মালবিকা শীলা:
মেয়েদের নিয়ে অনেক লিখেছি, আরো লিখবো। লক্ষ্য করলাম, নারীদের নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি পুরো পুরুষ জাতিকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে বসে আছি। আমাদের জীবনে পুরুষ তো এতোটা উপেক্ষার পাত্র হওয়ার কথা ছিল না। মানুষ হিসেবে সমস্ত বোধ, আনন্দ, ভালোলাগা সব নারী-পুরুষ সমানভাবেই অনুভব করে। একটি গাড়ি চালাতে যেরকম দুপাশের চাকার সমান গুরুত্ব থাকে, ঠিক তেমনি একটি সম্পর্ক ঠিকঠাক মতো চালাতে গেলে নারী-পুরুষ দুজনের সমান অবদান থাকতে হয়।
হ্যাঁ, এটা সত্যি মেয়েরা অনেক আগে থেকে নিগৃহিত হয়ে এসেছে। এর সাথে এটাও সত্যি, অনেক নারী প্রতিবাদ করেনি, মুখ বুঁজে সয়ে গেছে। কিছু নারী প্রতিবাদ করতে গিয়ে সমাজের (নারী-পুরুষ উভয়েরই) চক্ষুশূল হয়েছে। তাই বলে পুরুষ নিগ্রহও কিন্তু কম হয়নি বা হচ্ছে না! কিন্তু ওই যে, শক্তপোক্ত পুরুষ, ঘরে বউয়ের হাতে পিটুনি খেয়েছে, এই কথা শুনলে সমাজের সুধীজন তো ওকে টিটকারি দিতে দিতেই মেরে ফেলবে! কিল খেয়ে কিল সম্ভবত পুরুষই হজম করে বেশি।
নারী মায়ের জাত, কুপুত্র হতেই পারে কিন্তু কু-মাতা কভি নেহি! এ কেমন কথা? পোলায় অসভ্যতা করবে, আর মা সু-মাতা হওয়ার জন্য এগুলো সহ্য করবেন! কিন্তু কেন? আমি তো বলি কুপুত্রকে মা নিজে দরাজ হাতে খড়মপেটা করলে সে পুরোপুরি “সু” না হলেও, অন্তত “কু” কম হবে।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা কী শিখিয়েছি? আজ শিক্ষিত, রুচিশীল প্রজন্মের জায়গায় হতাশ আর সুবিধাবাদী ভেড়ার পালের মতো প্রজন্ম জন্ম দেওয়ার দায়টা কার?
আমরাই কি ছেলেদের বোঝাইনি যে, তুমি পুরুষ, তোমার কাঁধে অনেক দায় দায়িত্ব চাপবে, তোমাকে পড়তে হবে, বিশাল কিছু হতে হবে!
আমরাই কি মেয়েদের বলিনি, নারী হতে হলে সহনশীল হতে হবে, না খেয়ে হলেও অভিযোগ তুলবে না, জোরে হাসবে না, প্রতিবাদ করবে না, যতো যা-ই ঘটুক মানিয়ে চলবে!
নারীপুরুষের বিভাজন তো আমরাই বানিয়েছি। ছেলেদের পড়াশোনা করতেই হবে, আর মেয়েদের পড়াশোনা তেমন না করলেও চলবে!
কেন আমরা বলিনি, সংসারে দুজনকেই আয় রোজগার আর ঘরের কাজ সমানভাবে করতে হবে? আমরা কেন আমাদের ছেলেমেয়ে দুইজনকেই পড়াশোনা আর ঘরের কাজ একসাথে শেখাইনি? কেন খেলাধুলা, বইপড়া, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি সমান সমান করে চর্চা করাইনি?
আজ ঘাড় ধরে হেঁসেলে ঢোকানো মেয়েদের কষ্ট দেখে আমরা হাহাকার করি। আজ আত্মম্ভরি ছেলেদের দেখে আমরা ছিঃ ছিঃ করি। ওরা কি নিজেরা নিজেরা এভাবে বেড়ে উঠেছে? এই ফ্র্যাংকেস্টাইন তৈরির দায় কি আমরা নিজেরা অস্বীকার করতে পারি? পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার আমরাও কি এক একজন প্রতিনিধি নই?