#MeToo
হ্যাঁ, আমিও physically exploit হয়েছি। পশ্চিম বাংলার এক মফস্বল শহরে আমার জন্ম। সঠিক বয়স বলতে পারবো না, এই ৫/৬ বছর হবে। সেই প্রথম কোনো একদিদন এক অযাচিত স্পর্শের ভাগীদার হই। সম্পর্কে তিনি আমার মায়ের জ্যাঠু। মামাবাড়ি গেলেই ওই ঘটনা ঘটতো আমার সাথে। exactly কী হচ্ছে তা বোঝার বয়স তখনো হয়নি। শুধু বলা হলো, আমি যেন এসব মা’কে না বলি। বললে কপালে দু:খ আছে। চুপ করে ছিলাম।
তারপর আরেকটু বড় হলাম। ক্লাস ৭/৮। আরো একজনের হাত পড়লো এই শরীরে। সম্পর্কে সে জ্যাঠতুতো দাদা। তখন বুঝতে পারি সব, তাই এইবার হুমকি আসলো যে আমি যদি বলে দেই, তাহলে বলা হবে যে, সেগুলি আমি চেয়েছি। এই প্রসংগে বলে রাখা ভালো যে, আমার নিজের বাড়িতে আমার অবস্থান একটু কমজোরি ছিল। তাই আমি জানতাম যে ঐ জ্যাঠতুতো দাদা যদি আমার নামে দোষ চাপায় তবে দোষী আমাকেই ভাবা হবে। তাই এবারও সবকিছুই মুখ বুঁজে সহ্য করে গেলাম।
আমরা দুই ভাইবোন। দাদা পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল। গান গাইতো খুব ভালো। আমি সেই তুলনায় কিছুই না। তার ওপর গায়ের রঙ কালো। তাই বাড়িতে দাদার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী। মা,বাবা,ঠাকুমা সবাই দাদার গুণগান করতেই ব্যস্ত। আর এদিকে এবার আমার ওপর নজর পড়লো আমার নিজের দাদার। প্রথম যেদিন বুঝতে পারলাম পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছিল। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমার খেলার সঙ্গী, আমার নিজের দাদা আমায় ছুঁতে চায়।
এবার কিন্তু আমি আর চুপ থাকিনি। মা’কে বললাম। বিশ্বাস করলো কিনা জানি না, শুধু বললো, বাবার সাথে কথা বলবে। আমি আশায় রইলাম যে দাদা পালটে যাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। দাদার ব্যবহারে কোনই পরিবর্তন নেই।আমার শোবার জায়গা চেঞ্জ হলো, ঘুমাবার পোশাক পরিবর্তন হলো, কিন্তু ওকে কেউ একটা কথা বললো না অন্তত আমার সামনে তো নয়ই।
মা’কে জিজ্ঞাস করাতে মা বললো, এই বয়সের ছেলেরা এমন একটু আধটু হয়। মাকে প্রশ্ন করলাম, মা, তোমরাও তো চার ভাইবোন। মামারাও কি এমন? মা কোনো উত্তর করলেন না। ঠাকুমার নির্দেশ আসলো এইসব কথা বাইরে যেন আলোচনা না করি, তাহলে বাড়ির বদনাম হবে। পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, সবাই আমায় প্রায় একঘরে করে দিল, এমনকি মাও।
আমি দাদার সাথে অনেক বছর কথা বলিনি। তাতেও সবাই বললো আমিই আসলে খারাপ বোন। তাই দাদার সাথে কথা বলি না। ক্লাস ১২ এর রেজাল্ট বেরোতেই কলকাতা পাড়ি। ঐ বাড়িতে আর কোনদিন permanently থাকার জন্য আসবো না, নিজের কাছে সেই প্রমিস করে বেরিয়ে এসেছি। আমার পাশে কেউ ছিল না কোনদিন, আজো নেই।
তাই এখন আমি ভালো মেয়ে, বা মন্দ মেয়ে যাই হই না কেন, আমিই আমাকে তৈরি করেছি। একা কেঁদেছি, একাই সামলেছি নিজেকে, কেউ ছিল না, কেউ না।
এক কন্যা সন্তানের মা আমি। ওকে বুকে জড়িয়ে রাখি। এই যন্ত্রণা ওকে যেন পেতে না হয় কোনদিন।
কোন মেয়েকেই যেন পেতে না হয় এই যন্ত্রণা। বলি বটে, কিন্তু আমি জানি সে সংখ্যা খুবই কম। তাই প্রার্থনা এটা যে সে সব মেয়েদের বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য কেউ যেন থাকে তাদের পাশে। অযাচিত স্পর্শে নয়, ভালোবাসায় ভরে উঠুক মেয়েদের জীবন।