নায়না শাহ্রীন চৌধুরী:
এই দেশে কত ঘটনা ঘটে। কালও একটা তুচ্ছ ঘটনার খবর দেখলাম। এক মা হাসপাতালের ঘুষের টাকা না দিতে পারায়, খোলা আকাশের নিচে তার বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনায় সমর্থ হলেও বাঁচেনি শিশুটি। আমি প্রথমেই একটা হাত তালি দিতে চাই আজিমপুর মাতৃসদন কর্তৃপক্ষকে। গর্ভবতী মাকে তাড়িয়ে দিয়ে বিরাট কাজ করেছেন। টাকা পেলে সব হবে, নইলে নয়, এই মহান সত্যটি আবার প্রমাণ করলেন তারা।
তত্ত্বাবধায়ক মহোদয়াও কী সুন্দর স্বীকার করলেন যে, ঘুষ চাওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না , তিনিও পাননি। আমার জানতে ইচ্ছা করে, উনি কি কারো মা? যদি কারো মা হয়ে থাকেন তাহলে গর্ভকালীন কষ্ট কি উনি জানেন না? আর যদি মা না হোন তাহলে কি তার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কারো সন্তান হওয়া তিনি দেখেননি।
আচ্ছা, মানলাম, ঘুষের ব্যাপারটি তিনি জানতেন না। কিন্তু তার তত্ত্বাবধানে এই অভিযোগ ওঠার দায় শুধুমাত্র একপেশে বিচারে নিজের গা বাঁচাতে তিনি এড়াতে পারেন না। এড়াতে পারলেন কেন জানেন? কারণ প্রসূতি ঐ মায়ের কোন ক্ষমতা নেই, টাকা নেই। এরকম কতজনকে ওনারা ফিরিয়ে দেন। কত মা আর শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন এর কি তদন্ত হওয়া উচিৎ নয় মাননীয় প্রশাসন?
আমরা সবাই কোন না কোন মায়ের সন্তান। হয়তো কারো মা বা ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানের সন্তান হওয়ার সময়টা আমরা থাকতে পারি বা নাও পারি। অনেকে ভাবছি, আমরা কেন ওরকম হাসপাতালে যাব। সত্যি বলতে, বাংলাদেশের ঠিক কোন হাসপাতালকে আপনি বিশ্বাস করেন? চরম দেশপ্রেমী পাবলিক আমাকে দেশ প্রেমের পাঠ পড়ায়ে সিঙ্গাপুরে যায় বাপের ট্রিটমেন্টের জন্য। তো, সেই রকম পরিস্থিতি যখন নিজের কারো সাথে ঘটবে তখন হায় হায় করেও লাভ নেই। কারণ ঘুষের অ্যামাউন্ট বেড়ে গেছে।
যাই হোক, এই চরম অমানবিক আচরণ যারা করেন, তারা চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত। তারা দায়িত্ব নেন তাদের সুবিধা মোতাবেক। এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু সেই আলোচনায় না যাই। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চরম মাত্রায় ছড়িয়ে আছে। কাল শিশুটির মৃত্যু তার ছোট্টো উদাহরণ। শিশুটি যদি প্রপার চিকিৎসার পরও মারা যেত অন্তত সান্ত্বনা থাকত যে প্রসূতি ন্যূনতম সেবা পেয়েছে।
হাসপাতালের লোকজন, যারা দেড় হাজারের জন্য বাচ্চাটিকে বাঁচার সুযোগ দিল না তারা তারপরও বাড়ি ফিরবে, নিজ সন্তানের মুখে ভাতের লোকমা তুলে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। আর যারা এর আগে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের আর কি বলব! ভাই আপনাদের স্যালুট না করে পারিনা। বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন।
এখন মাতৃসদন কাঠগড়ায়। আপনারা টেলিভিশনে মজা দেখেন।
মাননীয় প্রশাসন, আমি জানিনা আর কতোগুলো শিশু মারা গেলে বা আর কয়জন মা মৃত্যুর কাছে গেলে আপনারা বাংলাদেশের এই তথাকথিত চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির দিকে নজর দিতে পারবেন। যাদের সামর্থ্য নেই তারা বড় আশা করে এই হাসপাতালে যায়। আর হাসপাতালে একটাও মানবিকতা সম্পন্ন মানুষ থাকবেন না এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
একটা সময় এদেশে মানুষ অনাহারে মারা যেত। এখন মানুষ এতোটাই অমানবিক যে একটা মা অনাগত বাচ্চা, যে অনেক আদরে এই পৃথিবীতে আসতে পারত, শুধুমাত্র অর্থাভাবে বা অবস্থানের কারণে মরে যেতে বাধ্য হয়। দুর্নীতির অনেক ছোবল আমাদের দেশে। ন্যূনতম মানবিকতা আশা করা হয়তো অন্যায়। তাই, আসুন, এবারো সব হজম করে ঘুমাই। একটা বাচ্চাই তো মরল!