আসমা খুশবু:
মায়ের শরীরের দগদগে দাগ শুকোতে না শুকোতে, বাবার ছুঁড়ে ফেলা ছোট্ট শিশুটিকে পরম মমতায় বুকে আগলে নিয়েছিল মায়েরই বাবা, একজন পুরুষ। বেঁচে থাকার প্রতিটি দিন ভালোবাসায় পূর্ণ করেছেন শিশুটির জীবন।
ছোট্ট শিশুটির চারপাশ আগলে রাখে ভালোবাসার মানুষেরা। অশুভ শক্তির দেখা তখনও মেলেনি। শিক্ষার জন্য স্কুল অপরিহার্য। শিক্ষকদের ভালোবাসায় আরেক জীবন ভরে ওঠে। কত প্রাণবন্ত উচ্ছল সে দিনগুলি!
কৈশোরে পা দেওয়া সেই শিশুটির ভুল ভাঙে শিক্ষকের ভিন্ন রূপ দেখে। শ্রেণীকক্ষ ভর্তি শিক্ষার্থীদের সামনে পড়া ধরার নামে চলে শিক্ষকের কিশোরী মেয়েদের পিঠে হাত দিয়ে ব্রা’র ফিতা স্পর্শের চেষ্টা। যেদিন তার সাথে এমনটি হয়, ঘিনঘিনে স্পর্শে কুঁকড়ে যায় সে, মেলাতে পারে না অন্য শিক্ষকদের সাথে, যাঁরা সন্তানতুল্য আচরণে জীবনে স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছেন। তবে কি একেই বলে মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ!
স্কুল – কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক ছেলে বন্ধু জোটে তার। এই বন্ধুরা এক একটি সুন্দরের প্রতীক তার কাছে, ভালোবাসার আশ্রয়, নির্ভরতার অপর নাম। বাসে, স্কুটারে এদের এক একটি হাত কতো কালো হাতের স্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। বছরের পর বছর যোগাযোগহীনতা একটুও পারে না সম্পর্কের উষ্ণতা কমাতে! কঠিন সময়ে এই বন্ধুদের কেউ কেউ সদ্য পাওয়া টিউশনির টাকাটা তুলে দিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে তার হাতে। ওরাও পুরুষ ছিল!
আজ কলম চলে, যার অনুপ্রেরণায় সেও তো একজন পুরুষ। তুমি পারবে, লেখো বেশি করে, সমাজের অসঙ্গতিকে সপাটে চড় কষাও, এই উক্তিগুলো একজন পুরুষেরই!
ভালোবাসায় পাশে দাঁড়িয়ে যে ভরসার কাঁধ এগিয়ে দেয় সবসময় সেও একজন প্রেমিক পুরুষ!
বহুদিন আগে ছেড়ে যাওয়া বাবার কথা ভাবলে মনে হয়, মায়ের একজন পুরুষ সঙ্গীর বড্ড প্রয়োজন ছিল, মানে মানুষ সঙ্গীর! এ অনুভব তার একান্ত নিজের।
এমনি জীবনভর কতো মানুষের দেখা সে পেয়েছে, যে পুরুষেরা সত্যিকারের মানুষ ছিল। তবে ওই যে মুদ্রার ওপিঠের পুরুষেরা! তারাও কারও বাবা, ভাই, প্রেমিক, বন্ধু। তাদের দ্বারাই ঘটছে কতো আঁতকে ওঠার মতো ঘটনা!
পুরুষ – নারী বিভেদ দিয়ে চারপাশে ঘৃণার বসতি গড়ে ওঠে। একজন নারী যখন পুরুষের অসঙ্গতি তুলে ধরেন, তার নিশ্চয়ই যথাযথ কারণ থাকে, কিন্তু তা বিশ্লষণ না করে নারীটির চরিত্র উদ্ধারে নামি আমরা। এ অবস্থার অবসান হোক। পুরুষেরা মানুষ হোক। নারী – পুরুষের সহাবস্থানে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে উঠুক আগামী প্রজন্মের জন্য।।