ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী:
২০১২ সাল থেকে আজ অবধি মিয়ানমারের সেনাদের অত্যাচারে ৪০,০০০ রোহিঙ্গা ভারতে অবস্থান করছে। ভারত আর তাদের রাখছে না। ভারত ঐ চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গাদের তাদের ভূখণ্ড থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। পঁচিশ হাজার থেকে অত্যন্ত প্রোডাকটিভ ওয়েতে বেড়ে স্থায়ী রোহিঙ্গা বাসিন্দা হয়েছে লক্ষাধিক। সাম্প্রতিক সময়ে সেনাদের অত্যাচারে গত এক মাসেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চার লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ রোহিঙ্গা (নানা জনের নানা মত)
মিয়ানমারের সেনা কর্তৃক তিন হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে তাদের উপর। কর্মক্ষম পুরুষরা মিয়ানমারে বন্দী আছে বলে শুনেছি আরাকানে বিভিন্ন প্রজেক্টে শ্রমিক হিসেবে লাগবে বলে।
বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর মাঝে বেশির ভাগই অক্ষম বৃদ্ধ, নারী ও শিশু। সব থেকে দুঃখজনক এদের মাঝে ৭০ হাজার নারী সন্তানসম্ভবা। তার মানে আরও সত্তর হাজার রোহিঙ্গা শিশু। তাদের জন্ম বাংলাদেশে হলে তাদের নাগরিকত্ব কী হবে আমি জানি না।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন চলছে। চলছে ধীর গতিতে। বাঙালী অভিহিত করে অং সান সুচি আমাদের কাঁধে চাপাতে চাইছে যে জনগোষ্ঠীকে, তাদের ভাষা আমাদের কর্মকর্তাগণ বোঝে না।
অশিক্ষিত, অনগ্রসর, পুষ্টিহীন, রোগাক্রান্ত, মানসিকভাবে অস্থির এবং ভঙ্গুর, অপরাধ প্রবণ একটা প্রজাতি মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে তৈরি হয়েছে। আর আজ তাদের বাংলাদেশের কাঁধে বোঝা হিসেবে তুলে দেয়া হলো। বাংলাদেশও বাধ্য হলো।
কক্সবাজারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী-
সমস্যা মিয়ানমারের, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সমগ্র বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত
পোলিও > ১৭ জন
এইচআইভি +ve screening suspected patient প্রতি ২০ জনে ৮ জন
হেপাটাইটিস বি অগণিত
হেপাটাইটিস সি
যক্ষা
ম্যালেরিয়া
হাম
গর্ভবতী মহিলা> ৭০ হাজার
____________________________________
মাত্র কদিন আগেই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল বাংলাদেশ। কী ভয়ংকর ক্ষতির সম্মুখীন আমাদের দেশের বন্যার্তরা হয়েছে। ধানের, মাছের এবং রবি শস্যের উৎপাদন ব্যাহত। আর তার সাথে লোভী ব্যবসায়ীরা তো আছেই। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কক্সবাজারের উখিয়াতে নিত্য ব্যবহার্য সব পণ্যের দাম বর্ধিত।
# মিয়ানমার সরকার সুদীর্ঘ পরিকল্পনা করে কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়েই এই রোহিঙ্গামুক্ত মিয়ানমার গঠন, পক্ষান্তরে রোহিঙ্গাযুক্ত বাংলাদেশ গঠনের নীল নকশা সম্পন্ন করেছে। পক্ষান্তরে “গোলেমেলে যাক কিছুদিন” এই ভেবে আমাদের কোনো সরকার এই বিষয়ে বিশ্ব বিবেককে পর্যাপ্ত নাড়া দিতে সক্ষম হয়নি। মিয়ানমার অত্যাচার অবহেলা করে ওদেরকে অন্যায় পথে ধাবিত হতে বাধ্য করে বিশ্বকে ওদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।
সৌদি সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্যসহ বড় ধরনের ভূমিকা নেয়ার কথা। সারা বিশ্বের মুসলিম হজ্জে যান। বিপুল অর্থ অর্জিত হয়।
আজ মুসলিম শিশু নাফ নদীতে লাশ হচ্ছে। পুড়ে মরছে। এ দায় বাংলাদেশের নয়।
# আমরা কতদিন ত্রাণ দেবো? আমাদের ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট কতদিন সেবা দিবে?
# একজন বাংলাদেশীও যদি ওদের কারণে জীবন দেয়, সে দায় কার?
# দেশের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সব ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এবং এর ফল সুদূর প্রসারী। ওরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ওদের নন ইমিউনাইজড শিশুদের সহ। অভাব, অপরাধ প্রবণতা সহ।
# যদি ভারতের ৪০ হাজারও বাংলাদেশে এসে ওঠে, তবে ষোলকলা পূর্ণ হবে।
পথ একটাই …
মিয়ানমারকে অবিলম্বে প্রতিটি রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদের মিটিং এ যোগদান করতে গেছেন। তারও একই বক্তব্য।
কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মিনিমাম সুযোগ যাদের আছে, সকল বাংলাদেশী প্রবাসীগণ, বাংলাদেশের এই বিপদে এগিয়ে আসুন। বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করুন। লিখুন। ছবি প্রকাশ করুন।
প্লিজ মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করুন।।