রিতা রায় মিঠু:
সিলেট জেলায় একটি বাড়ি আছে। বাড়িটি বানাতে খরচ হয়েছে তিনশ কোটি টাকা। বাড়িতে বেড রুম ২৯টি। বাড়ি বাংলাদেশের মাটিতে তৈরি হলেও বাড়ির ডেকোরেশান, আসবাবপত্র, প্রতিটি রুমের সাজসজ্জায় ইসলামিক দেশগুলোর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি অনুসরণ করা হয়েছে। বাড়ির মালিকের নিজস্ব হেলিকপ্টার আছে, বাড়িতে হেলিপ্যাড আছে। এই বাড়ির সংবাদ নাকি টিভি, সংবাদপত্রেও প্রচারিত হয়েছে।
যিনি বাড়িটি সমন্ধে আমায় গল্প শোনাচ্ছিলেন, তিনি এই বাড়ির মালিকের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আই ফোন খুলে আমায় বাড়ির ভিডিও দেখালেন। বিশাল বড় বড় কক্ষ, দেখে মনে হচ্ছিল সৌদি বাদশাহর অন্দরমহল। ভিডিও ক্লিপে তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালককেও স্ত্রীসহ দেখা গেলো। উপস্থিত বাংলাদেশী অতিথিবৃন্দের মধ্যে নারীগণের সাজপোশাক ইরান, আফগানিস্তানের মত। নরগণ স্যুটেড বুটেড। যেহেতু ৩০০ কোটি টাকার বাড়ি, স্বাভাবিকভাবেই বাড়িতে আগত অতিথিবৃন্দও সেই মর্যাদার।
ভিডিও ক্লিপে সবচে পছন্দ হয়েছে যে দৃশ্যঃ ইরান-আফগান ঘরানার পোশাকে সজ্জিত নারীগণ প্রতি কক্ষে প্রবেশ করছেন, একজন একজন করে প্রত্যেকেই সৌদি বিছানায় কখনও আধশোয়া হয়ে, কখনওবা সৌদি বেগম স্টাইলে পোজ দিয়ে ‘সেলফি’ তুলছেন।
যিনি ভিডিও দেখাচ্ছিলেন, তিনি নিজেও মহাধনী। তাঁর নিজের কয়েকটি বাড়ি আছে। দেড় একর জমির উপর তাঁর প্রথম বাড়ি, আজ থেকে কুড়ি বছর আগে চার কোটি টাকা খরচ করে বানানো হয়েছিল। অথচ তিনি কত আগ্রহের সাথে বলে যাচ্ছেন, ” আমার বন্ধুর বাড়ি বানাতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, ইসলামী ঐতিহ্যে তৈরী ২৯ বেডরুম,নিজের হেলিকপ্টার—-
শুনছিলাম আর ভাবছিলাম, “পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো সেই ঘরের মালিক নই”।
নিজের মনেই বলছিলাম, “আপনার বন্ধু ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বাড়ি বানাতে। বাঙালি ঐতিহ্য, বাঙালি সংস্কৃতি পায়ে ঠেলে ধার করে নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ইসলামিক দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি! আপনার বন্ধুর মৃত্যুর পর এই বাড়ি ঘর, ধার করা ইসলামী ঐতিহ্য সবই পড়ে থাকবে! সুরক্ষিত প্রাসাদের ধারে কাছে কোন ভিখিরিও ঘেঁষতে পারবে না। কেউ থাকবে না, অর্থ অপচয়ের চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে এই প্রাসাদ।কারো কোন কাজে আসবে না। অথচ ১০ কোটি টাকায় ১০ বেডরুমের বাড়ি বানিয়ে ২৯০ কোটি টাকা জনকল্যাণে দান করতে পারতেন তিনি।
কল্যাণ কল্যাণ বয়ে আনে, অপচয় নিয়ে আসে অকল্যাণ!”