ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী:
রূপা।
অলংকারের নামে নাম মেয়েটির।
তোরা পশুরা কী করে বুঝবি, একটা মেয়ে তার পিতামাতার অলংকার। তার পরিবারের অহংকার।
দিন চারেক আগে হঠাৎ করেই ছোট বোনের সাধের এন্ড্রয়েড ফোনখানা নষ্ট হয়ে গেল। তার ব্যাপক মন খারাপ। সামনে ঈদ। রুমমেট বাসায় চলে এসেছে। সে আসবে দুদিন পর। কনট্যাক্ট করা যাচ্ছিল না। ঢাকা থেকে নতুন ফোন কিনবে না। সে ভীষণ রকমের হোম সিক টাইপ মেয়ে।
বরিশাল থেকে লঞ্চের টিকিট কেটে পাঠালাম। দোকানের ফোন থেকে কথা হলো। লঞ্চে উঠে আর জানাতে পারলো না লঞ্চে উঠেছে কিনা। সেফ আছে কিনা।
আমার বার বার মনে হচ্ছিল, এতো দীর্ঘ রাত বোধ হয় সাম্প্রতিক সময়ে আমার জীবনে আসেনি।
পুরোটা রাত আমি জেগে। ফজরের আযানের কিছু সময় পর থেকে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। দেখি আব্বু,আম্মু দুজন উঠে গেছে। ওর রিকশা বাসার সামনে এসে না থামা পর্যন্ত আমার ফুসফুস যেন পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছিল না।
কী এক ভয়ংকর নিরাপত্তাহীনতার মাঝে কাটছে আমাদের দিন। আমরা আর কাউকে বিশ্বাস করি না।
উচ্চশিক্ষিত রূপা নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। তার সহকর্মীর সাথেই ফিরছিল টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহ। সহকর্মী পথে নেমে গেলে ছোঁয়া পরিবহন নামক বাসের চালক, সুপার ভাইজার,সহকর্মীসহ পাঁচটা হিংস্র জন্তু তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর চলন্ত বাসেই ধর্ষণ করে।
এতোটা শাস্তি, এতোটা কষ্ট, এতোটা অপমানের পরেও সে বাঁচতে চেয়েছিল। মোবাইল টাকা সবকিছুর বিনিময়ে বাঁচতে চেয়েছিল।
নরপশুগুলো তাকে বেঁচে থাকতে দেয়নি। তার সবকিছু কেড়ে নিয়ে তার ঘাড় মটকে, শরীর থেঁতলে হত্যা করে অতঃপর তাকে বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এখন তোমরা যারা জাজমেন্টাল আছো, আমায় একটু বলবে,রূপার জীবনে এতো বড় দুর্ঘটনা এবং অপমৃত্যুর জন্য ওর দায়টা কোথায়?
ওর পরীক্ষা দিতে যাওয়া ভুল?পাবলিক বাসে চড়া ভুল?
এখন যদি আমি ছোঁয়া পরিবহনের সব বাস চলাচল এই মুহূর্তে বন্ধ ঘোষণা করতে বলি, তোমরা আমাকে নারীবাদী বলবে?
আমি যদি বার বার চলন্ত বাসে গনধর্ষণ হবার পরও, এমনকি খুন হবার পরও ধর্ষকের বিচারহীনতাই পশুগুলোকে আবারও এই কুকর্ম করার দুঃসাহস দিয়েছে বলি, তোমরা আমাকে দোষী বলবে?
আজ আমি দোষী হতে চাই।
আমি সরকারের কাছে দু হাত জোর করে আবেদন করতে চাই,
চলন্ত বাসে নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা রোধে নতুন করে আইন করুন। কিছু দায় দায়িত্ব বাস মালিককে দিন।
পাঁচজন ধর্ষক এবং খুনী এই পাশবিক নির্যাতনের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে ঐ জানোয়ার গুলিকে জনসম্মুখে ফাঁসি দিন।
ছোঁয়া পরিবহনের মালিককে দিয়ে এই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করুন।
আইন করুন, কোনো পরিবহনে নারীকে ধর্ষণ করা হলে বা নির্যাতন করা হলে ঐ পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল হবে।
এতো বড় অন্যায়ের পরে ঐ বাস রাস্তায় চলবে। মালিক টাকা আয় করবে।
আবারও কোনো এক চাকরির পরীক্ষা হবে। কোন এক মেয়ের ফিরতে রাত হবে। কামার্ত মানুষরুপী পশুগণ বাসের কর্ণধার হয়ে ঐ বাস চালাবে, আর সেই কোমলমতি মেয়েকে………..!!!!!
সেই মেয়েটি হতে পারে আপনার অলংকার। আপনার পরিবারের অহংকার। ঐ পশুদের ঘৃণ্য কাম লালসার দুর্ভাগ্যজনক শিকার হয়ে নির্মম হতে পারে তার জীবনের ইতি।
দুঃস্বপ্নময় হতে পারে আপনার বাকি জীবনের সব রাত, আপনার প্রিয় কন্যা সন্তানের এই ভয়ংকর পরিণতির পর।
তাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে এখুনি রুখে দাঁড়ান।
#দাবি_মোদের_একটাই
#সকল_ধর্ষকের_ফাঁসী_চাই।।