শামীম রুনা:
সোস্যাল মিডিয়ায় কয় দিন ধইরা “বড় ছেলে” নামক একটা নাটক বা টেলিফিল্ম লইয়া বেশ হাইপ চলতেসে। নাটক বা টেলিফিল্মের ভিত্রের কাহিনী লইয়া সবাই বেশ গোস্মা করসে মনে হয়। একজন বললো, স্ক্রিপ্ট নাকি বুলবুল আহম্মেদের জন্য লেখা হইসিল, কিন্তু “বধু বিদায়” সিনেমার পর তিনি আর এমন করুণ নাটক করতে চান নাই বইলা এই নাটকটা এতো দিন ফাইল বন্দী ছিল। অবশেষে দুই হাজার সতেরো’তে এই নাটক বাজার পাইলো!
ফেবু’তে দুই একটা পোস্টে নাটকটার দুই একটা ছবি পোস্ট করসে, যেখানে বড় পোলার নাম ভূমিকায় যে বদ লোকটা অভিনয় করসে তার চেহারা শোভা পাইতেসে। এই লোকের নাটক দেখা বাদ দিসি কয়েক বছর আগে। লোকটারে ব্যক্তিগতভাবে অভিনেতা হিসাবে আমি পসন্দ করি কী করি না, বিষয়টা তা না। বিষয়টা হইলো, কেউ যখন মঞ্চ-টিভি নাটক-সিনেমা এসব ক্ষেত্রে অভিনয় করে, তখন তার উপ্রে অটোমেটিক একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা বর্তায়। সে অভিনয়ের মাধ্যমে অনেক ম্যাসেজ সমাজরে দিয়া থাকে। আর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা নায়ক-নায়িকা হইলে তো তাদের চলতে হয় আরো সাবধানে।
যাই হোক, বড় বাপের পোলায় খায়, থুক্কু, বাপের বড় পোলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা লোকটা তাই যখন বাস্তবে কোনো এক তরুণীর হাত ধইরা তারে আর একজনের কাছ থেইকা প্রেমের কথা কইয়া আইনা মাঝ পথে সে হাত ছাইড়া দিয়া গুডবয় সাইজা মা বাপের লক্ষী পোলা হইয়া তাগো পছন্দ করা পাত্রীরে বিয়া কইরা বউবাচ্চা লইয়া নতুন সংসার শুরু করে আর তার ক্যারিয়ারও ঠিক থাকে তখন যেন আমরারে চোখে আঙুল দিয়া সমাজ দেখায়া দেয় পুরুষ হওনের সৌভগ্য আর নারী হওনের দুর্ভাগ্য।
অনেকে কইতে পারেন, ওই মাইয়াটাই বা আর একজনের লগে এনগেজম্যান্ট ভাইঙা এর হাত ধরসিলো কেন? সমাজে যদি ডিভোর্স একসেপ্ট করতে পারে, তাইলে এনগেজম্যান্ট ভাঙা একসেপ্ট করতে পারবো না কেন? আর আমাদের নায়কের তো বুঝা উচিত ছিল, এই মাইয়া কয়েক বছর ধইরা একজনের সঙ্গে সম্পর্কে যখন জড়াইসিলো, তখন তাগোর মাঝে কিছু শারীরিক-মানসিক সম্পর্কও বিল্ড আপ করসিলো। আর শারীরিক সম্পর্ক লইয়া নায়ক সাবের সুচি বাই থাকলে সে অন্যের বাগদত্তারে লইয়া টান দেওনের আগে এই বিষয়ে নারীটারে জিগায়া নিতে পারতো, সে তখনও কুমারী কিনা।
ত্রিমুখী এই নাটকে নারীটার ভুল ছিলো, ও পুরুষদের প্রেমিক হিসাবে বিশ্বাস করসিলো। ওর দুই প্রেমিকের কেউ ওর প্রেমের সম্পর্কের মর্যাদা রাখে নাই। এই ট্রায়াঙ্গেল লাভ স্টোরির জন্য খেসারত যা দিতে হইসে তা কেবল একলা নারীটারে। যদিও নারী প্রেম করসিলো পুরুষের লগে, অন্য কোনো নারীর লগে না। কারণ, আমরা দেখি, পুরুষ দুইজনের সামাজিক বা ক্যারিয়ারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় নাই।
দায়িত্ব জ্ঞানহীন নায়ক সাব এখনও আমাদের নায়ক হয়া চোখের সামনে মনোরঞ্জন করতেসেন। তার ক্যারিয়ারের উপ্রে দারুণ আলোর দ্যুতি। আর সে নারীর দারুণ সুন্দর ক্যারিয়ার লাভ স্টোরির খতমের লগে খতম হয়া গেসে। মাঝে মাঝে “সাহসী” তকমা লাগায়া তারে দুই-একটা নাটক বা টক শো’তে দেখা যায়, তয় ওর আগের সে গ্রহণযোগ্যতা আর সম্ভবত ফিরা পাবে না।
এতো যে সাতকাহন গাইলাম, আসলে, এক যাত্রায় পৃথক গন্তব্য দেখলে দুঃখ লাগে। আমাদের সমাজ এখনও নারী বলতে পুরুষের মানসে গড়া নারীরে বুঝে। নারীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত, পসন্দ, প্রেম সবই যেন পুরুষের ফরমেটে গড়া হইতে হইবে। এর বাইরে গেলে নারীকে বিভিন্নভাবে ব্যবচ্ছেদ হইতে হয়।
নারী হওনের কারণে আর কত পৃথক হবে নারীর গন্তব্যে? যে গন্তব্যের অপর পাশে আলোর কোনো উৎস নাই।