কাকলী রানী দাস:
রোবটের ওড়না পরা নিয়ে সবাই দেখি খুব অবাক হচ্ছে আর আমি অবাক হচ্ছি মানুষগুলোর বোকামি দেখে। যেদেশে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ একটা অপরাধকেও বেশিরভাগ সাধারণ ও অসাধারণ মানুষ নারীদের পোষাকের ফলাফল মনে করে এবং এই অজুহাত দেখিয়ে অপরাধীকে রক্ষা করে, সেদেশে এরপর নারীর ছবি, স্ত্রী লিঙ্গের পশুপাখি মানে গরু-ছাগল, হাঁস- মুরগী, গাছ, ইট পাথরকে যে নিকট ভবিষ্যতে ওড়না পরানো হবে – সেটাতে তো অবাক হবার কিছু নেই।
আর যারা ধর্মের দোহাই তুলে মেয়েদেরকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য পর্দার কথা বলেন – তাদের বলছি, সমস্যা নারী শরীরে নয়, সমস্যা আপনাদের মস্তিকে। একজন নারীর পুরো শরীর কাপড় দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে যদি লোহার সিন্দুকেও রাখা হয়, আপনাদের মতো মুমিন জনগণ সিন্দুকের ঠিক কোন জায়গায় নারীর কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকতে পারে তা অনুমান করবেন, আর মনে মনে হাত-পা অনেক কিছুরই ব্যবহার করবেন। আর যখনই তাদের সামনে পাবেন তখনই ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
মুমিন জনগণ এই জায়গায় হয়তো দলে দলে আওয়াজ তুলে বলবেন যে, তাইলে কোনো পুরুষের সামনে আসার দরকার কি?? উত্তর লিখতে গিয়ে মুখে খারাপ কথা আসছে তাই লিখলাম না।
ইদানিং ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের এমনকি যাদের বয়স এক বছরও হয়নি, তাদেরকেও দেখি বাবা-মা হিজাব রোরখা পরিয়ে বাইরে আনেন। তাদের মুখে একটা চাপা গর্ব নিয়ে আশেপাশের মানুষদের দিকে তাকান আর এমন ভাবখানা করেন – দেখ, আমার ছোট্ট বাচ্চাটাও কেমন পর্দা করে! এদের ডেকে বলতে ইচ্ছে করে, আপনাদের কাল্পনিক বেহেশত যেতে এই বাচ্চাটার তো এখনও দেরি আছে, তার আগেই কেন ওকে দোজখের আগুনে পোড়াচ্ছেন?
বাংলাদের মতো একটি দেশে যেখানে বছরে প্রায় নয় মাসই গরম সেখানে ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েগুলোর স্বাভাবিক বিকাশ আর বৃদ্ধি নষ্ট করেছেন কেন? নিজের হূরপরীর সঙ্গ নিশ্চিত করার জন্য? যেই শিশু কেবল একটা শিশু শরীর এখন নারীই হয়ে উঠেনি, তাকেও মোড়কে ঢেকে একটা মাংসপিণ্ডই বানাতে হবে? তবে বুঝতে পারছেন যে সমস্যাটা নারী শরীরে নয়, সমস্যাটা আপনার জানা বোঝায়।
নারীর শরীরে স্তন দুইটা আর যোনি একটা, কিন্তু আপনাদের মস্তিকে এদের সংখ্যা হাজার হাজার, একদম পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত – তাই কোনকিছুর পর্দা দরকার হলে সেটা নারীর শরীরের না, সেটা মুমনি জনগণদের মস্তিকের গু পরিস্কার করা দরকার – নইলে শুধু রোবট কেন এরা মায়ের মুখ দেখলেও ঠিক থাকতে পারবে না।
(শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেল যে, রোবটের গলা থেকে ওড়নাটা সরানো হয়েছে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা না হলে হয়তো সরানোর কথা ভাবতেনই না কর্তৃপক্ষ!)