সময়ের প্রতিবাদ সময়েই করুন

সালমা লুনা:

ধরুন আপনি একটা মুদি দোকানে গেছেন। সেখানে মেহেদীরঞ্জিত শ্মশ্রুমণ্ডিত দোকানি দোকান থেকে সদাইপাতি কিছু একটা তার ক্রেতা এক কিশোরীকে দিচ্ছে। দেয়ার এক পর্যায়ে সে মেয়েটির বুকে হাত দিচ্ছে জোরে চেপে দিচ্ছে। একবার নয় বেশ কবার। একপর্যায়ে ব্যথা পেয়েই হয়তো মেয়েটি একটু জোরে শব্দ করে উঠলো।

এই দৃশ্যটি দেখে আপনি কি করবেন?
আপনি লুকিয়ে ভিডিও করবেন। সেই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করবেন। কিংবা ইউটিউবে ছেড়ে দেবেন?
এরপর ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে দিকে দিকে ছড়াবে এবং দাঁড়িওয়ালার চৌদ্দগুষ্ঠি ধরে গালিগালাজ, ওর দাঁড়ির মাহাত্ম্য,মেয়েটা কেন দাঁড়ায়ে রইলো, ইসলাম -ধর্ম- দাঁড়ি- টুপি …… এইসবের বাহাস চলবে !
তাতে আপনি কি খুব তৃপ্ত হলেন?
নাকি আপনি তৎক্ষণাৎ ওই ঘটনার প্রতিবাদ করবেন? দাঁড়িওয়ালার দাঁড়ি ধরে কষে কটা কিল ঘুঁষি দিবেন?
আচ্ছা, ধরলাম ভিডিওটা করে ভালোই হয়েছে। কারণ ওটাই প্রমাণ।

কিন্তু আসল কাজটা করেছেন তো?
ওই দাঁড়িওয়ালার দাঁড়ি টেনে ধরে উপড়ে ফেলার কাজটি?
কারণ ওই তো একজন ভবিষ্যত ধর্ষক। যে ধর্ষণ করে ফেলার পর আপনি তার অঙ্গটি কেটে- ছেঁচে- বেঁধে উপড়ে ফেলতে চান। বাঁশের আগায় বেঁধে শতবার ফাঁসি দিতে চান।

তাই এহেন সহিংস প্রতিবাদটুকু যে করতেই হবে!
তা না হলে লাইক শেয়ারের বন্যা কমে গেলে কোন এক নির্জন বেলায় আপনার ওই কিশোরীটিকে মনে পড়বে। ভেবে আকুল হবেন ওই কিশোরীটিকে আবার দোকানে পেয়ে ওই শ্মশ্রুমণ্ডিত ভদ্রলোক (!) কি করলো? আরো কোন কিশোরী কি ওই পশুর থাবার আঁচড়ে রক্তাক্ত হলো? নাকি শেষে কেউ ওই অ-মানুষের চূড়ান্ত লালসার শিকার হলো!!
তখন আপনি আয়নায় নিজের সাথে চোখ মেলাতে পারবেন তো?

তাই বলি সবকিছু তামাশা দেখার জন্য ফেলে রাখতে হয় না।
নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু কাজও করতে হয়!
তাতে অন্তত চলন্ত রাতের বাসে একলা একটা রূপা বেঁচে যেতে পারে।
রাজন-সাগররা বেঁচে যেতে পারে।
হয়তো বেঁচে যাবেন আপনিও – পলে পলে দগ্ধে মরা থেকে।
হয়তো এইভাবেই প্রতিবাদ দেখতে দেখতে, আমাদের মার খেতে খেতে একদিন ওই শকুনগুলো আমাদের জনপদ ছেড়ে পালাবে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.