশাপাশি আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

আমার সবসময় যে কথাটি মনে হয় যে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই জন্য প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে টিনএজ ছেলে মেয়েদের ( ১৩-১৯ বয়স) মানসিক শক্তি উন্নয়নের জন্য প্রতি সপ্তাহে অথবা প্রতি মাসে এ বিষয়ে একটা ক্লাস নেওয়া দরকার। কীভাবে আনন্দে থাকা যায়, কীভাবে চাপমুক্ত থাকা যায়, কীভাবে ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কীভাবে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো জয় করা যায়, সে বিষয়ের উপর শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হবে। ছাত্ররা কীভাবে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে সে পথ দেখাতে হবে শিক্ষকদের। আমার মনে হয় তাতে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হবে।

তাই জীবনের আন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। অনেক ছেলেমেয়ে আছে, যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে। জীবনে বাধা, বির্পযয় আসতেই পারে, তাই বলে নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারানো যাবে না। যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশন, অথবা এই বিষয়গুলো রিলেটেড বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে তারা নিজেরাই নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে।

আমি যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করি, সেখানে ‘নেশামুক্ত যুবসমাজ’ শিরোনামে একটা কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ড: মোহিত কামাল। আমি আশাবাদী, তার মূল্যবান বক্তব্য শুনে শিক্ষার্থীরা কেউ কখনও নেশাগ্রসত হবে না। এইরকম কর্মসূচি যদি প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত ছেলেমেয়েরা কিছুটা হলেও মানসিক শক্তি অর্জন করবে। সর্বোপরি একটি ছেলেমেয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

সন্তানরা ভুল করলে বা সমস্যায় পড়লে অভিভাবকদের তাদের সাথে কউন্সেলিং করতে হবে, গালিগালাজ করা যাবে না, বোঝাতে হবে, যাতে তারা ছোটবেলা থেকে নিজেদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে পারে। তাহলে জীবনে কখনও তারা নিরাশ হবে না, বরং জীবন যদি তাদের সাতবার ফেলে দেয়, তারা আটবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.