Beauty with purpose -মূলনীতিটা কতখানি সত্যি?

ডানা বড়ুয়া:

‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ এই খেতাবটির নাম শুনেই আমি ঠিক এর বাংলাটা ধরতে পারি না। বাংলাদেশ থেকে যিনি প্রথমে নির্বাচিত হবেন তিনি মিস বাংলাদেশ হবেন, পরে ধারাবাহিকভাবে হয়তো তিনি মিস ওয়ার্ল্ড হলেও হতে পারেন। যদি মিস বাংলাদেশ হওয়ার পরে মিস ওয়ার্ল্ড হন সেক্ষেত্রে হয়তো বাংলাদেশ নামটা যুক্ত হতে পারে সেই অর্থে মিস ওয়ার্ল্ড(বাংলাদেশ) বলা যেতে পারে।
আচ্ছা ধরে নিলাম যিনি ‘মিস বাংলাদেশ’ হবেন তিনি ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করবেন আগামীতে বাংলাদেশের হয়ে, তাই এই খেতাবটির নাম মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ।

সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয় সবসময়, সামনে আরও হবে। অনেকের মতে মেয়েদেরকে পণ্য বানানো হয় এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, অনেকের মতে এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে একটা মেয়ে নিজের সৌন্দর্য আর যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিজেকে সুপরিচিত করার মাধ্যমে সমাজের কিছু ভাল কাজ করার সুযোগ পান। তাই এখন শুধু সুন্দরী প্রতিযোগিতার সাথে নতুন কিছু শব্দ যুক্ত হয়েছে ইংরেজীতে সেটি হলো ‘Beauty With Purpose’; এই ‘Beauty With Purpose’ এর নামে আসলে ঠিক কতটা মেধাবী একজন মানুষ বের হয়ে আসেন জানি না তবে সুন্দরী কেউ একজন যে বেরিয়ে আসেন সেটা নিশ্চিত।

দেখা যায় ‘Beauty With Purpose’ এর কারণে যে মেয়েটি রূপবতী সে নিজের কোন একটা গুণ যেমন ভালো কণ্ঠশিল্পী বা ভালো নৃত্যশিল্পী বা অন্য যে কোনো একটা গুণের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরতে চান। যদিও সে গুণ আদৌ কতটা তাঁর আছে কি নেই সেটা মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে না।

জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল- অডিশনের একটা রাউন্ডে টাইটানিকের থিম সং গাইছিলেন। যারা গান শুনেন বা গান বুঝেন তাঁরা শুনে দেখতে পারেন। আমি মেয়েটির দোষ দিচ্ছি না, যারা অনুষ্ঠানের আয়োজক তাঁরা এই ভন্ডামীগুলো কেন করেন সেটা জানতে চাইছি। এই ‘Beauty with purpose’ কথাটা আমার কাছে লাক্স সাবানের সাথে জেনিসল শ্যাম্পু ফ্রী বিজ্ঞাপনের মতো মনে হয়। যদিও সেই জেনিসল শ্যাম্পুতে আপনার মাথার চুল থাকবে না পড়ে যাবে সেটা বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠে না কখনো।

জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল নিঃসন্দেহে অনেক সাহসী,অনেক মেয়েদের জন্য তিনি হয়তো আইডল হিসেবেও বিবেচিত হতে পারেন। সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় তিনি যতখানি এগিয়ে গেছেন সেটা প্রশংসার দাবিদার। অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষের পরীক্ষায়ও পাশ করে তিনি বিজেতা হয়েছিলেন। যেহেতু কিছু তথ্য উনি গোপন রেখেছিলেন সেহেতু কিছু বিতর্কের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে উনাকে।

সাহসিকতার মাপকাঠি অনেকের কাছে অনেকভাবে পরিমাপ হতে পারে। ভালো বাইক চালানোর মধ্যে থাকতে পারে, বিয়ের পিড়ি থেকে পালিয়ে এসে একা একা পথ চলার মধ্যেও হতে পারে, এমনকি সত্যকে সত্য বলার মধ্যেও। যে মানুষটি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন উনার এতটুকু তো বুঝা উচিত ছিল যে বিষয়টি উনার কাছে অযৌক্তিক সেটি এমন একটা প্রতিযোগিতায় কতটা যৌক্তিক হতে পারে সামনে। একটি প্রতিযোগিতার যৌক্তিক বিষয় যদি এটিই হয়ে থাকে তবে যে মেয়েটি একার প্রচেষ্টায় এতটুকু পথ উঠে আসতে পেরেছিলেন তাঁর তো আরো সাহসী হওয়ার কথা ছিল। বাকি পথটুকু মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে চলার মতো সৎ সাহস তাঁর নির্দ্বিধায় থাকার কথা ছিল।

জান্নাতুল নাঈম মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থাকুক বা না থাকুক এই প্রতিযোগিতাগুলো আসলে কেমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছে সে বিষয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিত। আর এই প্ল্যাটফর্মে আসার পরে কতজন নিজেদের দেওয়া কমিটমেন্টগুলো অনুসরণ করেন সেটিও।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.