শাফিনেওয়াজ শিপু:
খুব তাড়া ছিলো টিউবে উঠার, যেইভাবে হোক গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হবে। উঠে পড়লাম এবং কপাল ভালো ছিলো বলে একটি খালি সিটও পেয়েছিলাম।
হঠাৎ করে দেখি আমার পাশের সিটে বসা একজন ভিনদেশী মেয়ে আমাকে বলছেন, “আমি তোমাকে চিনি।” তখন আমি বললাম, “আপনি কি আমাকে বলছেন?? কিভাবে চিনেন?”
মেয়েটি তখন বললো, “বেশ কিছুদিন আগে তুমি হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় একটি দোকানের স্টাফকে অনেক বকা দিয়েছিলে, কারণ সেই ছেলেটি অনেক বাজে কমেন্ট করেছিলো কাস্টমারদের সাথে, আমি তখন ঐ দোকানের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তার পাশের কফি শপটাতে আমি কাজ করি। ভিন্ন ভাষা হওয়াতে অনেক কথাই বুঝতে পারছিলাম না ঐ সময়ে। পরে ঐ দোকানের আরেক স্টাফ আমাকে ইংরেজিতে বুঝিয়ে বললো। খুব ভালো করেছো সেই লোকটাকে বকা দিয়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে।”
বিশ্বাস করুন আমি না ঐ মুহূর্তে এই মেয়েটির কথা শুনে এতোটাই অবাক হয়েছিলাম বুঝতে পারছিলাম না কী বলবো ওকে। এরপর সে আরও বললো, “তুমি তো দেখি অনেক সাহসী মেয়ে। তোমাদের দেশের মেয়েরা মনে হয় অনেক প্রতিবাদ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাই না?”
সাথে সাথে আমিও বললাম, “না, আমাদের দেশে মেয়েরা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকে, যার কারণে কোনকিছুর প্রতিবাদ করতে পারে না। আর প্রতিবাদ করেই বা কী হবে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কখনো মেয়েদের বাক স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না। আমাদের দেশের মেয়েদের তো “সে” বলে কিছু নেই। শুধু তাই নয়, এমনকি আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থা এতোটাই খারাপ যে, কোনো কিছুরই ঠিকমতো বিচার হয় না। সেদিন প্রতিবাদ করতে পেরেছিলাম এই কারণে যে, ইংল্যান্ডের পুলিশ ব্যবস্থা নাগরিক বান্ধব, যেকোনো সময় যদি তুমি কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ো, তোমার জন্য পুলিশ হাজির যেকোনো মুহূর্তে। যে অন্যায় করবে অবশ্যই সে শাস্তি পেতে বাধ্য। এজন্য আমি ভয় পাই না কোনো কিছুর প্রতিবাদ করতে।”
এরপর মেয়েটি মৃদু হাসি দিয়ে বললো, “তোমার মতো মেয়ে দরকার তোমাদের দেশে! ওকে দেখা হবে, ভালো থেকো।” এই কথাটি বলে মেয়েটি তার গন্তব্যস্থলে নেমে গেলো। খুব ভালো লাগলো মেয়েটির কথা শুনে, এক কথায় এক অন্যরকম অনুভূতি।
আসলে বেশ কিছুদিন আগে ইস্ট লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় গিয়েছিলাম একটি কাজে। কিন্তু ২৫ মিনিট আগে পৌঁছানোর কারণে সেই ফাঁকে ঢু মেরে ছিলাম কাপড়ের দোকানে। ওমা!! কিছুক্ষণ কাপড় দেখার পর দেখতে পেলাম এই দোকানের একজন স্টাফ দুইজন ভিনদেশী কাস্টমারকে দেখে খুবই বাজে ধরনের কমেন্ট করছিলো, যা সহ্যের বাহিরে ছিলো। তারা বাংলা বুঝতে পারছিলো না বলে খুব একটা সায় দিচ্ছিলো না। কিন্তু বিশ্বাস করুন এতোটাই বাজে কমেন্ট করছিলো ঐ সময়ে সহ্য করতে না পেরে আমি সাথে সাথে লোকটাকে ধমক দিয়ে বললাম, “ কী সমস্যা আপনার? আরেকবার যদি এই ধরনের কমেন্ট করেন তাহলে ৯৯৯ এ কল দিবো। পুলিশের মার না খেলে আপনাদের মতো লোকদের শিক্ষা হয় না। ভিনদেশী মেয়ে বলে মুখে যা আসছে তাই বলছেন। ওকে ফাইন!! সাহস থাকলে ইংরেজিতে বলুন। কী হলো, বলুন?”
এরপর লোকটা সবার সামনে বললো, “ আপা! আমাকে মাফ করে দিন। আর করবো না।” তখন আমি বললাম, “আমাকে সরি বলে কী লাভ, ওদেরকে বলুন।” কিন্তু কোনো লাভ হলো না লোকটির সাথে কথা বলতে বলতে সেই কাস্টমারগুলো অন্য দোকানে চলে গিয়েছিলো। চিন্তা করুন, আমরা বাঙ্গালীরা কতোটা খারাপ যে, যেইখানে যাই না কেন আমাদের স্বভাব-চরিত্র জীবনেও পরিবর্তন হবে না, হোক না সেটা উন্নত দেশে। আসলে এগুলো আমাদের রক্তের সাথে সাথে মিশে আছে। প্রতিক্ষণে ক্ষণে মেয়েদেরকে ছোটো করাটাই এই ধরনের মানুষদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধিক্কার জানাই এদের…………!!!