“কন্ঠশিল্পী মিলা, বাইরে এতো স্মার্ট, ভিতরে নয় কেন?”

ডাঃ শিরীন সাবিহা তন্বী:

“রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া” কিংবা “বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস বাপুরে” চরম মিউজিকাল গানের তালে তালে যখন সমগ্র বাংলাদেশের বহু শ্রোতা দর্শকের কোমর নেচেছিল, তখন এই গানের ভুবন কাঁপানো শিল্পী ইনবর্ন স্টাইলিস লাগতো যে মেয়েটিকে, তার ভেতরে এমন আনস্মার্টনেস লুকিয়ে আছে, আমি সত্যি জানতাম না।

নাহ! আমি বলছি না, ভালোবাসা অন্যায়। ভালোবাসার মানুষ প্রতারণা করলে, সেটাও যিনি প্রতারিত হোন, তার কোনো অন্যায় নয়। পারিবারিক সহিংসতা হলে যিনি সহিংসতার শিকার, তার কোন অন্যায় নাই।

তবে তিনি যদি তার অবস্থার পরিবর্তন করতে না চান, সহিংসতা বন্ধে চেষ্টা না করেন, সর্বোপরি সহিংস প্রতারকের প্রতি ভালোবাসায় গলে গলে পড়েন, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সেভ করতে পারেন না, তাকে ক্ষমা করার কোনো কারণ খুঁজে পাই না।

স্বামীর অত্যাচারের শিকার মিলা আজ তার পারিবারিক জীবন নিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিলো।
আমি তার চেহারা দেখেই অবাক। চেহারা যদি ভালোবাসার মানুষের সোহাগ নয়, অত্যাচারের চিহ্ন বহন করে, তবে কি আর সেটা ভালোবাসা থাকে?

সুদীর্ঘ দশ বছরের প্রেম মিলার। তবুও বিয়ের আগের দিন পনের লক্ষ টাকা যৌতুক চেয়েছে তার প্রেমিক। যৌতুক দিতে রাজী না হওয়ায় যেদিন বিয়ে ভেঙ্গে দিল একটি শিক্ষিত সচেতন মেয়ের জন্য এই ঘটনাই কি সব থেকে বড় এলার্ম ছিল না যে এই ছেলে তার স্বামী হবার যোগ্য না!

নাহ। এরপরেও মিলা তাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের তের দিনের দিন পরকীয়ার প্রমাণ পেলো মিলা। এরপর অশান্তি, মারধর এমনকি পার্সোনাল পিস্তল নিয়ে খুন করার চেষ্টা। ওর স্বামীর পরিবার, শাশুড়ী, ছোট দেবর, দেবরের বৌ মিলাকে মাদকসেবী, চরিত্রহীন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

স্বামীটি জেলে। বাকি পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা। এই একটা ঘটনা ভালো লাগলো। আমি মনে করি পৃথিবীর কোন মানুষেরই অন্যকে আহত করা, আঘাত বা অপমান করার অধিকার নাই। তাই অন্যায়ের শাস্তি জরুরি।

কিন্তু আবারো এই সব সমস্যার সমাধান চান মিলা। জেলে গিয়ে স্বামীর সাথে দেখা করেছেন। পুলিশের এবং আদালতের ভয়ে ভীত পরিবারের মিটমাটের প্রস্তাবে ফিরে যেতে চান পুরনো জীবনে!
যে স্বামী আপনাকে পিস্তল নিয়ে খুন করতে গেছিল আজও আপনি তাকে বিশ্বাস করেন, ভালোবাসেন?

আপনারা না সেলিব্রেটি? সমাজটাকে কী বার্তা দিচ্ছেন?

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মেহতাব খানম একটা কথা প্রায়ই বলেন, স্বামীর এতো অত্যাচার সয়েও তাকে এতো ভালোবাসো? এতো ভালো বাসো কী করে?

আমারও এক প্রশ্ন, এতো ভালবাসো কী করে? অত্যাচারীদের এজন্য দমন করুন যেন ওরা আর অত্যাচার করতে না পারে এবং একই সাথে সমাজের বাকী সকলে কাউকে অত্যাচার করার সাহস না পায়!

অত্যাচারী সে স্বামী স্ত্রী যেই হোক তার অত্যাচারিত মনোভাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।অত্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করুন।সংসার পারষ্পরিক নির্ভরশীলতা আর ভালোবাসার আশ্রয়স্থল,,যুদ্ধক্ষেত্র নয়!

সকলের জীবন থেকে অত্যাচারিত চরিত্রগুলো মুছে যাক।জীবন সুখময় না হলেও যেন হয় নিরাপদ এবং স্বস্তিময়!!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.