কাজল দাস:
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের এক নোটিশে এসেছে ছাত্রীরা সালোয়ারের উপরে গেঞ্জি পরে চলাফেরা করতে পারবে না। আর আগামীকাল ২৫ আগস্ট দেশের অন্যতম নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন। লেখালিখির কারণে হত্যার হুমকি পেয়ে ১৯৯৩ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হোন তিনি। বর্তমানে ভারত সরকারের আশ্রয়ে সেখানে বসবাস করছেন এই নারীবাদী লেখিকা। দেশের নারী স্বাধীনতা আর নারীকে কিভাবে দেখা হচ্ছে সেটি বোঝার জন্য এই দুইটি এই সময়ের সবচেয়ে যুগোপযোগী উদাহরণ।
এক সময় এই দেশে নারীবাদ শব্দটা উচ্চারণ করা যেতো না। নারীর শরীরের মতো নারীবাদ শব্দটাতেও একটা ট্যাবু ছিল। কিন্তু সেই জায়গাটিকে একটি জোরালো ধাক্কা দেন এক সাহসী তরুণী। এই তরুণীর নাম তসলিমা নাসরিন। শিল্পী নভেরার পর যদি এই দেশে আর কোন নারীকে নিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী বায়ো ফিল্ম তৈরি করা হয় সেটি করতে হবে এই নারীকে নিয়ে। বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক আর পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাকে তসলিমা ছাড়া আর কেউ এতো বড় ধাক্কা দিতে পারেনি। আগামীকাল তার ৫৬ তম জন্মদিবস।
তসলিমা নাসরিন কিংবা হুমা্যুন আজাদ হলো আমাদের পশ্চাৎপদ সমাজের জন্য এক ধরনের ব্রেকথ্রু, এই থ্রুগুলো আমাদের জন্য অপরিহার্য, তারা যতোই বলার ফর্মের দিক থেকে যাই থাকুক না কেন, কন্টেন্ট বিচারে তাদের আমাদের খুব দরকার। ফর্ম ও কন্টেন্ট বিচারে তারা হয়তো আরজ আলী কিংবা আহমদ ছফা নন, কিন্তু তাই বলে তারা অগ্রহণযোগ্যও নন।
আরজ আলী বা আহমদ ছফা আমাদের এগিয়ে দেন ধীরে ধীরে, আর তসলিমা বা হুমায়ূন আজাদ আমাদেরকে একটা বিশাল ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেন, পার্থক্য কেবল এখানেই। এমনকি তারা বহুলাংশে অনেক কার্যকরিও বটে। কথাগুলো এই কারণে বললাম যে, আরজ আলী কিংবা মহাত্মা ছফার চিন্তা দিয়ে আমরা আজও কোন নতুন যুগ ভাবনার যাত্রা শুরু করতে পারলাম না, হুমায়ূন আজাদ স্যার মারা গেলেন তাদের হত্যাকারীদের বিচার ও সুরাহা করতে পারলাম না, দীর্ঘ দিন ধরে পরবাসী হয়ে আছেন তসলিমা নাসরিন। আমরা আজ পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু করতে পারলাম না, এ যেন জীবিত তসলিমাকে আমরা মৃতই ধরে নিয়েছি।
আমাদের দেশের পশ্চাৎপদ সমাজ হুমায়ুন আজাদ বা তসলিমা নাসরিনকে যেমন মেনে নিতে পারেনি। তেমনি মানতে পারেনি আরজ আলী মাতব্বরকেও। এই সময়ে এসে তারা মানতে পারেনি ধর্ম ও মৌলবাদীদের সমালোচনাকারী ব্লগারদেকেও। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ড.অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় ,রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর বাবু, নীলয় নীল ও প্রকাশক দীপনকে। তারা হত্যা করেছে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে।
এই দেশে এখন নারীবাদ বিষয়ক লেখা ও নারীবাদীদের সংখ্যা কম না। লেখা হচ্ছে নানান বিষয় নিয়েই। তবে এখনো লেখকের স্বাধীনতার জায়গাটি তৈরি হয়নি। তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা দিয়ে এর যাত্রা শুরু হতে পারে। এদেশে আমরা নানান ইস্যু নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলছি, আন্দোলনের ইস্যু এবার তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফেরানোর জন্য শুরু করা দরকার। শাহবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের সময় তসলিমা এদেশের তরুণ সমাজের কাছে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছিলেন, তিনি ভেবেছিলেন যেহেতু এই দেশের তরুণরা যুদ্ধাপরাধী আর মৌলবাদীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে, তারা একদিন তার পক্ষেও দাঁড়াবে। মঞ্চ দাঁড়াক বা না দাঁড়াক আমার বিশ্বাস, এই দেশের হাজারও তরুণ আর তরুণীরা তাকে দেশে ফেরানোর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে চায়। তসলিমাকে দেশের বুকে ফিরিয়ে আনার সেই সাহস তাদের আছে।
তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা এই সময়ের প্রগতিশীল তরুণদের দায়। আমরা বুক চিতিয়ে তাকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনে এই দায় মেটাতে চাই।