আঙুলখানা মেয়েটির প্রতিই উঠবে

তানবীরা তালুকদার:

একটা মেয়ে শুধু মেয়ে বলেই সমাজের সর্বস্তরে কীরকম ধর্ষণের শিকার হতে পারে, অপু বিশ্বাস তার উজ্জল প্রমাণ। অথচ দায়িত্বহীন আচরণ করেও শাকিব সর্ব জায়গায় সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র পুরুষ বলে। ব্যক্তিগতভাবে অপু বিশ্বাসকে আমি চিনি না, শাকিব খানকেও আমি চিনি না। তাদের ব্যক্তিগত ব্যপার নিয়ে মতামত দেয়ার আমি কেউ না। কিন্তু এটা আবারও প্রমাণিত, একটি মেয়ে সমাজের যে স্তরে, যে পেশায়ই থাকুক না, প্রচলিত প্রথা’র বাইরে চলেছো তো প্রতিটি প্রাণী তোমাকে ছিঁড়ে খেতে দ্বিধা করবে না। অপু বিশ্বাসের মতো স্বনামধন্য নায়িকা’রই যখন মিডিয়া এই দশা করে ছেড়ে দেয়, তখন সাধারণ অবস্থার মেয়েদের দুর্দশা কল্পনায় দেখতে পাই।

পত্রিকা পড়ে জাতি যা জানতে পারলো:

শাকিব আর অপু জীবনের সাধারণ নিয়ম মেনে দু’জন দুজনের প্রেমে পরেছিলো। যার ফলশ্রুতিতে দু’জন বিয়ে করে।
ক) বিয়ে করতে অপু বিশ্বাস থেকে অপু ইমা খানে রুপান্তরিত হয়। শাকিব খান – শাকিব খানই থাকে।
খ) তাদের এক সন্তান হয় তাই অপু কাজ বন্ধ করে দেয় কিন্তু শাকিব কাজ করত থাকে।
গ) অপু আর ছেলে এক বাসায় থাকে যেহেতু অপু’র বিয়ে হয়েছে, ছেলে হয়েছে। শাকিব খান স্ত্রী আর সন্তানের সাথে থাকে না কারণ সম্ভবত পুরুষের বিয়ে হলেই কি আর না হলেই কি? তাদের বাসায় না থাকা দোষের কিছু নয়
ঘ) শাকিব শ্যুটিং এর কাজে ছেলে রেখে ব্যাঙ্কক যেতেই পারে কিন্তু অপু চিকিৎসার জন্যে কোলকাতা যেতে পারে না।
ঙ) সাংবাদিকরা আরও খবর নিয়ে জানতে পেরেছে, অপু মাঝে মাঝেই “ছেলে”কে বাসায় রেখে একা বাইরে যায়!!!! শাকিব, “বউ- ছেলে” বাড়িতে রেখে একা বাইরে অবশ্যই যেতে পারে কিন্তু অপু!!!! কখনই না।
এই পোলা “হিরো” তাও দুই বাংলায়? তথা রোল মডেল! হায় আমার কপাল! নাম্বার ওয়ান শাকিব খান!

যে সাংবাদিক’রা এই সংবাদগুলো এই ভাষায়- এই চিন্তায় লেখে তারা জাতি’র বিবেক না আয়না? তারা পাবলিকদের ব্রেইন ওয়াশ করে, নাকি তারা নিজেরা ব্রেইন ওয়াশড বলে এভাবে ভাবে এবং লেখে? কী সমাজ ব্যবস্থায় আমরা বাস করি তা খবরের কাগজ এর হেডিং পড়লেই জানা যায়, ভেতরের কথা না পড়লেও চলবে। সমস্ত কিছু মেয়েদেরকে আক্রমণ করে, আজও যেনো শরৎ বাবুর যুগে পরে আছি।
হোয়াট এন এন্টারটেইনমেন্ট – আলাদা সিনেমা’র দরকার কি? গোটা দেশটাই সিনেমা বাবা।

যদিও পেছনে কথা থেকেই যায় ……

“অপু বিশ্বাস” বাংলাদেশ চলচিত্রের একজন স্বনামধন্য নায়িকা। বাংলাদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে তিনি খুব সাহসী একটি “পেশা”কে নির্বাচন করেছন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে যথেষ্ট প্রিভিলেজড। প্রকৃতির রীতি মেনে জীবনে প্রেম আসে আর নানা কারণে সে প্রেম শেষ পর্যন্ত অনেকেরই তিক্ততায় গড়ায়।
মানুষের জীবনে এটা এমন কিছু অভিনব ঘটনাও নয়। তার সাথে তার স্বামীর মনোমালিন্য হতে পারে, বিবাহ বিচ্ছেদ ও সন্তানের অধিকারের দাবি নিয়ে মতপার্থক্য হওয়াটাও খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। সে সব মতপার্থক্যকে মেটানোর জন্যে, “আইন” আছে, “আদালত” আছে, “সালিশ” আছে। টিভি চ্যানেল কবে থেকে স্বামী – স্ত্রী’র মনোমালিন্য মধ্যস্থতা করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো? তিনি আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে কেন নাটকের আশ্রয় নিলেন?

যে কীটস্য কীট তার ভালবাসার দাবি, সন্তানের কথা অস্বীকার করে, পাশে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কোনো আত্মমর্যাদা জ্ঞান থাকা মেয়ে কী করে তার পরিচয়ে তার আত্মজকে বড় করতে পারে? ভুল করে যদি ভুল হয়েও যায়, ভুল তো ভুলই, প্রেমে মানুষের ভুল হয়ই। সেই ভুলের পরিচয়কে সারা জীবন টেনে বেড়ানোর জন্যে যে মেয়ে পাবলিকলি টিভিতে কান্নাকাটি করতে পারে, তার জন্যে কোন প্রকার সমবেদনা বোধ করছি না। কোন কারণেই নয়।

আইনের দরজায় না গিয়ে, টিভির দরজায় কেনো গেলেন অপু বিশ্বাস? আপনাকে যে অপমান করা হলো, তার প্রতিকার না চেয়ে করুণা কেনো চাইলেন? এ ধরনের নিম্ন শ্রেণী’র পশু যদি তার সন্তানের পরিচয় নিজেও দাবি করে, যে কোনো আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে তা সমযার্দায় অস্বীকার করতো।

অপু বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে বড় করতে, মানুষ করতে – প্রতারক শাকিবের কী ভূমিকা থাকতে পারে? হাজার হাজার সিঙ্গেল মা তার সন্তানকে সফলতার সাথে পরম মমতায় যত্নে বড় করে যাচ্ছেন দেশে ও বিদেশে। আপনি তাদের গল্প জানেন?

আজ যদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, সামাজিকভাবে অত্যাচারিত, অর্থনৈতিক ভাবে অপ্রতিষ্ঠিত, পারিবারিক সমর্থন ছাড়া কোন মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পরে কান্নাকাটি করতো, তাও এক ধরনের মমতা অনুভব করতাম; কিন্তু “নো মের্সি” ফর “অপু বিশ্বাস”। প্রতিষ্ঠিত নারী’র নামের কলঙ্ক আপনি। নিজেকে নিয়ে অন্যকে এভাবে খেলার সুযোগ না দিলেই কি নয়?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.