নারী স্বাধীনতা মানে পুরুষেরও স্বাধীনতা!

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি:

ছেলেদের জন্য আমার মাঝেমাঝে খুব কষ্ট হয়। এইদেশে অসংখ্য ছেলেকে দেখেছি যাকে চাকরির পাশাপাশি নিজের বিয়ের টাকা নিজেকেই গোছাতে হবে, বোনের বিয়ের টাকাও নিজেকেই জোগাড় করতে হবে। অথচ কোনো মেয়েকে দেখিনি নিজের টাকায় বিয়ে করেছে! কারণ কি? কারণ- ছেলেরা ‘বিয়ে করে’ আর মেয়েদের ‘বিয়ে হয়’! কোনো ছেলেকে দেখিনি সে চাকরিহীন একটা মেয়েকে বিয়ে করে বলেছে- একটি বেকার মেয়ে বিয়ে করলাম। কিন্তু গুণে দেখুন- ১০০ জনের ১০ জন মেয়েও নিজে চাকরি করা সত্ত্বেও কোনো বেকার ছেলে বিয়ে করতে রাজি হবেনা!

আমার মায়ের কঠোর নিষেধ – মেয়ে মানুষ আর পুরুষমানুষ বলা যাবেনা! মানুষ তো মানুষই! আমি আমার জীবনে এই থিওরি টিকিয়ে রাখতে পারলেও আমার স্কুলের ক্লাসমেটদের অনেকের জীবনে এই থিওরির ছিটেফোঁটাও দেখিনা। কেবল দেখি- তারা যারা বিবাহিত, তারা নিজেদের স্বামীদের নামের অংশ জুড়ে দিয়ে নিজের নামটি বদলে ফেলেছে! এটা মানসিক পরাধীনতা। কোনোদিন কোনো পুরুষকে দেখেছেন- বৌয়ের নাম নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে?

স্বামীর টাকায় শপিং করে হাসিমুখে ছবি দিচ্ছে- লিখছে উইথ মাই হাবি! ছেলেটির টাকায় সংসারের এ টু জেড সমস্ত কিছু কিনে এনে একে ‘আমার সংসার’ নাম দেয়াটাও ছেলেমানুষি! কারণ ছেলে হোক বা মেয়ে, টাকাটা কেবল টাকা না- অর্থনৈতিক স্বাধীনতা!
আমার দিকে তেড়ে আসার কিছু নেই। আমি নারীর দুর্নাম করছিনা। কেবল বলছি- নারী স্বাধীনতা কেবল নারীর একারই বিষয় নয়। নারী স্বাধীনতা মানে পুরুষেরও স্বাধীনতা।

একজনের ঘাড়ে খেয়ে-পরে স্বাধীনতার সঙ্গীত রচনা করা হাস্যকর। যেদিন নিজের বিয়ে নিজের টাকায়, সংসারের অর্ধেক জিনিস নিজের টাকায়, নিজের শখের জিনিসটি নিজের টাকায় কিনতে পারবেন, সেদিন থেকেই আপনি স্বাধীন! এর আগে নিজের গায়ে স্বাধীনতার সাইনবোর্ড লাগালেও আপনি স্বাধীন নন, পরাধীন!
পরের টাকায় পোষ মেনে দারুণ রোষে নিজেকে স্বাধীন দাবি করাটা হাস্যকর। কারণ স্বাধীন হতে যোগ্যতা লাগে, সাইনবোর্ড লাগে না!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.