কালামরে কুলসুম বিশ্বাস করে ক্যামনে?

সাজ্জাদ হোসেন:

কী যে করি বুইঝ্যা পাইতাছি না। খুশি খুশিও লাগতাছে। আবার চিন্তাও লাগতাছে। আগের সোয়ামী, আগের ভাতার কালাম আমারে আবার বিয়া করবার চায়। খুশি না অইয়া পারি! হেইদিন ফোন দিছে। হের আগে চিডি পাডাইছে।
‘কুলসুম, আমি তরে ফিরা বিয়া করবার চাই। আগে কী রাগারাগি অইছিল না অইছিল হেইগুলা সব বাদ। তুই তর বুইড়া জামাইরে তালাক দে। হে কি তর যত্ন নিবার পারে? আমি তর লাইগ্য ছয় মাসের মইধ্যে নতুন ঘর তুলতাছি। তুই এর মইধ্যে সব গুছাইয়া ল। ছালেহারে আমি ছাইড়া দিছি। আমি দেখলাম তর কথাই ঠিক। হে বহুত খারাপ মাইয়া। হেরে বাচ্চাসহ বিদায় করছি। আমাগো আর কোন সমস্যা নাই। তুই আর না করিস না।’

আরও কত রসের আলাপ।
কালাম খুব ভুল কয় নাই। এহন যে বুইড়া ভাতারের ঘর করতাছি হে খালি ভাতটাই দেয়। আর কিছু দিবার পারে না। বুইড়ার লগে আমার মিল পড়ে না। তয় আর যাই হউক, ভাতের খিদা একদমই সহ্য করবার পারি না। শরীল কাঁপতে থাহে। হুঁশ-জ্ঞান থাহে না। বুইড়া আমারে হেই কষ্ট একদিনও দেয় নাই। এইহানে থাকলে এই কষ্ট অইবও না কোনদিন, এইডাও ভালা কইরা জানি। ভাতের খিদার কষ্ট যে কী জিনিস হেইডা হেই সময় বুঝছি, মাঝে যেই সময় আমার কোন ভাতার আছিল না।

কিন্তু মনের একটা স্বাদ-আল্লাদ আছে না? আমি তো এহনই বুইড়া হইয়া যাই নাই। পথে হাঁটলে কত বেডায় চায়া থাহে। কালাম এহনও অনেক জোয়ান-তাগড়া আছে। হেই সময় হের খালাত্ত বইন কুটনামী কইরা আমারে খেদানির ব্যবস্থা করছিল। মাইয়া বহুত শয়তান। যাউকগা, যেডা গেছে, গেছে। ভাবতাছি বুইড়ারে ফালাইয়া যামুগা। কিন্তু ডরও করতাছে। কালাম কান কথা খুব বিশ্বাস করে, মাইয়া মাইনষের লাহান। হের বুদ্ধি-সুদ্ধিও কম। তয় বুদ্ধি যে এক্কেবারে কম হেইডাই ক্যামনে কই! হেইদিন ফোনে কথা কওনের সময় কইলাম, ‌তোমারে বিশ্বাস করি না। এইবার বিয়া করতে চাইলে দেনমোহর অনেক বাড়াইয়া দেওন লাগবো। কোন ট্যাকা-পইসা বাকি রাখন যাইতো না।

হে কয়, দেনমোহর আগের মতোই দিব। হেইডা এহন বাড়াইতে পারতো না। আমি যদি হেরে আগের মতো সুখ-শান্তি দিতাম পারি তাইলে পরে আমার নামে হের জমিজিরাত সব লেইখ্যা দিব। আমি কইলাম, বাজারে সব জিনিসেরই তো দাম বাইড়া গেছে। দশ ট্যাকার রিক্সা ভাড়া বিশ ট্যাকা অইছে, ৩০ ট্যাকার পেঁয়াইজ ৮০ ট্যাকা অইছে। তাইলে দেনমোহর বাড়াইবেন না ক্যান? হে কয়, হের ব্যবসা ভালা চলতাছে না। আয়-রোজগার বাড়লে পরে চিন্তা কইরা দেখবে। আমি কইলাম, তুমি যে কইতাছ সব লেইখ্যা দিবা, তাইলে বিয়া করনের সময়ই লেইখ্যা দিবা। হে রাজি অয় না। হে কয়, বিয়ার এক বছর পরে লেইখ্যা দিব। আমি হে’র এক বছরের প্যাঁচ বুঝতাছি না।

ভাইব্যা কূল পাইতাছি না কী করি। বুইড়া আমারে কোনদিন মা বানাইতে পারতো না। হেইডা বুইড়াও জানে, আমিও জানি। ডাক্তার কইছে, আমার কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা বুইড়ার। কিন্তু আমি মা অইবার চাই। এতডা বছর অইছে, বুকটা খালি খালি লাগে। ছালেহা ইতরামি না করলে আমি অনেক আগেই কালামের বাচ্চার মা অইতে পারতাম। ছালেহারও তো শুনছি দুই বাচ্চা অইছে।

দিনকাল মোডেই ভালা যাইতাছে না। কেউরে বিশ্বাস করন যায় না। কালাম যদি ছয় মাস পরে আমারে আবার ভাগাইয়া দেয়! তহন তো বুইড়া আমারে আর বিয়া করতো না। পারলে ঝাডা মাইরা ফিরাইয়া দিব। মাইনষেই কী কইব! বুইড়া তো আর আমারে নিজে থাইক্যা ছাড়তাছে না। গেলে আমি বুইড়ারে ছাইড়া যামু। কালাম যদি কোন কারণে চোখ উল্ডাইয়া দেয়, কোন মুখে বুইড়ার কাছে ফিরা আইমু?

নাহ, মাথাডা ক্যান্ ক্যান্ করতাছে। হায় আল্লাহ, তুমিই কও আমি এহন কী করি? বুইড়ার কাছেই থাকমু, না কালামের কাছে যামু। ভাতের চিন্তুা করমু, নাকি মা অউনের চিন্তা করমু। আমি তো দুইডাই চাই। কালামরে আমি বিশ্বাস করি ক্যামনে?!
[রায়েরবাজার, বুধবার, ২২ নভেম্বর,২০১৭]

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.