শাশ্বতী বিপ্লব:
দেখলেই বোঝা যায়, তার ঘুমানোর ছবি তোলার চাইতে তার শরীরের ছবি তোলার আগ্রহ বেশি। তার ঘুমন্ত শরীর দেখে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা কতটা আনন্দিত হয়েছে, ছবিগুলোর এঙ্গেল সেটার কিছুটা ইঙ্গিত দেয়।
দীপ্তি বিশ্বাস ইংরেজির শিক্ষিকা। একজন সুশিক্ষিকা হিসেবে উনার দীর্ঘদিনের সুনাম আছে। একজন এই উপজেলা চেয়ারম্যানের শিক্ষার দৌড় জানি না কতদূর! কিন্তু তাতে কী? অসম্মান করার হ্যাডমের তো কমতি নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান সেই হ্যাডমের বলে বলীয়ান। দীপ্তি বিশ্বাস একেতো মেয়েমানুষ হয়ে চাকরি করতে এসেছেন, তার উপর অসুস্থ হোন কোন সাহসে? দীপ্তি বিশ্বাস ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, চেয়ারম্যান কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবেন?
কয়েকটা ছোট প্রশ্ন ছিলো –
১. একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কতটুকু?
২. সেই ক্ষমতার এক্তিয়ারই বা কতদুর?
৩. কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা কর্তব্যে অবহেলা করলে সেটা দেখার দায়িত্ব কার?
৪. কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা কর্তব্যে অবহেলা করলে সেই অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া কি?
৫. উপজেলা চেয়ারম্যান সীমা লঙ্ঘন করলে বা এক্তিয়ার বহির্ভুত কাজ করলে তার বিচার প্রক্রিয়াই বা কি? কে তার জবাবদিহি নেবে?
৬. একজনের অনুমতি ছাড়া বা তার অগোচরে ছবি তোলা এবং তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার শাস্তি কি?
৭. চেয়ারম্যান যদি ঠিক কাজ করে থাকে, তবে তার লোকজন দিপ্তী বিশ্বাসের পরিবারকে মামলা না করার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছে কেন? ন্যায় কাজ করে থাকলে মামলায় ভয় কেন এতো?
৮. দীপ্তি বিশ্বাস যদি ডিউটিরত অবস্থায় ঘুমিয়ে পরে অপরাধ করে থাকেন (অসুস্থতা সত্ত্বেও), উপজেলা চেয়ারম্যান তার আপত্তিকর ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে আরো বড় অপরাধ করেছেন। এখন এই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিচার কে করবে?
(সংযুক্তি: এছাড়া দীপ্তি বিশ্বাস এবং তার স্বামী দুজনই এই ঘটনার একটা বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে তারা দীপ্তি বিশ্বাসের অসুস্থতার কথা লিখেছেন, এবং সেইসাথে এরকম অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু এই যে ছবিটা ভাইরাল করা হলো, শুনেছি এতে দীপ্তি বিশ্বাস মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, এর দায় কে নেবে? একটি মিডিয়াকে তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, ‘শিক্ষকতা করে জীবনে যে সম্মান আর মর্যাদা অর্জন করেছিলাম, সেটা ধূলিস্যাৎ করা হয়েছে। আমার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। কী লাভ হয়েছে এই ছবি ছড়িয়ে দিয়ে? আমি তো চেয়ারম্যান সাহেবের কোনও ক্ষতি করিনি।’ এ ঘটনায় সামাজিকভাবে যতটুকু হেয় হয়েছেন, তার জন্য সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।)