ধর্ষণ বন্ধে প্রতিবাদের বিকল্প নেই, প্রতিবাদকারীরা কোথায়?

ফাহরিয়া ফেরদৌস:

১৯৯৫ সালে ইয়াসমিন হত্যা হয়; মামলার সাথে জড়িত পুলিশ গ্রেফতার হয়েছিলো ঘটনার প্রায় ২ বছর পর, ১৯৯৭ সালে। ২০০৪ সালে মামলার রায় হয়, রায়ের পরও বাসের চালক পলাতক ছিলো অনেক বছর! ইয়াসমিন হত্যায় পুরো দেশ লাগেনি শুধুমাত্র সারা দিনাজপুরের মানুষ এক হয়েছিলো, পুলিশ স্টেশন ব্লক করে রেখেছিলো। এখন দেশের যেখানে যাই হোক, প্রতিবাদ হয় কেবল ঢাকায়!

ইয়াসমিন হত্যা যখন হয় তখন এই যুগের মত এতো মিডিয়া ছিলো না; অথচ এখন বেসরকারি শুধু টিভি চ্যানেল আছে প্রায় ২৮ টার মত সহ অসংখ্য রেডিও স্টেশন আছে ১০ এর উপর, আছে প্রিন্ট মিডিয়াসহ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফেসবুক! তার মানে মিডিয়াগুলো মানুষের মনে সচেতনতা তৈরি করতে পারছে না? আবার দেশে এখন অনেক অনেক শুধুমাত্র নারী মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও ছাড়াও রয়েছে অনেক মানবাধিকার এনজিও, কিন্তু কেবলমাত্র তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রতিবাদ প্রকাশ ব্যতিত পথে এসে কোনো আন্দোলনের সাথে জড়িত হচ্ছে না।

জাতিসংঘ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চায়না, শ্রীলংকা, পাপুয়া নিউগিনির ১৮-৪৯ বছর বয়স্ক প্রায় দশ হাজারের মতো পুরুষের উপর একটা সার্ভে করে, সেখানে তারা বলে যে, জীবনে তারা অন্তত একবার কোনো
না কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।

আসলে দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলো আমাদের বিচলিত করে না। আমরা মনে হয় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি এই অপরাধে। যদি ধর্ষণের ঘটনাসহ রিশা হত্যা বা এই ধরনের ভয়ংকর ঘটনাগুলো আমাদের বিচলিত করতো, তবে মনে হয় আজ প্রতিবাদে অন্তত কয়েক হাজার নারী রাস্তায় থাকতো!

দেশে মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ছে, বড় বড় পদে আসীন হচ্ছে নারীরা, যে পদগুলোতে আগে নারীরা ছিলো না, এখন সেই পদগুলোতে নারীরা আসছে। দেশের স্পিকার নারী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নারী, মাইক্রোসফটের বর্তমান বাংলাদেশ প্রধান নারী। আমার মনে হয় নিজস্ব পদের কাজ ছাড়াও প্রতিটি মানুষের কিছু সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করুক, কিন্তু নিজ নিজ পদে আসীন হয়ে একটা প্রতিবাদ অথবা যার যার স্থান থেকে একটি বার্তা প্রতিটি উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তা কিন্তু দিতেই পারেন, যেখানে শুধুমাত্র দেশে নারীর প্রতি যে ধরনের সহিংসতাগুলো হয়, তার মাঝে সবচেয়ে ঘৃণ্য অপরাধ ধর্ষণ যে বেড়ে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ যে নেয়া হচ্ছে না সে বিষয়ে ওনারা কনসার্ন আছেন। দেশে অসংখ্য বালিকা বিদ্যালয়, কলেজ আছে যার প্রধান শিক্ষক নারী, আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েরা, কিন্তু কোথাও ১০০ খানেক নারীও কঠিনভাবে একসাথে হয়নি!

শাজনীন হত্যা, ইয়াসমিন হত্যাসহ শত শত মামলার রায় পেতে যুগ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়ার একটা বড় অংশ ন্যস্ত থাকে পুলিশের ঘাড়ে। প্রায় ২০১৩-১৪ এর ডাটা অনুযায়ী ১২০০ মানুষের জন্য একজন পুলিশ বরাদ্দ! প্রতি ১২০০-র জন্য বরাদ্দকৃত একজন পুলিশ যদি যেকোনো ধরনের ছুটিতে থাকে, তবে ২৪০০ মানুষের জন্য একজন প্রযোজ্য, কেমনে কী? পুলিশ তো আর সুপ্যারম্যান না, সেও তো মানুষ। মানুষের নিজের মনসহ, পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা যদি পরিবর্তন না হয়, তবে কোনোদিন ধর্ষণ বন্ধ তো দূরে থাক, ধর্ষণের হার কমানোসহ দ্রুত বিচার করা সম্ভব নয়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.